মার্চের শেষ দিক থেকে সরকার পতনের হুমকি দিয়ে তাণ্ডব চালানোর পর পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযানের মুখে আরও নমনীয় হয়েছে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।
সদরদপ্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় আলোচিত বৈঠক শেষে সংগঠনের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, ‘সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনো যুদ্ধ নাই। সরকার সরকারের অবস্থানে কাজ করুক, আমরা আমাদের অবস্থানে কাজ করি আগের মতো। আমরা যুদ্ধ করব না।
‘আমাদের হেফাজতে ইসলামের উদ্দেশ্য সরকারের পতন নয়। হেফাজতে ইসলাম ইমান আক্বিদা, আরও একটা কথা আছে।’
রোববার সদরদপ্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় এক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে হেফাজত প্রধান এই কথা বলেন।
গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডবে হেফাজত সমর্থকদের যে প্রাণহানি হয়েছে, সেটি ভুলে যাওয়ার কথাও বলেন বাবুনগরী।
তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের দাবি হলো, যা হই গেছে, হই গেছে, তাদের কপালে আছে শহিদ হওয়ার, তাদের কপাল খুব ভালো…
‘যা হওয়ার হই গেছে, এখন আমরা মাদ্রাসার পরীক্ষা হই গেছে। এখন রমজানের ছুটি দিয়া দিছি, মাদ্রাসা এখন বন্ধ, মাদ্রাসা ঠান্ডা। আমি ধর্মন্ত্রীকেও বলছি, আমাদের এমপি সাবকেও বলছি, অন্য জায়গাতেও বলছি, মাদ্রাসা ঠান্ডা।’
এই বৈঠককে ঘিরে গণমাধ্যমের দৃষ্টি ছিল রিসোর্টকাণ্ডে বেকায়দায় পড়া সংগঠনের নেতা মামুনুল হককে নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসে কি না।
তবে বাবুনগরী বলেন, ‘আমাদের আজকে কোনো ব্যক্তি বিশেষ নিয়ে আলোচনা হয় নাই এবং কাউকে অব্যাহতি দেয়ার কোনো কথা উঠে নাই। কাউকে অব্যাহতি দেয়ার আলোচনা হয় নাই।’
বাবুনগরী মূলত কথা বলেন তাদের নেতা-কর্মীদের তাণ্ডবের পর পুলিশের অভিযান নিয়ে। যদিও তাণ্ডবে নিজেদের সংগঠনের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে তিনি দাবি করেন, তাদের সব কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ।
হরতাল, মিছিল-মিটিং বৈধ উল্লেখ করে বাবুনগরী বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে এসব বৈধ। হামলা, ভাঙচুর অবৈধ। আমরা হামলা ভাঙচুরের বিপক্ষে।’
গত ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের হাটহাজারী, পটিয়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বহু সরকারি সম্পত্তি এমনকি থানা ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আক্রমণ চালায় মাদ্রাসার ছাত্র হেফাজত সমর্থকরা। দুই দিন পর হরতালে তাদের ধ্বংসযজ্ঞ ছিল আরও ব্যাপক। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে ধরনের নাশকতা হয়েছে, সেটি দেখে আঁতকে ওঠেন স্থানীয়রা।
এসব ঘটনায় করা মামলায় পুলিশ বিভিন্ন স্থানে এখন পর্যন্ত ৮০ জনেরও বেশি মানুষকে আটক করেছে।
বাবুনগরীর দাবি, পুলিশ-র্যাব নিরীহদের হয়রানি করছে।
তিনি বলেন, ‘প্রতি রাত্রে এলাকায় পুলিশ-র্যাব বের হয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করতেছে, ধরি নিয়া যাইতেছে, অত্যাচার করতেছে, চালান দিতেছে, পটিয়া, হাটহাজারী, এই সমন্ত এলাকায়।
‘মহেশখালি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ আরও বিভিন্ন জায়গা, মুন্সিগঞ্জ নিরীহ মানুষকে, নির্দোষ মানুষকে হয়রানি করতেছে, ধইরা নিয়া যাইতেছে। পুলিশ তাদের ঘরে ঢুকি যায়, তারা ঘুমাইতে পারে না, বাড়িঘর ছেড়ে চলে গেছে অনেক।’
বাবুনগরী বলেন, ‘আমি ধর্মমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে এক্ষণ কথা বলছি, তিনি বলছে, এইডা তো আইন নয়, আইন হলো সিসি ক্যামেরায় যারা দোষী সাব্যস্ত হবে, আসলে প্রকৃত যারা দোষী সাব্যস্ত করা হবে, তাদের বিচার করা হবে। আমি বললাম ১০০ ভাগ। আমি মিয়া নিয়া আপনার সঙ্গে আছি। কিন্তু নির্দোষ মানুষকে খামোখা ধরিয়া নিয়া যাওয়া, যেটা পুলিশ করে আমরা জানি। তাদের চাকুরি… প্রমোশন হওয়া উচিত না।
‘চাকরির প্রমোশন হওয়ার জন্য এই রকম জুলুম নির্যাতন যদি করে, আল্লাহর গজব আসবে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি এইগুলো বন্ধ করতে হবে।’
হেফাজতের আমির বলেন, ‘আমি ধর্মমন্ত্রীকে বলেছি, এখন সব সব ঠান্ডা, মাদ্রাসা ঠান্ডা, এলাকাও ঠান্ডা, কিন্তু যদি এভাবে ধরাধরি হয়, ধরিয়া নিয়া যায়, নিরীহ মানুষকে ধরিয়া নিয়া যায়, যদি এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, পুরা আশঙ্কা আছে। আবার উত্তেজনা সৃষ্টি হবে।’
‘কালেকশনের মৌসুমে’ মাদ্রাসা বন্ধ করা যাবে না
লকডাউনের নামে রোজায় মসজিদ-মাদ্রাসা বন্ধ না করার অনুরোধও করেন বাবুনগরী। তার দাবি, মাদ্রাসায় মসজিদে কোরআন হাদিসের আলোচনা হয় বলেই করোনা আসবে না।
তিনি বলেন, ‘তার প্রমাণ হলো, আল্লাহর রহমতে মাদ্রাসার কোনো ছাত্র করোনায় আক্রান্ত হয় নাই। মাদ্রাসার কোনো বড় হুজুর করোনায় আক্রান্ত হয় নাই। যারা বেশি করোনা থেকে বাঁচতে চায়, করোনা তাদেরকে ধরবে।’
মাহে রমজানে কালেকশন আছে উল্লেখ করে বাবুনগরী বলেন, ‘এই মাহে রমজান একটা বড় সিজন কালেকশনের। জাকাত ফিতরা, এগুলো নিয়া সারা বছর চলে। এই লকডাউন দিয়ে এটা বন্ধ করতেছে। এগুলো ছাড়া এই দেশে কওমি অঙ্গন থাকতে পারবে না, কওমি মাদ্রাসা থাকতে পারবে না।’
এই মৌসুমে কওমি মাদ্রাসা বন্ধ মানে মাদ্রাসার সঙ্গে ‘যুদ্ধ’চেষ্টা বলেও বর্ণনা করেন হেফাজত নেতা।
তিনি বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসা না থাকলে মুসলমান থাকবে না, বাংলাদেশ স্পেন হয়ে যাবে। আমরা বাংলাদেশকে স্পেন হতে দেব না।’
হেফাজত নেতাদের ব্যাংক হিসাব চাওয়াকে হয়রানি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগেও এই ধরনের হয়রানি হয়েছে। আবারও হচ্ছে।’