বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঢাকা ছাড়তে তাদের ভরসা ট্রাক

  •    
  • ১৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:৪৫

মাইক্রোবাসে গেলে ভাড়া ১২ শ থেকে ১৫ শ টাকা। এতো টাকা যাদের নেই, তাদের ভরসা কারওয়ানবাজারে রাতের বেলা আসা সবজির ট্রাক। জনপ্রতি ভাড়া ২০০- ২৫০ টাকা।

একটি ট্রাকে গাদাগাদি বসতে হবে ৪০-৫০ জন। সঙ্গে রয়েছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি। তবু বাড়ি ফেরা চাই। ঢাকায় না থেকে গ্রামের বাড়িতে থাকলে দুবেলা খাবার তো জুটবে।

‘কঠোর লকডাউনের’ মুখে পড়া কর্মহীন মানুষদের ঢাকা শহর ছেড়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। অথচ ওদিকে দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ। উপায় একটাই– পণ্যবাহী ট্রাক।

রাজধানীর কারওরান বাজার মোড়ের আশপাশে দলে দলে মানুষজনকে অপেক্ষা করতে দেখা যায় কখন রাতের সবজির ট্রাক আসবে।

সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কারওরান বাজার জাহাঙ্গীর টাওয়ারের নিচে ফুটপাতে ব্যাগ ও বস্তা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন এমনই কয়েকজন। কোথায় যাবেন, জানতে চাইলে তারা জানান, কেউ যাবেন রংপুরে আবার কেউ বগুড়া, কেউবা পাবনা, সিরাজগঞ্জ।

১৫-২০ জনের এই দলটির মধ্যে আলাউদ্দিন নামে একজনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, ঢাকায় তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। থাকেন যাত্রাবাড়ী এলাকায়। পরিবারের সদস্যরা থাকেন রংপুরে। গত এক সপ্তাহে ‘লকডাউন’ এর মধ্যেও কিছু কাজ করতে পেরেছেন। কিন্তু আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সব বন্ধ। তাই তিনি ঢাকা ছাড়ছেন।

আলাউদ্দিন বলেন, ‘ঢাকা থাকলে খামু কী? গত বছর আছিলাম কিছু দিন। সময় যায় না, খাওয়ার কষ্ট। এর থেকে গ্রামে ভালো।’

এ সময় পাশ থেকে একজন বলেন, ‘ঢাকা থাকলেই খরচ। কয়দিন আর রোজগার ছাড়া চলা যায়? আবার কবে লকডাউন ছাড়ে! সামনে আছে রমজান। বাড়িত গেলেই লাভ।’

ট্রাকের অপেক্ষায় থাকলেও রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কোনো ট্রাকের চালক বা হেল্পারদের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় কিছুটা অনিশ্চিয়তায় আলাউদ্দিন।

তিনি জানান, গতকাল (রোববার) তাদের আরেকটি গ্রুপের লোকজন কারওরান বাজার থেকে সবজির ট্রাকে করে বাড়িতে গিয়েছে। বড় ট্রাকে জনপ্রতি ২০০- ২৫০ টাকা নেয়। আলাউদ্দিনদের প্রত্যাশা তারাও বাড়ি যেতে কোনো না কোনো ট্রাক পেয়ে যাবেন। আপাতত ট্রাক ছাড়া ভিন্ন কোনো উপায় নেই তাদের হাতে।

প্রাইভেকার বা মাইক্রোবাসে করে রংপুর, বগুড়ার মতো জায়গায় যাওয়া যাচ্ছে। তবে এতে খরচ বেশি হয়। গত রোববার ও সোমবার ঢাকা থেকে রংপুর যাওয়ার ভাড়া ছিল ১২ শ থেকে ১৫ শ টাকা।

ট্রাকে করে লোকজন নিলে রাস্তায় পুলিশ ধরে বলে জানান রাজশাহী থেকে সবজি নিয়ে আসা একটি ট্রাকের চালক জয়নাল। তবে কিছু টাকা দিলে পুলিশ ছেড়ে দেয় বলে জানান তিনি।

নতুন করে আসা লকডাউনের কারণে কিছু কিছু জায়গায় ছাড় পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে জয়নাল বলেন, ‘কয়দিন আগে রাস্তায় ঝামেলা বেশি হইতো, ধরলে টাকা দিতে হইতো বেশি। শুনছি গতকাল কিছু ট্রাক পুলিশ অল্প টাকায় যেতে দিছে। আজকে যাওয়ার সময় দেখি কী হয়।’

রাত থাকতেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলে পুলিশের ঝামেলা কিছুটা কম হয় বলে জানান জয়নাল। তিনি বলেন, ‘আমি দশটার দিকে বাজারে আইসি। বাজারে মাল নামাইয়া বাইর হতে বাজবে একটা-দেড়টা। আগে আগে রওনা দিতে পারলে ভাল।’

শুধু রাতে নয়, আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধকে সামনে রেখে দিনের বেলাতেও ঢাকা ছাড়ার হিড়িক দেখা গেছে।

গত রোববার ও সোমবার যাত্রাবাড়ী, আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী, আমিনবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কেউ যাচ্ছেন নিজস্ব বাহনে, কেউ ভাড়ায়। রাজধানীর প্রবেশ মুখগুলো পর্যন্ত সিটি বাস বা অন্যান্য বাহনে চড়ে গেলেও বাকি পথটুকু অনিশ্চিত। তা জেনেও অসংখ্য মানুষ ছুটছে গ্রামের পথে।

বাড়িমুখী মানুষেরা জানিয়েছেন, লকডাউনে তাদের জীবিকা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ যে কোনো মূল্যে ঢাকা ছাড়তে চাইছেন।

তারা বলছেন, গত বছর লকডাউনে যে কষ্ট ভোগ করেছেন, তা এবার আর তারা চান না।

এ বিভাগের আরো খবর