নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ‘ভারপ্রাপ্ত আমির’ রেজাউল হক ওরফে রেজাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। তিনি তানভীর মাহমুদ ওরফে শিহাব ওরফে আহনাফ নামেও পরিচিত।
সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের বম্ব ডিজপোজাল টিমের ইনচার্জ, অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ রহমত উল্যাহ চৌধুরী নিউজ বাংলাকে জানান, গ্রেপ্তার জেএমবির ভারপ্রাপ্ত আমির রেজাউলের কাছ থেকে জেএমবির অন্য নেতা ও সদস্যদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি সংগঠনটির শীর্ষ নেতা পলাতক সালাহ উদ্দীন সালেহীনের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টাও করা হচ্ছে। এ ছাড়া সংগঠনটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সেসব বিষয় নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সিটিটিসি জানায়, বছরখানেক আগে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে বেশ কিছু কমান্ডো নাইফ, একটি চাপাতি ও প্রায় দেড় কেজি বিস্ফোরক দ্রব্যসহ আবদুল হাকিম, নোমান ও শফি নামে জেএমবির তিন সদস্য গ্রেপ্তার হন। ওই সময় তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তারা এই রেজাউল ওরফে আহনাফের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পান। তখন রেজাউল ছিলেন জেএমবির সামরিক প্রধান, যিনি কয়েক মাসের ব্যবধানে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার প্রায় অর্ধশত যুবককে দলে ভিড়িয়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।
জিজ্ঞাসাবাদকারী সিটিটিসির আরেক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, বর্তমানে জেএমবির কতজন সক্রিয় সদস্য রয়েছেন কিংবা সারা দেশে সংগঠনটির বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক দায়িত্বশীল কতজন নেতা সক্রিয় রয়েছেন সেসব বিষয়ে রেজাউলের কাছ থেকে তথ্য আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে।
জেএমবির কর্মকাণ্ড অনুসরণকারী সিটিটিসির অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের উত্তরাঞ্চলে এখনও পুরনো জেএমবির অনুসারীরা সক্রিয়। অনেকেই জামিন নিয়ে বাইরে বেরিয়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছেন। আবার অনেক নেতা কারাগার থেকেই দল গোছানোর কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।’
১৯৯৮ সালে শায়খ আবদুর রহমান জেএমবি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা হিসাবে আরও যারা ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন খালেদ সাইফুল্লাহ, হাফেজ মাহমুদ, সালাউদ্দিন, নাসরুল্লাহ, শাহেদ বিন হাফিজ ও রানা। পরবর্তীতে শাহেদ বিন হাফিজ ও রানা মতবিরোধের কারণে দল ছাড়েন। ২০০১ সালে শুরা কমিটিতে যুক্ত হন ফারুক হোসেন ওরফে খালেদ সাইফুল্লাহ, আসাদুজ্জামান হাজারী, আতাউর রহমান সানি (শায়খ রহমানের ভাই), আবদুল আউয়াল (জামাতা) ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই। তাদের মধ্যে ২০০২ সালে নাসরুল্লাহ রাঙামাটিতে বোমা বিস্ফোরণে মারা যান।
২০০৩ সালে আসাদুজ্জামান হাজারী অসুস্থতার কারণে সংগঠন ছেড়ে দেন। অন্যদের মধ্যে এখন সালাহউদ্দিন ছাড়া আর কেউ বেঁচে নেই। সালাহউদ্দিনকে ২০১৪ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা করে ছিনিয়ে নেন জঙ্গিরা। এরপর থেকেই তার কোনো হদিস খুঁজে পাননি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।