হেফাজত নেতা মামুনুল হকের রিসোর্টকাণ্ড কেন্দ্র করে ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলায় ব্যাপক তাণ্ডব চালান হেফাজত কর্মীরা। রয়্যাল রিসোর্টের পাশাপাশি ভাঙচুর করা হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়, বাজারের দোকানপাট। হামলা হয় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতেও।
এই সহিংসতায় হেফাজত কর্মীদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির স্থানীয় সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার অনুসারীরা সরাসরি অংশ নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে হামলায় যোগ দেন বিএনপি, জামায়াতের কর্মীরাও।
ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভীর দ্বন্দ্বের জেরে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগও বিপর্যস্ত। এ কারণে ৩ এপ্রিলের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
রয়্যাল রিসোর্টে মামুনুল হককে তার কথিত স্ত্রীর বিষয়ে জেরা করেছিলেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেকসহ সভাপতি সোহাগ রনি। পরে এ দুজনের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করেন হেফাজত কর্মীরা।
যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম নান্নু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্থানীয় কয়েকজন ইউটিউবার ও সাংবাদিক আমাকে টেলিফোনে পরনারীসহ মামুনুল হকের রিসোর্টে অবস্থানের কথা জানালে, আমি সেখানে ছুটে যাই। আমার মতো ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনিও সেখানে যান। আমাদের এলাকায় এমন ঘটনা ঘটলে আমাদের তো যেতে হবেই। সেখানে সাংবাদিক-পুলিশ তাদের জেরা করেছে, সেসব ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পরলে হেফাজত কর্মীরা ভেবেছে আমরা ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছি। এরপর তারা আমার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান আর বাসায় ভাঙচুর করে, হামলা করে আমার সবকিছু শেষ করে দেয়।’
সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্ট কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে অবরুদ্ধ হন হেফাজতের যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হক। ছবি: নিউজবাংলা
ওই দিনের হামলায় হেফাজতের সঙ্গে অন্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন দাবি করে নান্নু বলেন, ‘তারা অতর্কিত হামলা করেছিল, আমরা বুঝতেই পারিনি এমন হামলা হবে। হামলা প্রতিহত করার কোনো প্রস্তুতিই আমাদের ছিল না। হেফাজত, বিএনপি ও জামাত-শিবিরের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার আত্মীয়-স্বজন আমার বাড়ি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হামলা-লুটপাট করেছে।’
জাতীয় পার্টির এমপির স্বজন-সমর্থকদের জড়িত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে হামলা করেছে। এখানে জাতীয় পার্টির এমপি আওয়ামী লীগের বিরোধী দল হিসেবে কাজ করে। তিনি বিএনপি-জামাতকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে সব সময় তৎপর থাকেন।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদেরও বিষয়টি জানানো হয়েছে উল্লেখ করে নান্নু বলেন, ‘তাদের জানানোর পরই ঘটনাস্থল সরেজমিনে দেখতে এসেছেন। তখনও আমরা সামনাসামনি সব কিছু বলেছি, এরপর তারা বলেছেন কাউকেই আর ছাড় দেয়া হবে না।’
তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনি বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে তার বাবা মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার শাহ জামাল তোঁতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হেফাজতের কর্মীদের সঙ্গে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কর্মীরা এসে আমাদের বাড়ি ও পাশের বাজারে হামলা চালায়।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন, তাই তিনি এখানকার মানুষের জন্য রাজনীতি করেন না। তিনি নিজের স্বার্থের কারণে বিএনপি-জামাতকে নিয়ে রাজনীতি করতে চান। আমাদের বাড়িতে হামলা হলো, কই তিনি তো একবার দেখতেও এলেন না!’
শাহ জামাল তোঁতা বলেন, ‘আমার ছেলে নিয়মিত মাদ্রাসার ছাত্রদের খোঁজ খবর রাখে, নিয়মিত তাদের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করে, তাদের সঙ্গে আমার ছেলের সম্পর্ক ভালো, তারপরেও তারা আমার ছেলের বাসায় ভাঙচুর করল কীভাবে!’
তবে অভিযোগ মানছেন না নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির নেতা লিয়াকত হোসেন খোকা। তিনি পাল্টা অভিযোগ তোলেন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সারের বিরুদ্ধে।
খোকা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন আবদুল্লাহ আল কায়সার। তার আসনে আমি নির্বাচিত হওয়ায় প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আমার বিরুদ্ধে তার কর্মীদের দিয়ে এসব কথা বলাচ্ছেন।’
মামুনুলকে ছাড়িয়ে নিতে লাঠিসোটা নিয়ে সোনারগাঁ এলাকায় তাণ্ডব চালায় হেফাজতের কর্মীরা। ছবি: নিউজবাংলা
৩ এপ্রিলের ঘটনার বিষয়ে খোকা বলেন, ‘আমি বা আমার কর্মীরা কোনোভাবেই হেফাজতের সঙ্গে ছিলাম না। পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে ধারণা করে আমি আমার কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলাম, তারা যেন রাস্তায় নেমে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠায়। কোনো ধরনের সহিংসতা না করতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করতে তাদের মাঠে নামতে বলেছিলাম।
‘মামুনুল হকের বিষয়টি শোনার সঙ্গে সঙ্গেই একজন দায়িত্বশীল সংসদ সদস্য হিসেবে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি, যেন এ নিয়ে কোনো উত্তেজনা সৃষ্টি না হয়। কিন্তু উল্টো এখন আমার ঘাড়ে দোষ চাপানো হচ্ছে।’
হামলার পর সংসদ সদস্য হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে দেখা না করার কারণ ব্যাখ্যা করে খোকা বলেন, ‘তারা তো সবাইকে আমার বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল, এমন পরিস্থিতিতে আমি কীভাবে সেখানে যাই!’
লিয়াকত হোসেন খোকার অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ আল কায়সারের বক্তব্য জানতে চায় নিউজবাংলা। তিনি বলেন, ‘তার (খোকা) প্রতি আমার প্রতিহিংসার কিছু নাই। তিনি তার মতো নিজেকে সেভ করতে মনগড়া কথা বলতেই পারেন। আপনারা সাংবাদিক নিজেরা তদন্ত করে দেখুন, সব উত্তর পেয়ে যাবেন।’
৩ এপ্রিলের পর আবদুল্লাহ আল কায়সার এক সমাবেশে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না আলেম সমাজ এই হামলায় জড়িত, এই হামলা করেছে জাতীয় পার্টি, বিএনপির কর্মীরা।’
এ বক্তব্যের বিষয়ে আবদুল্লাহ আল কায়সার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি সত্যিই বিশ্বাস করি না, কারণ স্থানীয় আলেমদের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়া অনেক ভালো। ২০১৩ সালের ৫ মের আন্দোলনের সময় স্থানীয় আলেমরা আমার অনুরোধে শাপলা চত্বরে যাননি। আমি তখন এই আসনের সংসদ সদস্য, পরে আমি খেয়াল রেখেছি তাদের বিরুদ্ধে যেন হয়রানিমূলক কোনো মামলা না হয়।’
সোনারগাঁয়ে তাণ্ডবের ঘটনায় যে তিনটি মামলা হয়েছে তার একটির বাদি সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জিয়াউর রহমান। সে মামলায় প্রধান আসামি মামুনুল হকের পাশাপাশি সোনারগাঁ পৌরসভা জাতীয় পার্টির সভাপতি এম এ জামান ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামকেও আসামি করা হয়েছে। একই মামলায় আসামি হিসেবে আছেন স্থানীয় হেফাজত, বিএনপি, জামাত-শিবির কর্মীরাও।
হেফাজতের তাণ্ডবে তছনছ রয়্যাল রিসোর্টের জিম। ছবি: নিউজবাংলা
আওয়ামী লীগ কেন কোণঠাসা?
মামুনুল হকের রিসোর্টকাণ্ড ঘিরে সোনারগাঁ উপজেলার মোগড়া পাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ দুই নেতার বাড়িতে হামলার সময় ন্যূনতম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শামছুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ভাবতেই পারিনি এমন কিছু ঘটবে। হঠাৎ করেই সহিংসতা শুরু হল। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা ছিল না, তাই আমাদের কোনো প্রস্তুতিও ছিল না।’
সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য একটি শিক্ষা। এখানে কমিউনিকেশন গ্যাপ হয়েছে, সেই সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুই নেতারও ভুল আছে। মামুনুল হক তো আর কোনো ছোট নেতা নন। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছেন। তাই সেখানে ছুটে যাবার আগে তাদের অবশ্যই সিনিয়র নেতাদের জানানো দরকার ছিল।’
প্রশাসনও কালক্ষেপণ করে হামলাকারীদের সুসংগঠিত হবার সুযোগ করে দিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের উচিত ছিল মামুনুল হককে নিরাপদ কোথাও সরিয়ে নেয়া, তারা সেটা করেনি।’
রিসোর্টে যাবার আগে সিনিয়র নেতাদের কেন জানাননি- জানতে চাইলে যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেটা আমার ভুল হয়েছে, আমি আসলে বুঝেতে পারিনি।’
প্রশাসনের অবহেলার অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি সোনারগাঁ পুলিশের কোনো কর্মকর্তা। তবে সোনারগাঁ থানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ধরনের রাজনৈতিক সিচ্যুয়েশন ডিল করতে হলে আমাদের পলিটিক্যাল ডিসিশনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ধরে নিন সেখান থেকে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত পাচ্ছিলাম না।’
সোনারগাঁ এলাকায় এক ছাত্রলীগ নেতার রেস্টুরেন্টেও ভাঙচুর চালায় হেফাজত কর্মীরা। ছবি: নিউজবাংলা
২৫ বছর কমিটি ছাড়া সোনারগাঁ আওয়ামী লীগ
সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সবশেষ সম্মেলন হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। এ নিয়ে ক্ষোভ আছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ করতে করতে বুড়ো হয়ে গেলাম, এখনও কোনো পদ পেলাম না। আমার বয়স ৬১ চলছে, কবে কমিটি হবে আর কবেই বা পদ পাব! সারাজীবন আওয়ামী লীগকে দিয়েই গেলাম, পেলাম না কিছুই।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, ‘এত লম্বা সময়ে কমিটি না হওয়ায় দলীয় কোন্দলের মাত্রা বেড়েছে। তৈরি হয়েছে নেতৃত্বের সংকট।
১৯৯৬ সালে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত। তিনি মারা যাবার পর ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন বর্তমান উপজেলা আহ্বায়ক শামছুল ইসলাম।
এত সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি থাকার পরেও কেন উপজেলা কমিটি করতে পারলেন না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি জেলা আওয়ামী লীগ থেকে তখন সহযোগিতা পাইনি। জেলা আওয়ামী লীগের আগ্রহের অভাব ছিল। এখন আর কোনো সমস্যা নাই, সব কিছু গোছানো আছে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আমরা সম্মেলন করব।’
এ অভিযোগ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শামছুল ইসলাম সাহেব কেন জেলা থেকে সহযোগিতা পাননি, সে বিষয়ে আমরা সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারব না। কারণ সে সময়ে আমরা দায়িত্ব ছিলাম না।’
জেলা আওয়ামী লীগে হেফাজত ও জাতীয় পার্টি ‘প্রীতি’
সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানান, নারায়ণগঞ্জে কখনওই হেফাজত বা জাতীয় পার্টির আধিপত্য ছিল না। তবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বড় ভাই সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হওয়ায় জাতীয় পার্টির প্রতি তার মৌন সমর্থন কাজ করে। তাছাড়া শামীম ওসমান অনেকবার হেফাজত নেতাদের প্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছেন।
সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু অভিযোগ করেন, ‘শামীম ওসমান সাহেব জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকাকে প্রশ্রয় দেন। সেজন্যই তিনি বাড়াবাড়ি করার সাহস পাচ্ছেন। আমরা আওয়ামী লীগের কর্মীরা নানাভাবে নির্যাতিত। আমি নিজেসহ অন্য আওয়ামী লীগ নেতারা খোকা সাহেবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেও তার (শামীম ওসমান) কাছ থেকে কোনো সমাধান পাইনি।’
সোনারগাঁয়ের স্থানীয়রা জানান, তাদের এলাকায় সম্প্রতি অনেক মাদ্রাসা স্থাপিত হয়েছে, যেগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় আছেন শামীম ওসমান ও তার সমর্থকেরা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল ও ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।
নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের পরিচিত দুই মুখ শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভী। ছবি: সংগৃহীত
জেলায় দলীয় বিরোধের জের উপজেলায়
সোনারগাঁ উপজেলার রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ বলছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগে বছরের পর বছর ধরে চলা কোন্দলের কারণে উপজেলা পর্যায়েও আওয়ামী লীগ সংগঠিত হতে পারছে না। আর সোনারগাঁয়ে এই সুযোগটাই নিয়েছে হেফাজত আর জাতীয় পার্টি।
তাদের অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান আর নারায়ণগঞ্জ পৌর মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর মধ্যে দা-কুমড়া সম্পর্কের প্রভাব জেলা থেকে উপজেলা পর্যায়ের নেতার্মীদের মধ্যেও পড়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনারগাঁ উপজেলার এক আওয়ামী লীগ নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভীর দ্বন্দ্ব এতটাই চরমে যে তারা কারও মুখোমুখি হন না। এমনকি কোনো দলীয় অনুষ্ঠানে একজন গেলে অন্যজন যান না। তাই আমরাও সুসংগঠিত হতে পারছি না। আমাদের নেতাদের পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো নির্দেশ না থাকায় হেফাজতের তাণ্ডবের সময় নিশ্চুপ ছিলাম।’
হেফাজতের তাণ্ডবের চিত্র সরেজমিনে দেখতে বুধবার ঢাকা থেকে ঘটনাস্থলে যায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একটি দল। সেখানে শামীম ওসমান উপস্থিত থাকলেও যাননি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী। তবে আইভী সমর্থকদের একটি অংশ উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনাস্থলে না যাওয়ার কারণ জানতে মোবাইল ফোনে আইভীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ইস্যু নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না।’
এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল কায়সার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দলে যতই কোন্দল থাকুক, জাতীয় ইস্যুতে আমরা সবসময় ঐক্যবদ্ধ। এর আগেও আমরা এক হয়ে অনেক আন্দোলন করেছি। সেদিনের হেফাজত তাণ্ডবে দলীয় কোন্দলের কোনো প্রভাব ছিল না। এটা ভুল কথা।’
অন্যদিকে, উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শামসুল ইসলাম বলেন, ‘এখন আমরা সুসংগঠিত। আমাদের মাঝে আর কোনো সমস্যা নেই। কেন্দ্রীয় নেতারা এসেছেন, তারা আমাদের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, এখন আমরা ঐক্যবদ্ধ, আর কোনো সমস্যা হবে না।’