রাষ্ট্রবিরোধী উসকানিমূলক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ‘শিশুবক্তা’ হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীকে নেত্রকোণা থেকে আটকের পর তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাব মামলাটিতে বেশ কয়েকটি অভিযোগ এনেছে। নিউজবাংলার কাছে এসেছে মামলার এজাহারের কপি।
সেখানে রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে যে প্রধান অভিযোগ তা হলো, তিনি বিভিন্ন সময়ে দেশ ও সমাজের জন্য উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলাসহ জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছেন।
তিনি বাংলাদেশের স্বার্থপরিপন্থি বিভিন্ন অপতৎপরতায় লিপ্ত। ধর্মীয় অর্থাৎ কোরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা দেয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উসকানি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে উদ্বুদ্ধ করেন।
তিনি তার ওয়াজে প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রের প্রতি শত্রুতামূলক মনোভাব ও সরকারের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টির জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য প্রদান করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে এজাহারে।
মামলায় তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ হিসেবে গত ১০ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকার একটি ওয়াজের বক্তব্যকে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মানি না রাষ্ট্রপতি, আমি কচুর প্রধানমন্ত্রী মানি না। কিসের প্রশাসনের অর্ডার? আমি কোনো অর্ডার মানি না। আমার সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী নাই, রাষ্ট্রপতি নাই, এমপি নাই। আমি মানি না প্রধানমন্ত্রী, মানি না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আমাকে রিমান্ডে নিবা? জেলে নিবা? ফাঁসি দিবা তাই তো?’
এজাহারে রফিকুল ইসলাম আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
রফিকুলের এসব ধারাবাহিক উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে তার অনুসারীরা ২৬ মার্চ ও পরবর্তী সময়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা চালায়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সম্পদের ক্ষতি করে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
এসব অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ২৫/২৮/৩১ ধারায় রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলাটি হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকার গাছা থানায় বৃহস্পতিবার সকালে রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন র্যাব-১-এর ডিএডি মো. আব্দুল খালেক।
মামলার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন র্যারেব গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খায়রুল ইসলাম ও গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসমাঈল হোসেন।
মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে গাছা থানার উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) আবদুল্লাহ ইবনে সাঈকে।
তবে মামলাটি নিজেরা তদন্তের জন্য এরই মধ্যে র্যাবের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন খায়রুল ইসলাম।
মামলায় জব্দ তালিকায় আটকের সময় রফিকুলের তিনটি মোবাইল ফোন দেখানো হয়েছে।
গাজীপুর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরিফুল ইসলামের আদালতে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে তোলা হলে শুনানি শেষে বিচারক রফিকুলকে জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর দুপুরে তাকে জেলা কারাগারে নেয়া হয়েছে।