করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে লকডাউনের মধ্যে পুঁজিবাজার সীমিত পরিসরে চালু থাকলেও সর্বাত্মক লকডাউনে চালু থাকবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নিতে আরও সময় নিতে চায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
রোববার সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সরকারের পরবর্তী লকডাউনে কী কী বন্ধ থাকবে আর কী কী খোলা থাকবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে বিষয় বলা হয়নি। প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর সেটি স্পষ্ট হবে।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু ব্যাংকের কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয় করে বর্তমানে পুঁজিবাজারের লেনদেন চলছে সেহেতু পরবর্তী লকডাউনে বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে আমরা সেটির পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম অবশ্য নিউজবাংলাকে বলেন, কঠোর লকডাউনেও চালু থাকবে ব্যাংকের লেনদেন। তবে লেনদেনের প্রক্রিয়া কী হবে, কতক্ষণ খোলা থাকবে, সেটি পরে জানানো হবে।
তবে কেন্ত্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত নিতে এক দিন দেরি হলেও তাতে তেমন প্রভাব পড়ে না আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু পুঁজিবাজারে কী প্রভাব পড়ে, সেটা দেখা গেছে গত রোববার।
গত সোমবার থেকে লডকাউন শুরুর তিন দিন বাজারে ঊর্ধ্বগতি থাকলেও লেনদেন বন্ধ হয়ে যাবে আতঙ্কে লকডাউনের আগের দিন সূচক পড়ে যায় প্রায় দুইশ পয়েন্ট।
তবে সেদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত জানায়, লকডাউনে আড়াই ঘণ্টা ব্যাংক চালু থাকবে। আর বিএসইসি আগেই জানিয়েছিল ব্যাংক চালু থাকলে চলবে পুঁজিবাজারের লেনদেনও।
কিন্তু এই সিদ্ধান্ত আসতে একদিন দেরি হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক দরপতনে যে বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়, সে জন্য কেউ দুঃখও প্রকাশ করেনি।
লকডাউনের আগের দিন আতঙ্কে সূচক কমে ১৮১ পয়েন্ট। দরপতনের পর ঠিকই বিএসইসি সক্রিয় হয়ে বাজারে তারল্য বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়ে মার্জিন ঋণের সীমা বাড়ায়। এক টাকার বিপরীতে ৫০ পয়সার জায়গায় ঋণসীমা বাড়িয়ে ৮০ পয়সা করা হয়। এর ফলে ঋণ নেয়ার পর শেয়ারমূল্য কমে যাওয়ায় যারা ফোর্সড সেলের ঝুঁকিতে পড়েছিলেন, তারা সেই ঝুঁকি থেকে মুক্ত হন।
অর্থাৎ এই সিদ্ধান্তটি রোববারের আগেই নিতে পারলে অথবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত আসার আগে কেবল রোববার লেনদেন বন্ধ রাখা হলে বিনিয়োগকারীদের এত বড় লোকসানের মধ্যে পড়তে হতো না।
লকডাউন শিথিল হয়ে পড়ার পর করোনা আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এবার আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউনে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। জানানো হয়েছে, জরুরি সেবা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অফিস বন্ধ থাকবে। সব ধরনের যানবাহন, বিপণিবিতান বন্ধ রাখা হবে। কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে জনসাধারণের চলাচল। নিয়ম অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়েছে।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, পুঁজিবাজার নিয়ে সিদ্ধান্ত রোববারের আগেই নিয়ে নিলে পতনের ঝুঁকি এড়ানো যায়। অন্তত সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে লেনদেন স্থগিত রাখা যেতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
মার্চেন্ট ব্যাংক ব্র্যাক ইপিএলের গবেষণা বিভাগের সাবেক প্রধান দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলকে বলেন, ‘আমাদের পুঁজিবাজারের সার্বিক যে অবস্থা, তাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও আগে থেকে পরিকল্পনা নিয়ে রাখা ভালো। এটা বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সুরক্ষা দেয়ার জন্য হলেও করা উচিত।’
তবে তিনি বিনিয়োগকারীদের অস্থির না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘সারা বিশ্বে করোনার যে অবস্থা, তাতে কিন্ত কোথাও পুঁজিবাজারের উপর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। ব্যতিক্রম শুধু আমাদের পুঁজিবাজারে। এখানে আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের এটা বুঝতে হবে, পুঁজিবাজার সাময়িক বন্ধ করা হলেও আমাদের অর্থনীতি এখন কেমন। অর্থনীতি যদি ভালো থাকে তাহলে পুঁজিবাজারেও এর ভালো প্রভাব পড়বে। কারো কথা শুনে বা আতঙ্কে শেয়ার বিক্রির করার কিছু নেই।’
বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের বিষয়টি বিএসইসি কতটা গুরুত্ব দেয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘লকডাউনের আতঙ্ক যখন কেবল কাটতে শুরু করেছে, তখন ৬৬টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা সঠিক সিদ্ধান্ত হয়নি। এখন সরকার আবারও কঠোর লকডাউন বাড়িয়েছে। এই অবস্থায় বিএইসির আরও তৎপর হয়ে সিদ্ধান্তগুলো যত দ্রুত সম্ভব নিয়ে ফেলা উচিত।’