অপহরণ করে দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে র্যাবের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার হাতিরঝিল থানা পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করে।
অপহরণের শিকার এক ব্যক্তির ভাইয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে তামজিদ হোসেন নামে একজন হাতিরঝিল এলাকা থেকে উত্তরা যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন। বেলা ১২টার দিকে অজ্ঞাতনামা একজন ব্যক্তি তামজিদের ভাই রাইয়ানা হেসেনকে ফোন করে নিজেকে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দেন। র্যাব পরিচয়দানকারী ব্যক্তি জানান, তামজিদ হোসেন তাদের হেফাজতে রয়েছে। থানা পুলিশ বা ডিবি পুলিশকে জানালে তামজিদকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে।
কাউকে না জানানোর কথা বলে র্যাবের এই কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ব্যক্তি ফোনের লাইন কেটে দেন। এজাহারে মামলার বাদী রাইয়ানা হোসেন বলেন, ‘পরবর্তীতে আমি অনেকবার তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি বারবার আমার ফোন কেটে দেয়। দুপুর অনুমান দেড়টার দিকে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি মোবাইল ফোনে আমাকে জানায়, আমার বড় ভাইকে র্যাব অফিসে সিনিয়র অফিসাররা জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তার নামে অস্ত্র ও মাদক মামলা হবে।’
অপহরণ করে দুই কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবির বিষয়ে মামলার এজাহারে রাইয়ানা হোসেন লিখেছেন, ‘আমার বড় ভাইকে র্যাবের কোন অফিসে, কোন সিনিয়র অফিসার জিজ্ঞাসাবাদ করছে জানতে চাইলে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি জানায়, এই মুহুর্তে আপনার ভাই র্যাবের কোন অফিসে আছে তা বলা যাবে না। তাকে ক্রস ফায়ারও দেয়া হতে পারে। যদি আপনার ভাইকে বাচাঁতে চান, তাহলে দুই কোটি টাকা রেডি করেন।
‘এর কিছুক্ষণ পর র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি মোবাইল ফোনে আমার ভাইকে তাদের সহযোগিদের দ্বারা মারধরের শব্দ শোনায় এবং আমার ভাইকে মোবাইল ফোন দিলে আমার ভাই কাঁদতে কাঁদত জানায়, তাকে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে বেদম মারধর করছে। আমার ভাই কাঁদতে কাঁদতে বাঁচার আকুতি জানায়।’
রাইয়ানা এজাহারে উল্লেখ করেছেনে, ‘পরবর্তীতে উক্ত নম্বর থেকে আরও অজ্ঞাত ২-৩ জন ফোন করে টাকা যোগাড় করতে পেরেছি কি না আমার কাছে জানতে চায়। আমি তাদেরকে বলি, আমরা গরীব মানুষ। এত টাকা কোথায় পাব? এক পর্যায়ে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি ১৫ লাখ টাকা দাবি করে। আমাদের কাছে কোন টাকা নেই জানালে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকতা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি নগদ ১২ লক্ষ টাকা নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্ক মার্কেটে যেতে বলে। থানা পুলিশ বা ডিবি পুলিশকে জানালে আমার ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়।
‘বেলা অনুমান সাড়ে তিনটার সময় আমার নম্বরে আমার ভাইয়ের ব্যবহৃত নম্বর থেকে কল করে আমার সাথে আমার ভাইকে কথা বলিয়ে দেয়। আমার ভাই তখন তাকে খুব মারধর করছে বলে কান্না জড়িত কণ্ঠে তাদের দাবিকৃত টাকা দিয়ে দিতে বলে। আমরা তখন তার অবস্থান জানতে চাইলে সে পুনরায় জানায় হাত পা চোখ বাধা সে কোথায় আছে বলতে পারবে না। আমার মনে হচ্ছে অজ্ঞাতনামা অপহরণকারীরা আমার বড় ভাইকে অপহরণ করে মুক্তপন হিসাবে দুই কোটি টাকা আদায়ের জন্য অজ্ঞাত স্থানে আটকিয়ে রেখেছে।’
চারজনকে পুলিশ আটকের পর র্যাবের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে র্যাবের লিগেল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘থানা পুলিশ গ্রেপ্তার চারজনকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। আমরা তাদের পরিচয় ও সম্পৃক্ততা যাচাই বাচাই করছি। সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’