নারায়ণগঞ্জের রয়্যাল রিসোর্টে নারী নিয়ে অবরুদ্ধ হওয়ার পর তার নাম, বাবার নাম ও ঠিকানা নিয়ে ভুল তথ্য দেয়ার পাঁচ দিনের মাথায় মামুনুল বলেছেন, তিনি ‘ভীতসন্ত্রস্ত’ হয়ে সেই নাম বলেছিলেন।
অবরুদ্ধ হওয়ার আগেই রিসোর্টে যাওয়ার পর নিবন্ধন বইয়ে কেন সঙ্গীনির নাম গোপন করে তার প্রকৃত স্ত্রীর নাম লিখেছেন, সে ব্যাখ্যা অবশ্য তিনি দেননি।
হেফাজত নেতা অবশ্য এও বলেছেন, সেদিন তিনি বিরূপ পরিবেশেও সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছেন।
বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে এসে গত শনিবারের রিসোর্টকাণ্ডের পর উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে আধা ঘণ্টারও বেশি কথা বলেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব।
গত শনিবার রিসোর্টটিতে নারী নিয়ে অবরুদ্ধ হওয়ার পর স্থানীয়দের প্রশ্নবানে জর্জরিত হওয়ার পর মামুনুল একের পর এক অসত্য তথ্য দিতে থাকেন।
সঙ্গীনিকে দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে মামুনুল দাবি করেন, তার নাম আমিনা তাইয়্যেবা, তার শ্বশুরের নাম জাহিদুল ইসলাম, বাড়ি খুলনায়।
পরে সেই নারীর একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়, যেখানে তিনি নিজের নাম বলেছেন জান্নাত আরা ঝর্ণা, বাবার নাম অলিয়র রহমান, বাড়ি একবার বলেছেন ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানায়, একবার বলেছেন আলফাডাঙ্গায়।
মামুনুল সেই সব বিভ্রান্তির সবগুলোর জবাব না দিয়ে কেবল তার সঙ্গীনিকে আমিনা তাইয়্যেবা নামে পরিচয় দেয়ার কারণ বলেন।
তিনি বলেন, ‘অনেকগুলো বিষয় নিয়েই বিভ্রান্তির জাল তৈরি করা হয়েছে, নামের বিভ্রাট তৈরি হয়েছে। আমি কেন আমিনা তাইয়্যেবা নাম লেখালাম, কেন আমিনা তাইয়্যেরা বললাম, কেন জান্নাত আরা ঝর্ণা নাম বলল এই সকল বিষয় নিয়ে অনেক অনেক কথা কথা অনেক অনেক প্রচারণা।
‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যখন এভাবে আমার ওপর আক্রমণ করে আমার ওপর চড়াও হয়ে সন্ত্রাসী দল আমার জীবন হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে প্রশ্নবাণে আমাকে জর্জরিত করছিল, আমি তাদের প্রশ্নের মুখে বলছিলাম, আমি আপনাদেরকে কেন বলব। এর পরেও তাদের মারমুখী আচরণে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আমি অনেক কিছুই আমাকে তখন বলতে হয়েছে।’
তবে মামুনুল কেবল স্থানীয়দের প্রশ্নের মুখে সঙ্গীনির নাম ভুল বলেননি। রিসোর্টের নিবন্ধন বইয়েও তার নাম লিখেছেন আমিনা তাইয়্যেবা। পরে জানা যায়, এটি তার চান সন্তানের জননী স্ত্রীর নাম, যিনি রিসোর্ট কাণ্ডের পর সন্তানদেরকে নিয়ে মামুনুলের মোহাম্মদপুরের বাড়ি ছেড়ে গিয়ে আর ফেরেননি।
ফেসবুক লাইভে এই বিষয়টি নিয়ে একটি কথাও বলেননি তিনি।
রিসোর্টে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ার বিষয়ে মামুনুল বলেন, ‘আমি তাদেরকে বলেছিলাম, আপনাদের কাছে কোনো সঠিক, কোনো পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেব না। যদি দিতেই হয় তাহলে আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছেই দেব।’
‘এর পরে যখন এক পর্যায়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসেছেন, আমার সাথে আলাপচারিতায় বসেছেন, তখন আমি পুলিশকে যথাযথ সকল তথ্য দিয়েছি। আমার প্রথম স্ত্রীর নাম কী, সেটাও বলেছি, দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম কী সেটাও বলেছি এবং আমার প্রদত্ত আইডি কার্ডের তথ্যসূত্র ধরেই এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে প্রদত্ত স্ত্রীর নাম থেকেই সেই ওখানে আমিনা তাইয়্যেবা নামটি আলোচনায় এসেছে।’
ঝর্ণার সেই ভিডিও কোন অধিকারে ফেসবুকে
মামুনুল সেদিন সঙ্গীনির নাম, ঠিকানা ও বাবার পরিচয় নিয়ে যে ভুল তথ্য দিয়েছেন, সেটি অসত্য প্রমাণ হয়েছে যে ভিডিওতে, সেটি কীভাবে ফেসবুকে এল, লাইভে এসে সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
হেফাজত নেতা বলেন, ‘আমার অনুমতি ছাড়া তার স্টেটমেন্ট ও তার যে বক্তব্য তারা ধারণ করেছে, সেটিও আমার আরেকটি অভিযোগ। সে বক্তব্য ধারণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নারী কর্মকর্তাগণ। তারা কার অনুমতি নিয়ে সেই ভিডিওকে জনসম্মুখে প্রচার করেছে।
‘আমার পর্দানশীল স্ত্রীর পর্দা তারা লঙ্ঘন করেছে এবং তাকে তার মুখ উন্মোচন করে দেশের সামনে মানুষের সামনে তার পর্দার বিধান লঙ্ঘন করে যে অধিকার তারা ক্ষুণ্ন করেছে, এটির জন্য আমি জনতার আদালতে বিচার দায়ের করলাম এবং আমি আইনানুগভাবেও এর বিহিত চাইব।’
স্ববিরোধী বক্তব্য
মামুনুল একবার ভয় পাওয়ার দাবি করলেও পরে আবার নিজের ‘সাহসের’ কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমার নৈতিক শক্তি রয়েছে, আমার নৈতিক জোর রয়েছে। যার কারণে উপস্থিত, আমার ওপর চড়াও হওয়া, আক্রমণ করে এমনকি আমার প্রাণ কেড়ে নেয়ার মতো, এমনকি আমাকে হত্যা করার মতো ঔদ্ধত্য নিয়ে মাস্তানবাহিনী সেদিন রয়্যাল রিসোর্টে আমার ওপর হামলা চালিয়েছিল। আমি সেখানেও পিছপা হইনি, আমি রুখে দাঁড়িয়েছিলাম এবং স্পষ্ট ভাষায় জোর গলায় তাদের প্রতিটি অন্যায় কথার প্রতিবাদ আমি জানিয়েছি।
- আরও পড়ুন: ‘সে শহীদুল ইসলাম ভাইয়ের ওয়াইফ, বুঝছ?’
‘তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মানুষ একা হওয়ার কারণে অনেকগুলো সন্ত্রাসীকে মোকাবিলা করতে পারিনি। কিন্তু আমি এতটুকু দমে যাইনি এবং আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, কোনো হুমকি ধমকির মাধ্যমে আমার নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করা যাবে না।’