রিসোর্টের নারী জান্নাত আরা ঝর্ণার তার দ্বিতীয় স্ত্রী নন- এটা প্রমাণে ‘আল্লাহর গজবের’ চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন মামুনুল হক।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব বলেছেন, তিনি মিথ্যা বললে তার ওপর ‘আল্লাহর গজব’ পড়বে। যারা তার সমালোচনা করছেন তাদেরও একই চ্যালেঞ্জ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মামুনুলের দাবি, ইসলামি বিধান অনুযায়ী এই চ্যালেঞ্জ সবচেয়ে মারাত্মক। আর তিনি আত্মবিশ্বাসী বলেই এই সাহস দেখাতে পেরেছেন।
অবশ্য মামুনুল এও বলেন যে, অসাবধানতার কারণে তিনি ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
গত শনিবারের রিসোর্টকাণ্ডের পর বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক পেজে লাইভে এসে এমন কথা বললেন তিনি।
মামুনুল বলেন, ‘আমি নিজের বিবেকের কাছে, নিজের কাছে এবং আলিমুল গায়েব, সর্বজ্ঞানী আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে স্পষ্টভাবে নিষ্কলুষ। যে ধরনের অভিযোগ দিয়ে আমার চরিত্রকে হরণ করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে, সে বিষয়ে আমি নিরপরাধ এবং এই ধরনের কোনো চারিত্রিক কোনো কালিমা আমার উপর নেই। এই বিষয়ে আমি এতটাই নিজের ওপর কনফিডেন্ট।’
তিনি বলেন, ‘সেই জায়গাটা থেকেই আমি মুবাহিলা করার মতো সৎ সাহস আমি দেখিয়েছি।’
‘মুবাহিলা’র ব্যাখ্যা করে হেফাজত নেতা বলেন, ‘সবাই কথাটা বুঝতে না পারলেও যাদের আল্লাহর কোরআন সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে, তারা জানেন মুবাহিলা বিষয়টা কেমন।
‘ইসলামের আলোকে কোরআনের আলোকে কোনো একটি বিষয় যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে অমীমাংসিত হয়ে যায়, বিতর্কে আর যখন কোনো মীমাংসার সুযোগ না থাকে, কোরআন বর্ণিত সর্বশেষ সমাধানের পথটাই হলো মুবাহিলার পথ।’
তিনি বলেন, ‘সেই নারীর সঙ্গে দুই বছর পূর্বের বিবাহবন্ধন যদি শরিয়তসম্মতভাবে সম্পাদিত না হয়ে থাকে, জান্নাত আরা ঝর্ণা আমার দ্বিতীয়া স্ত্রী- এই বিষয়ে যদি আমি মিথ্যাবাদী হয়ে থাকি, তাহলে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি, আমার উপর গজব নাজিল হউক।
‘যদি কেউ আমার এই কথাকে অস্বীকার করতে চায়, যদি কেউ মুমিনের সন্তান ঈমানদার মুসলিম যদি হয়ে থাকে, তাহলে তাকে আমার পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ থাকল, আপনিও এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন, আপনিও বলুন, আপনি যদি আমার প্রতি মিথ্যে অপবাদকারী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার উপর আল্লাহর গজব নাজিল হউক। দেখি, এই ধরনের সৎ সাহস কোনো মায়ের সন্তান রাখেন কি না।’
নারায়ণঞ্জের রয়্যাল রিসোর্টে এই নারী নিয়ে অবরুদ্ধ হওয়ার পর তাকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করেছেন মামুনুল হক‘অসাবধানতার কারণে ক্ষতির মুখে’
ফেসবুক লাইভে এসে হেফাজত নেতা এও বলেন যে, তার অসাবধানতা ছিল। তিনি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত অসাবধানতার কারণে যে ত্রুটি বিচ্যুতি হয়েছে, যে ত্রুটির কারণে, আমার অসাবধানতার কারণে এবং যথাযথভাবে আমি পদক্ষেপ গ্রহণ না করার কারণে আমি ব্যক্তিগতভাবে যে ক্ষতির সম্মুখীন হযেছি, সেজন্য আমি নিজেই মর্মাহত।’
মামুনুল জানান, তিনি নিরাপদ ভেবে রিসোর্টে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে যে এমন ঘটনা ঘটতে পারে, সেটি ধারণা করতে পারেননি।
হেফাজত নেতা বলেন, ‘রয়্যাল রিসোর্ট অত্যন্ত নিরাপদ জায়গা বলে আমার ধারণা ছিল। কিন্তু সেদিনের ঘটনায় আমি বিস্ময়ে বিস্মিত হয়ে পড়েছি। যে এই ধরনের একটি যেখানে বিদেশিরা অবস্থান করে থাকে, পর্যটকদের জন্য সেখানে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু সেই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাকে যেভাবে ভঙ্গ করে, ধ্বংস করে দিয়ে যেভাবে আমার অনুমতি ছাড়া জোরপূর্বক আমার একান্ত কক্ষে প্রবেশ করা হয়েছে সেটি দেশবাসী তাদের প্রচারিত লাইভ ভিডিও ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও থেকে আপনার দেখেছেন।’
হেফাজত নেতা বলেন, ‘আমি অবশ্যই অকপটে স্বীকার করছি, এভাবে অসাবধানতা এবং নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে স্ত্রীকে সেখানে ঘুরতে যাওয়া বা সেখানে অবস্থান করাটা আমার জন্য সেই পরিস্থিতে সমীচীন ছিল না।
‘আসলে আমি এতটা আশঙ্কা করিনি যে আমাদের বাংলাদেশ এই পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, সন্ত্রাসীরা এমন একটি নিরাপদ জায়গায়ও হামলা করতে পারে।’
রয়ে গেছে বহু প্রশ্ন
গত শনিবার মামুনুল জান্নাত আরা ঝর্ণাকে আমিনা তাইয়্যেবা পরিচয় দিয়ে সোনারগাঁওয়ের রয়্যাল রিসোর্টে কক্ষ বুকিং দিয়েছিলেন। তবে আমিনা তার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর নাম।
পরে অবরুদ্ধ হয়ে স্থানীয়দের জেরার মুখেও সঙ্গীনিকে দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে বলেন, তার নাম তাইয়্যেবা। দাবি করেন, তার শ্বশুরের নাম জাহিদুল ইসলাম, বাড়ি খুলনায়।
যদিও পরে জানা যায় সঙ্গীনির নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা, বাবার নাম অলিয়র রহমান, বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়।
ফেসবুক লাইভে এসে মামুনুল দাবি করেন, তিনি প্রশ্নবানে ‘ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে’ এসব কথা বলেছেন। অবশ্য তার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর নাম কেন রিসোর্টের নিবন্ধন বইয়ে লিখেছেন, তার কোনো ব্যাখ্যা তিনি দেননি।
ঝর্ণাকে বিয়ে করার বিষয়ে মামুনুলের দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা কারণে। ফেসবুক ও গণমাধ্যমে একাধিক ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে।
মামুনুলের ভক্তরা দাবি করে আসছেন এসব ফোনালাপ বানোয়াট। তবে তিনি এগুলোর সত্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলেননি। বলেছেন, তাদের ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁসে ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার লংঘন হয়েছে।
ওই রাতেই একটি ফোনালাপ ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। এটা প্রতীয়মান হয় যে সেটি মামুনুল ও তার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর মধ্যে ছিল সেটি।
সেখানে তিনি বলেন, সেই নারী তার পরিচিত শহীদুল ইসলামের স্ত্রী। ঘটনার কারণে চাপে পড়ে তাকে স্ত্রী পরিচয় দিতে বাধ্য হয়েছেন।
পরে আরেকটি কথোপকথন ফাঁস হয়, যা মামুনুলের সঙ্গে তার রিসোর্টের সঙ্গীনির মধ্যকার বলে প্রতীয়মান হয়। সেখানে সেই নারী জানান, তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তার মায়ের একটি বন্ধ মোবাইল নম্বর দিয়েছেন। আর অন্য একজন যখন তাকে কোথায় বিয়ে হয়েছে জিজ্ঞেস করেছে, তখন তিনি বলেছেন, এটা জানেন না। মামুনুলের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।
আরও একটি কথোপকথনে বোঝা যায় মামুনুলের বোন কথা বলেছেন হেফাজত নেতার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর সঙ্গে। তিনি তাকে বুঝিয়েছেন, কেউ যদি তাকে ফোন করে, তাহলে তিনি যেন বলেন, তিনি বিয়ের অনুমতি দিয়েছেন এবং তার শাশুড়ি এই বিয়ের আয়োজন করেছেন।
তবে বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে এসে দাবি করেন, ফাঁস হওয়া ফোনালাপেই প্রমাণ হয়েছে, ঝর্ণার সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে।
তিনি উল্টো চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘এখানে বলতেই হয়, প্রশ্ন করতে মনে চায়, এত এত ফোনালাপ যে আপনারা ফাঁস করলেন, কোনো একটি ফোনালাপ থেকে আপনারা কি এটা প্রমাণ করতে পেরেছেন জান্নাত আরা ঝর্ণা অন্যের বিবাহিতা স্ত্রী? অথবা এ কথা কি আপনারা প্রমাণ করতে পেরেছেন সে আমার বিবাহিতা স্ত্রী নন।’
নিজের বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণে যুক্তির পথে আর না হেঁটে ‘আল্লাহর গজবের‘ চ্যালেঞ্জ দেন।