গত সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় হাঙ্গামার পর হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুতে হত্যার অভিযোগে যে মামলা হয়েছিল, সে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা পিবিআই।
সোমবার হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীসহ মোট ৪৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান।
এই মামলার তদন্তে ২২ জনের সাক্ষ্য নেয়ার কথা জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভাঙচুরসহ যা যা ঘটেছিল, তার সবই বিবেচনায় আনা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম তৃতীয় জজ আদালতে এ প্রতিবেদন জমা দেয় পিবিআই।
- আরও পড়ুন: আল্লামা শফীকে কি মেরে ফেলা হয়েছে
বিষয়টি নিশ্চিত করেন পিবিআই এর চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।
পিবিআইর এর ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন, তাদের প্রতিবেদনে মামুনুল হকের নাম নেই।
প্রতিবেদনে কী বলা হয়েছে, সেটি না জানালেও এই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘নরহত্যাজনিত অপরাধ।’
মামলার বাদী আল্লামা শফীর শ্যালক মাঈন উদ্দীনকে ফোন করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা জানিয়েছেন পিবিআই এর তদন্ত কর্মকর্তা মনির হোসেন।
নিউজবাংলাকে শফীর শ্যালক বলেন, ‘আমরা আসামি করে ছিলাম ৩৬ জনকে, অজ্ঞাত করেছি আরও ৭০/৮০ জনকে। আমাদের অভিযোগ ছিল হত্যার প্ররোচনা দেয়ার। পিবিআই তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে বলেই তাদের আসামি করেছে।’
১০৪ বছর বয়সী শাহ আহমদ শফী গত ১৮ সেপ্টেম্বর মারা যাওয়ার দুই দিন আগে তার হাটহাজারী মাদ্রাসায় ব্যাপক হাঙ্গামা হয়।
মাদ্রাসা প্রধানের পদ থেকে সরে যাওয়া, তার ছেলে আনাস মাদানীকে চাকরিচ্যুত করাসহ হেফাজতের একাংশের ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয় ১৬ সেপ্টেম্বর। তখন শফীর খাস কামরায় হামলা হয়, ব্যাপক ভাঙচুর চলে।
এই ঘটনায় হেফাজতে স্পষ্টত বিভক্তি দেখা দিয়েছে এবং গত ১৭ ডিসেম্বর ৩৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয় চট্টগ্রামের একটি আদালতে, যার আসামিদের সিংহভাগ হেফাজতের বর্তমান কমিটির নেতা।
চট্টগ্রামের বিচারিক হাকিম শিবলু কুমার দের আদালতে করা মামলায় অভিযোগ আনা হয় হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক, নাছির উদ্দিন মুনির, মীর ইদ্রিস নদভী, সহকারী যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উল্লাহ, আহসান উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজীর বিরুদ্ধে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, আল্লামা শফীকে গৃহবন্দি করে নির্যাতনের মাধ্যমে ‘শাহাদাত বরণ করতে বাধ্য করা হয়েছে’। মৃত্যুর কয়েক দিন আগে থেকে খাবার, ওষুধ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তাকে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ আবু হানিফ সে সময় নিউজবাংলাকে জানান, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে।
- আরও পড়ুন: বাবুনগরী দোষী হলে ফাঁসি চাই: শফীর শ্যালক
মামলা করার ছয়দিন পর গত ২৩ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে এসে বাবুনগরী বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুর অভিযোগ এনে যে মামলা করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার জন্য ষড়যন্ত্রের অংশ এ মামলা।’
এর তিন দিন পর সংবাদ সম্মেলনে আসেন মঈন উদ্দিন। শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, ‘আদালতে মামলা হয়েছে। পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে। তদন্তে দোষীরা চিহ্নিত হবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, জুনায়েদ বাবুনগরী গংরা মামলা প্রত্যাহারের হুমকি দিচ্ছে।’
যা হয়েছিল হাটহাজারী মাদ্রাসায়
শফীর খাদেম হোজাইফা আহমদের এবং তার নাতি মাওলানা আরশাদের পুস্তিকা ‘হাটহাজারীতে জীবনের শেষ তিন দিন’ এ হাটহাজারী মাদ্রাসায় হাঙ্গামা শুরু থেকে হেফাজত আমিরের মৃত্যুর বিষয়টি বিবৃত করা হয়েছে।
পুস্তিকায় লেখা হয়, সেদিন শফীকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়েছে, আল্লামা শফীকে ওষুধ খেতে দেয়া হয়নি, তার চিকিৎসায় বাধা দেয়া হয়েছে, হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে দেয়া হয়নি, পরে অক্সিজেনের নল ছিড়ে ফেলা হয়েছে।
হাটহাজারী মাদ্রাসায় হাঙ্গামার এক পর্যায়ে অসুস্থ শফীকে অক্সিজেন দেয়ার সময় অক্সিজেনের নল ছিড়ে ফেলা হয়
আর ১৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা বলেছেন, দেরি হয়ে গেছে। পরদিন ঢাকার একটি হাসপাতালে আনার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
পুস্তিকায় আল্লামা শফীকে ‘শহীদ শাইখুল ইসলাম’ বলা হয়েছে।
হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে শফীপুত্র আনাস মাদানীকে বহিষ্কার, হেফাজতের বর্তমান আমির জুনাইদ বাবুনগরী ও অব্যাহতি দেয়া তিন শিক্ষককে ফিরিয়ে আনাসহ ছয় দফা দাবিতে ১৬ সেপ্টেম্বর জোহরের নামাজের পর বিক্ষোভ শুরু হয়।
কিছুক্ষণের মধ্যে আনাস মাদানীর কক্ষ ভাঙচুর করা হয়।
পুস্তিকা অনুযায়ী, আন্দোলনকারীদের পাঁচ জন সে সময় শফীর কার্যালয়ে যান এবং আনাসকে বহিষ্কারের জন্য চাপ দিতে থাকেন।
শফী বারবার বলছিলেন, ‘অভিযোগ লিখিত আকারে উপস্থাপন করো, আমি দস্তখত করব। কিন্তু বাবারা তোমরা এইভাবে আমার সাথে দুর্ব্যবহার করো না।’
পুস্তিকায় উল্লেখ করা হয়, কয়েকজন তখন তুই-তুকারি করে খাদেমদের গালিগালাজ করতে থাকে। আল্লামা শফীকে উদ্দেশ্য করেও অশালীন বাক্য ব্যবহার করে।
মাগরিবের নামাজের পর শফীর কক্ষের গ্লাস, ফুলের টব ভাঙচুর করা হয়।
হাঙ্গামার দিনে সেদিন মাদ্রাসায় বেপরোয়া ভাঙচুর চালায় মাদ্রাসারা ছাত্ররা
পরে প্যাডে আনাস মাদানীর বহিষ্কারাদেশ লিখে তাতে সই দিতে শফীর নাতি দেওবন্দপড়ুয়া আসাদের গলায় গ্লাসের টুকরো ধরে বলা হয়, ‘এখন এটা দিয়ে টান মেরে ওর গলা কেটে ফেলব, জলদি দস্তখত কর এখানে।’
তখন আল্লামা শফীর চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল।
এতেও কাজ না হওয়ায় আল্লামা শফীর ব্যক্তিগত সহকারী (খাদেম) মাওলানা শফিউল আলমকে রড দিয়ে আঘাত করা হয়, চড়-ঘুষি মারা হয়।
দ্বিতীয় দিন সকাল ১০টার দিকে মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক আহমদ শফীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন।
এরপর ছড়ানো হয় গুজব। পাগলা ঘণ্টি বাজিয়ে ছাত্রদের জড়ো করা হয়। বলা হয়, ‘শফী সাহেব মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য মিটিং ডেকেছেন। তিনি গতকালকের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন।’
মাওলানা আরশাদ জানান, আন্দোলনকারীরা শফীর কার্যালয়ে এসে শিক্ষকদের বের করে দেন। সেখানকার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে শুরু হয় ভাঙচুর, লুটতরাজ। আহমদ শফীর সব টেবিলের গ্লাস, এসি, গ্লাসে বাঁধাই করা কাবা শরিফের গিলাফ একাধিক সম্মাননা পদক, কার্যালয়ের দরজা জানলাও ভাঙচুর করা হয়।
কার্যালয়ের বাইরে কামরার দুই দিকের গ্লাসের দরজা, নামফলক, বারান্দায় থাকা গ্লাসের সীমানা, প্রায় ১০টি জানালার গ্লাস, ৩০টির মতো ফুলের টব, বারান্দার সোফা, টেবিল, ফ্যানসহ ছোটবড় আরও অনেক আসবাবপত্রও ভাঙা হয়।
হাঙ্গামার দিন তছনছ করা হয় শফির ছেলে আনাস মাদানীর কক্ষ, ভাঙচুর চালানো হয় আল্লামা শফীর কার্যালয়েও
আহমদ শফীর সামনে তার খাদেমদের বেধড়ক মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে হেফাজত আমিরের অক্সিজেন সাপোর্ট খুলে নেয় আন্দোলনকারীরা।
খাদেম ও নাতিরা তাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে গেলে তাদের বাধা দেয়া হয়।
সে সময় এসি বন্ধ এবং অক্সিজেন খুলে ফেলায় শফীর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। নাতি ও খাদেমরা অনেক আকুতি-মিনতির পর বিদ্যুৎ সংযোগ ও অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে তারা রাজি হয়।
সন্ধ্যা সাতটার পর শুরা কমিটির বৈঠকে অসুস্থ হয়ে পড়েন আল্লামা শফী।
বারবার অনুরোধ করার পরও শুরা সদস্যরা বৈঠক চালিয়ে যান। আধা ঘণ্টা পর শফীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে।তিনি বমি করেন। মুখ দিয়ে অনবরত ফেনা বের হচ্ছিল।
তখন নাতি আরশাদ ও খাদেম শফিউল আলম হামলাকারীদের পায়ে ধরেন হাসপাতালে নিতে। তারা প্রথমে বলে, চিকিৎসা করালে মাদ্রাসাতেই ব্যবস্থা করবে।
দুই নাতি ও খাদেম তখন বলেন, শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে।
পুস্তিকায় বলা হয়, ‘অ্যাম্বুলেন্সে করে আল্লামা শফীকে হাসপাতালে নেয়ার অনুরোধ করলে হামলাকারীরা বলে, তাদের আমিরের নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এখান থেকে বের করার কোনো অনুমতি নেই।
নাতি ও খাদেমের পুস্তিকার বর্ণনা অনুযায়ী সেদিন আল্লামা শফীর খাস কামরাতেও ভাঙচুর চালানো হয়
কিছুক্ষণ পর হামলাকারীরা বলে, আমিরের নির্দেশ এসেছে। তবে অ্যাম্বুলেন্স আসার আগে শফী সুস্থ আছেন বলে মিডিয়ায় ভিডিও প্রচার করতে হবে।
‘অ্যাম্বুলেন্স আসার পর আন্দোলনকারীদের একজন এসে বলে, হুজুরের সঙ্গে শুধুমাত্র একজন যেতে পারবে। তখন নাতি ও খাদেম শফিউল বলে, হজরতের সার্বিক দেখভাল একজন দ্বারা সম্ভব নয়। কমপক্ষে তিন জনকে যেতে দিন। আন্দোলনকারীরা বলে, আমরা আমাদের আমিরের সাথে কথা বলে জানাচ্ছি।’
পরে সেই আমিরের সঙ্গে ফোনে কথা বলে শফীর সঙ্গে দুই জনকে যেতে দেন হামলাকারীরা। পরে অবশ্য তিন জনকেই যেতে দেয়া হয়।
এই আমির কে, সেই বিষয়টি এখনও জানেন না মাওলানা আরশাদ।
পুস্তিকায় বলা হয়, অ্যাম্বুলেন্সটি মাদরাসার শাহী গেট দিয়ে ঢুকতে বাধা দিয়ে কবরস্থানের গেট সংলগ্ন বাইতুল আতিক মসজিদের সামনে রেখে দেয়া হয়। ফলে আল্লামা শফীকে অ্যাম্বুলেন্সে উঠাতে আরও দেরি হয়।
স্ট্রেচারে নিয়ে যাওয়ার সময় শফীর মুখে অক্সিজেন লাগানো ছিল। সেটি টান দিয়ে বারবার খুলে ফেলা হচ্ছিল। একপর্যায়ে ছিড়ে ফেলা হয়। পরে অক্সিজেন ছাড়াই তাকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়।
অ্যাম্বুলেন্স ছাড়ার সময় শফীর খাদেম হোজাইফাকে টেনেহিঁচড়ে মারধর করে নামিয়ে দেযা হয়। তখন নাতি আরশাদ একাকী রওনা হন। তখন হামলাকারীরা নতুন দাবি নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখে।
তারা বলতে থাকে, স্থানীয় এমপি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে এসে সই দিতে হবে যে, ভবিষ্যতে আন্দোলনকারীদের কোনো ক্ষতি হবে না। তা না হলে অ্যাম্বুলেন্স যেতে দেয়া হবে না।
হাঙ্গামায় জড়িতরা সেদিন ফেসবুকে নানা হুমকি ধমকিও দিয়েছিল, যেসব প্রমাণ রয়ে গেছে এখনও
পুস্তিকায় বলা হয়, ‘এভাবে আরও ৪৫ মিনিট সময় অতিবাহিত হয়। তখনই অক্সিজেন না পাওয়ায় হুজুর একেবারে নিস্তেজ হয়ে পড়েন। সেখানে দায়িত্ব পালনরত ওসি সাহেবের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের মিটিং হয়। মিটিংয়ের আলোচনা অজানা। মিটিং শেষ হলে হজরতের অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দিতে মসজিদের মাইকে কয়েকবার ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দেয়া হয়। পুলিশি পাহারায় অ্যাম্বুলেন্স চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে।’
‘দেরি হয়ে গেছে’
পুস্তিকায় বলা হয়, ‘রাত দেড়টায় আল্লামা শফীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা বলেন দেরি হয়ে গেছে। অক্সিজেন না থাকার কারণে হুজুরের যে ক্ষতি হয়েছে, তা তাদের পক্ষে চিকিৎসা দ্বারা পূরণ করা সম্ভব নয়।
পরদিন শুক্রবার দুপুর ১২টায় ডাক্তাররা বোর্ড মিটিংয়ে বসেন। তারা নাতি আরশাদকে জানান, তাদের চেষ্টা ব্যর্থ।’
পুস্তিকার তথ্য অনুযাযী, বিকেল সোয়া চারটায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন শফীর অনুসারীরা। সন্ধ্যা ৬টার আগেই তাকে হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান।