রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোতে মানুষের ভিড় দেখে বোঝার উপায় নেই দেশে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রকমে বেড়ে চলেছে।
সর্বাত্মক ও কঠোর লকডাউনের আগের দিন মঙ্গলবার বাজার ও বিপণিবিতানগুলোতে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সাধারণত ঈদের আগের দিন এমন ভিড় দেখা যায়।
করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনভাবে বেড়ে যাওয়ায় বুধবার থেকে (১৪-২১ এপ্রিল) আট দিনের জন্য চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
এর আগেও ৫ এপ্রিল থেকে ১৮ দফা বিধিনিষেধ জারি করা হয়। তখন বিপণিবিতান ও গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু পরে গণপরিবহন চালু হলে শপিংমল ও দোকানপাট খুলে দেয়ার দাবিতে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ শুরু করেন ব্যবসায়ীরা।
একপাশ খালি থাকলেও নিউমার্কেটমুখি রাস্তায় যানজট লেগে যায়। ছবি: নিউজবাংলা
এই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ থেকে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে দোকানপাট খুলে দেয়ার কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, ৯ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে শপিংমল ও দোকানপাট। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজধানীর মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর, নিউমার্কেট, চাঁদনীচক ঘুরে দেখা গেছে, দুপুরের পর থেকে ক্রেতার আনাগোনা বাড়তে থাকে মার্কেটগুলোতে। ফুটপাতেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় ছিল। এ কারণে অনেক মার্কেটসংলগ্ন রাস্তায় যানজট দেখা দেয়।
তবে ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। সামনে কঠোর লকডাউন। যদিও আট দিনের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ঈদের আগে এই লকডাউন খুলবে কি না সেটা কারো জানা নেই। তাই অল্প করে ঈদের বাজার করে রাখছেন তারা।
রাজধানীর নিউমার্কেটে সকাল থেকে ভিড় না থাকলেও দুপুরের পর ক্রেতা সমাগম বাড়তে থাকে। সেখানে মেয়ের জন্য জামা কিনতে আসা এক নারী জানান, গতবার ঈদের আগে কিছুই কিনতে পারেননি। এবার লকডাউন কবে শেষ হবে তার ঠিক নেই। তাই বাসায় বন্দি হওয়ার আগে একটু শপিং করে নিচ্ছেন। তবে তার বাড়ির সবাই করোনামুক্ত।
এ সময় বিক্রেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘ব্যবসা করবার দেন আমাগো। আমরা তো আর অন্যকিছু করবার পারুম না। করোনা আমাগো হয় নাই কোনোদিন।’
ফুটপাতের দোকানগুলোতেও ভিড় করেন ক্রেতারা। ছবি: নিউজবাংলা
রাজধানীর মৌচাকে পাঞ্জাবির দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ঠেলাঠেলি করতে দেখা গেছে। সেঞ্চুরি পাঞ্জাবি দোকানের মালিক সনি বালা বলেন, ‘বৈশাখকে কেন্দ্র করে মার্কেট খুলে দেয়া হয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলাম, বেচাকেনা হবে না। তবে গত দুই দিন ভালোই বিক্রি হয়েছে।’ স্বাস্থ্যবিধি কেমন মানা হচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে মার্কেটে তো ভিড় থাকেই। অনেকেই সেইভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারেন না। আমরা চেষ্টা করেছি।’
আব্দুল আওয়াল নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘আমাদের দেশে কোনো কিছুর ঠিক নাই। সাত দিনের লকডাউনের কথা বলে যদি এক মাস দেয়, তাহলে আর ঈদের বাজার করতে পারব না।’ করোনা নিয়ে প্রশ্ন করতেই নিশ্চিন্ত হাসি দিয়ে বললেন, ‘এক বছর তো হয়ে গেল, আমার করোনা হয় নাই। এইবারও হবে না।’
নিউমার্কেট ও গাউসিয়া মার্কেট এলাকায় ফুটপাতের দোকানগুলোতে সবসময়ই জটলা থাকে। একই রকম জটলা দেখা গেছে মঙ্গলবারও। আর জটলার কারণে রাস্তায় যানজট লেগে যায়। ওভার ব্রিজগুলোতেও গায়ে গায়ে লাগা ভিড় ছিল।
গুলিস্তানের পাইকারি বাজারগুলোতে পা রাখার জায়গা ছিল না। মার্কেটগুলোকে আসা বেশির ভাগ মানুষের মুখেই মাস্ক ছিল না। সামাজিক দূরত্ব তো বহু দূরের কথা। ক্রেতা-বিক্রেতার চিৎকার আর হইচই থেকে বোঝা যাচ্ছিল না করোনা মহামারি চলছে।
গাউসিয়ায় ওভার ব্রিজের নিচে ঈদের শপিং করছেন ক্রেতারা। ছবি: নিউজবাংলা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এক জরিপে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান এখন বাজার, বিপণিবিতান ও গণপরিবহন। দেশে এখন পর্যন্ত যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের বড় অংশই হয় বাজারে গেছেন, নয়তো গণপরিবহন ব্যবহার করেছেন।
বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে কঠোর লকডাউন। সরকার এবার স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থানে যাবে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করতে পারবে না। যাদের একান্ত প্রয়োজন তাদের পুলিশের বিশেষ ‘মুভমেন্ট পাস’ ইস্যু করিয়ে নিতে হবে।