নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে সাবিত আল হাসান নামে যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে ৩৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তার মতে, এ আশঙ্কার কারণ সেতুগুলোর নকশা।
বুধবার সকালে সচিবালয়ে নৌ নিরাপত্তা সড়কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি। খালিদ মাহমুদের মতে, শীতলক্ষ্যা নদীতে থাকা সেতুর নকশার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
গত রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের লঞ্চঘাট থেকে মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এম ভি সাবিত আল হাসান নামের যাত্রীবাহী লঞ্চটি। সোয়া ৬ টার দিকে শীতলক্ষ্যা নদীতে সৈয়দপুর কয়লাঘাট এলাকায় পৌঁছলে এসকে-৩ নামে লাইটার জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে যায়।
নৌযানটিতে ৫০ জনের বেশি যাত্রী ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে ২০ জন সাঁতরে তীরে উঠেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। ডুবে যাওয়ার ১৮ ঘণ্টা পর লঞ্চটি উদ্ধার করা হয়। পরে উদ্ধার করা হয় ৩৪টি মরদেহ।
দুর্ঘটনাস্থলের কাছের সেতুটির নকশা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, গতকালকে আমি ছবিটি দেখেছি। আমি সেতুর যে ছবিটি দেখেছি…
‘নদীতো এমনিতেই আমাদের ছোট হয়ে আসছে। বিভিন্ন কারণে সেখানে আরও বেশি ছোট করে দেয়ার ক্ষেত্রে এই সেতুর পিলার দুটি স্থাপন করা হয়েছে। পিলারটা অনেকটা দৃষ্টির প্রতিবন্ধকতা হয়ে থাকতে পারে। এটা আমি জানি না, তদন্তে হয়তো বের হয়ে আসবে। সেখানে পাশাপাশি পিলার দুটো থাকার কারণে…।’
সেতুর নকশার কারণে ভবিষ্যতে এ রকম আরও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে ধারণা মন্ত্রীর। বলেন, ‘আমার আশঙ্কা এটা, মহান রাব্বুল আল আমিনের কাছে প্রার্থনা করব, যেন এটা না হয়। কিন্তু আমার আশঙ্কা ভবিষ্যতে হয়তো এখানে আমাদের আরও দুর্ঘটনার মুখোমুখি হতে পারে, শুধু এই নকশার কারণে।
‘আমরা সেতু বিভাগের সঙ্গে কথা বলব, যে এটার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় কি না। তবে আমাদের পক্ষ থেকে আমরা খুবই পরিষ্কার আছি। মাত্র ১৩ ঘণ্টার মধ্যে আপনারা দেখেন আমরা কিন্তু একটা সাকসেসফুল অপারেশন করেছি।’
শুধু শীতলক্ষ্যাতেই নয় রাজধানীর চারপাশের নৌরুটে এ ধরনের অন্তত ১৬ থেকে ১৭টি সেতু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে বলে জানান নৌ প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ঢাকার চারপাশে যে বৃত্তাকার নৌপথ সেটার ব্যাপারে কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কাজ হচ্ছে। এখানে ইতোমধ্যে অনেকগুলো প্রায় ১৬ থেকে ১৭টি সেতু চিহ্নিত করা হয়েছে।
‘শুধু এটিই নয় গোমতি দিয়ে পণ্য পরিবহন করে আমরা ত্রিপুরায় যখন আমরা নিয়ে গেলাম সেখানেও আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। আমরা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে কথা বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীও আমাদের আশ্বস্ত করেছেন এই নৌপথগুলোর যেখানে যেখানে এ ধরনের সেতুগুলো বাধা হিসেবে আছে সেগুলো ভবিষ্যতে সরিয়ে এগুলো যেন নৌপথে যেন বাধা না হয়ে দাঁড়ায় সে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার। কিন্তু এটাতো রাতারাতি সম্ভব নয়। আমরা ধীরে ধীরে এগুলো করব। আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে কিন্তু আমরা থেমে যাব না।’
এর আগেও নৌদুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি- এমন প্রশ্নের উত্তের নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘এটা অবশ্যই দুর্ভাগ্যজনক।’