রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার প্রেক্ষিতে দেশটির নোবেল বিজয়ী গণতান্ত্রিক নেত্রী অংসান সু চি ও সামরিক কর্মকর্তারা কোনো প্রকার সম্মান দেখায়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকায় সফররত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক দূত জন কেরি।
শুক্রবার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসে এক প্রশ্নের উত্তরে কেরি এ কথা বলেন।
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিষয়টি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার এখন অন্যভাবে পরিচালিত হচ্ছে।’
অংসান সু চি ও দেশটির সামরিক কর্মকর্তাদের কড়া সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি, আমরা বিষয়টি নিয়ে অনেক চেষ্টা করেছি। আমাদের অনেক প্রত্যাশাও ছিল। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ দেশটির সংকট নিয়ে অংসান সু চির সঙ্গে আমি বার বার কথা বলেছি। আমি নেপিদোয় গিয়েছি। জেনারেলদের সঙ্গে দেখা করেছি। সৌজন্যতার সর্বোচ্চটা দিয়ে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছি। কিন্তু তারা কোনো সম্মান দেখায়নি।’
জন কেরি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা ঘটেছে এবং মিয়ানমারের জনগণের সঙ্গে এখন যা ঘটছে, সেটা এই গ্রহের মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’
রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের সহমর্মিতায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন খুবই কৃতজ্ঞ জানিয়ে তার দূত বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট শুধু বাংলাদেশের একার দায় নয়।’
এটিকে বৈশ্বিক সংকট হিসেবে উল্লেখ করে দিয়ে জন কেরি বলেন, ‘বিশ্ব সম্প্রদায়ের এ বিষয়ে এগিয়ে আসা উচিত। জাতিসংঘ যে কারণে আছে অর্থাৎ জাতিসংঘের নেতৃত্বে সব দেশর সম্মিলিতভাবে এই সংকট সমাধানে এগিয়ে আসা উচিত।’
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনন্য। তাদের (রোহিঙ্গা) আশ্রয় দিয়েছে, তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে একটা দ্বীপে পূনর্বাসন করছে। কিন্তু এটি দীর্ঘস্থায়ী কোনো সমাধান নয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বিষয়টি নিয়ে অবগত আছেন জানিয়ে জন কেরি বলেন, ‘আমি মনে করি তিনি নিজে তার প্রশাসনিক কাঠামো থেকে মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখবে। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেও দেশটির ওপর চাপ প্রয়োগ করবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে জলবায়ুবিষয়ক ‘ক্লাইমেট লিডারস সামিট’-এ অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানাতে ঢাকা আসেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি।
আট ঘণ্টার সফরে শুক্রবার সকালে সাড়ে ১১টার ঢাকায় পৌঁছান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত ও উপদেষ্টা উপদেষ্টা জন কেরি।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে তাকে সস্ত্রীক স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন জন কেরি। সন্ধ্যায় তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা করে করোনাকালে অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন বাংলাদেশকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তার প্রেক্ষিতে ২৩ ও ২৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ‘ক্লাইমেট লিডারস সামিট’ নামে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলনটি ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হবে। এতে যোগ দিতে ৪০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন জো বাইডেন।