নাটোরের গুরুদাসপুরে প্রাণিসম্পদ খাতে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা প্রকৃত খামারিরা পাননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
করোনা মহামারি সংকট চলাকালে প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এ প্রণোদনা দেয়া হয়।
জানা গেছে, করোনার সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য প্রাণিসম্পদ ও দুগ্ধ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রণোদনার আওতায় গুরুদাসপুর উপজেলার ৬৬০ জন গাভি খামারির অনুকূলে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকা প্রণোদনা সহায়তা দেয়া হয়।
শর্ত অনুযায়ী, প্রণোদনা পেতে হলে কোনো খামারির অন্তত দুটি গাভি থাকতে হবে। মাঠপর্যায়ে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত খামারিদের তালিকা প্রস্তুত করার কথা। এরপরই প্রকৃত খামারিরা পাবেন এই প্রণোদনার টাকা। কিন্তু তালিকা প্রস্তুতে স্বজনপ্রীতি আর ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ করেছেন স্থানীয় খামারিরা।
পাটপাড়া গ্রামের খামারি মহরম আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা গাভি পালন করেও কোনো টাকা পাইনি। অথচ যারা কোনোদিন গাভি পালন করেননি, তারা ঘুষ দিয়ে তালিকায় নাম তুলে প্রণোদনার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।’
এমন অভিযোগ করেছেন পাটপাড়া ও সোনাবাজু গ্রামের অন্তত ২০জন খামারি।
উপজেলা প্রকল্প অফিসে কর্মরত পাটপাড়া গ্রামের বাবলু হোসেন গাভি পালন না করেও পেয়েছেন প্রণোদনার টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে গাভি ছিল। তা বিক্রি করে দিয়েছি। তালিকা তৈরি করার সময় কর্মকর্তাদের এই কথা জানিয়েছি। তারপরেও প্রণোদনার ১০ হাজার টাকা পেয়েছি। এখন টাকা ফেরত দিতে হলে দিয়ে দেব।’
একই গ্রামের শিক্ষক আমিরুল ইসলামও প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন। অথচ তিনি প্রকৃত খামারি নন।
তিনি বলেন, ‘প্রণোদনার জন্য কেউ আমার নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে আসেননি। কিন্তু হঠাৎ মোবাইলে ১০ হাজার টাকা পেয়েছি। পরে জানলাম এটা প্রাণিসম্পদ অফিসের প্রণোদনার টাকা। আমি কখনো গাভি পালন করিনি।’
লাইভস্টক সার্ভিস প্রোভাইডার (মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা) হাবিবুর রহমান সুজন জানান, ‘যাদের গাভি নাই তাদের প্রণোদনার তালিকায় নাম কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হলো তা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলতে পারবেন। আমি কোনো অনিয়ম করিনি। কারো কাছ থেকে ঘুষ নিইনি। যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে তারা ষড়যন্ত্র করছে।’
প্রণোদনার জন্য লাইভস্টক সার্ভিস প্রোভাইডাররা (মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা) প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করেন। প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান মানু ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সর্বশেষ তদন্ত করে এই তালিকা হেডকোয়ার্টারে পাঠান।
অনিয়মের ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান মানু বলেন, যারা প্রণোদনা পাননি তারাই মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।
অপরদিকে, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, ‘এলএসপি তালিকা করেছেন। আমি ১ হাজার ৬৬০ জনের মধ্যে ১০ জনের বিষয়ে তদন্ত করেছিলাম। প্রকল্পের লোকজন অনিয়ম করে থাকলে তার দায়ভার তাদের, আমার না।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তমাল হোসেন বলেন, খামারিদের প্রণোদনার টাকার অনিয়ম বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবর জানানো হবে।