কথিত দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের তৃতীয় একটি বিয়ের দাবি উঠেছে।
এ বিষয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন একজন।
এই জিডি করেন মো. শাহজাহান। তিনি এতে জানান, ১০ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসায় ডেকে নিয়ে মামুনুল তাকে বলেছেন, তিনি তার বোন জান্নাতুল ফেরদৌস লিপিকে বিয়ে করেছেন।
রোববার সন্ধ্যায় এই জিডি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ। জিডির একটি কপি পেয়েছে নিউজবাংলা। সেখানে দেখা যায়, এই জিডির নম্বর ৮৩৫।
জিডিতে শাহজাহান বলেন, ৭ এপ্রিল বড় বোন জান্নাতুল ফেরদৌস লিপির সঙ্গে তার সর্বশেষ কথা হয়। ওই সময় লিপি তার ভাই শাহজাহানকে জানান, তিনি ওই সময় মোহাম্মদপুরে দিলরুবা নামে এক নারীর বাসায় অবস্থান করছিলেন।
দিলরুবা মামুনুল হকের বোনের নাম।
জিডিতে শাহজাহান বলেন, ‘১০ এপ্রিল (শনিবার) আল্লামা মামুনুল হক আমাকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় ডেকে জানায়, আমার বোন জান্নাতুল ফেরদৌস লিপির সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে।’
ওই সময় মামুনুল একটি চুক্তিনামা দেখান বলেও জিডিতে উল্লেখ করেন শাহজাহান।
তবে তার বোনের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ এখনও হয়নি বলেও জিডিতে লিখেছেন তিনি।
বোনকে বর্তমানে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে শাহজাহান আরও লেখেন, ‘আমার বোনকে নিরাপত্তা প্রদান ও অভিভাবকের কাছে হস্তান্তরের জন্য আইনগত সহায়তা কামনা করছি।’
জিডিতে শাহজাহান জানান, তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়র বানারহাওরা এলাকায়।
জিডির সত্যতা নিশ্চিত করে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জিডি হওয়ায় আদালতের নির্দেশে আমরা তদন্ত করব।’
বিষয়টি জানতে মামুনুল হকের মোবাইল ফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সোনারগাঁর রিসোর্ট-কাণ্ডের পর থেকে তিনি নিজে ফেসবুক লাইভে আসা বা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া ছাড়া কোনো কথা বলছেন না সাংবাদিকদের সঙ্গে।
গত বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে এসে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি একাধিক বিয়ে করেছি। শরিয়তে একজন মুসলিম পুরুষকে চার চারটি বিয়ে করার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। দেশি আইনেও চার বিয়ে করায় কোনো নিষেধাজ্ঞা বা কোনো অনুৎসাহ নেই। কাজেই আমি যদি চারটি বিবাহ করি, তাতে কার কী?’
মামুনুল বিয়ের দাবি করলেও তার স্ত্রী যে এগুলো জানতেন না, সেটি এখন স্পষ্ট। আর স্ত্রীর কাছে লুকানোর বিষয়ে যুক্তি দেখিয়ে বলেন, ‘ইসলামি শরিয়তের মধ্যেও এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ এখতিয়ার প্রদান করা হয়েছে যে, স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য, স্ত্রীকে খুশি করবার জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সীমিত ক্ষেত্রে সত্যকে গোপন করারও অবকাশ রয়েছে।’
রিসোর্ট-কাণ্ডের পর গোপনে বিয়ের দাবি
মামুনুল ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর রয়্যাল রিসোর্টে জান্নাত আরা ঝর্ণাকে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে অবরুদ্ধ করে স্থানীয়রা। তখন তাকে আমিনা তাইয়্যেবা পরিচয় দিয়ে মামুনুল দাবি করেন, দুই বছর আগে তাকে বিয়ে করেছেন।
সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে জান্নাত আরা ঝর্ণাকে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে অবরুদ্ধ করে স্থানীয়রা।তবে কথিত শ্বশুরের নাম আর শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা বলতে পারেননি মামুনুল। তার দাবি, সঙ্গিনীর বাবার নাম জাহিদুল ইসলাম, বাড়ি খুলনায়।
পরে ঝর্ণা জানান, তার বাবার নাম অলিয়র রহমান; বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়।
রিসোর্টের ঘটনার সময় মামুনুল তার স্ত্রী আমিনা তাইয়্যেবাকে ফোন করে জানান, তার সঙ্গিনী শহীদুল ইসলামের স্ত্রী। ঘটনার কারণে তিনি তাকে স্ত্রী পরিচয় দিতে বাধ্য হয়েছেন। এ নিয়ে কিছু মনে না করতে তাইয়্যেবাকে অনুরোধও করেন তিনি।
এরপর আরও বেশ কিছু ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে, যাতে মামুনুলের বিয়ের দাবির সত্যতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। যদিও ওই রাতে মামুনুল ফেসবুক লাইভে এসে দাবি করেছেন, এই বিয়ে পারিবারিকভাবে হয়েছে।
পরের দিন তাইয়্যেবার সঙ্গে মামুনুলের বোনের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। এতে মামুনুলের বোন তার ভ্রাতৃবধূকে বলেন, কেউ ফোন করলে যেন তিনি বলেন, তিনি সব জানেন। তবে তাইয়্যেবা জানতে চান, মামুনুল আসলেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে কি না।