নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্টে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীসহ হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হককে অবরুদ্ধের জেরে সেখানে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগে সংগঠনটির এক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মো. মোস্তফা নামে ৪০ বছর বয়সী এই হেফাজত নেতাকে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সোনারগাঁও উপজেলার বাংলাবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার পৌনে ছয়টার দিকে নিউজবাংলাকে তথ্যটি নিশ্চিত করেন সোনারগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত মোস্তফা তিনটি মামলার আসামি। দুটি নাশকতার মামলা, অপরটি সাংবাদিকদের হামলার মামলা। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
পুলিশ জানায়, মোস্তফা হেফাজতের এক নেতা। তবে তার পদ জানা যায়নি।
গত শনিবার মামুনুল হক এক নারীকে নিয়ে সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে গিয়ে অবরুদ্ধ হন। সে সময় স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা ফেসবুকে লাইভ করলে তোলপাড় হয়।
মামুনুল সে সময় যেসব তথ্য দিয়েছেন, পরে তার বেশির ভাগের সত্যতা মেলেনি।
স্থানীয় লোকজনের জেরার মুখে সঙ্গীনিকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে বলেন তার নাম আমেনা তাইয়্যেবা। দাবি করেন, তার শ্বশুরের নাম জাহিদুল ইসলাম, শ্বশুরবাড়ি খুলনায়।
তবে সেই নারী পরে জানান তার নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা, বাবার নাম অলিয়র রহমান, গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়।
এই ঘটনার পরে ফাঁস হওয়া বিভিন্ন ফোনালাপে মামুনুলের বিয়ের দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার চার সন্তানের জননী স্ত্রী ওই দিন সন্ধ্যায় ছেলেদের নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসা ছেড়ে যান। তিনি এখনও ফেরেননি।
মামুনুলকে ছিনিয়ে নেয়ার আগে ও পরে রিসোর্ট, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান হেফাজত কর্মীরা
এসব ঘটনায় মামুনুল যখন বেকায়দায় তখন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা মসজিদে মাইকিং করে জড়ো হয়ে একযোগে হামলা করেন রিসোর্টে। স্থাপনাটিতে ব্যাপক ভাঙচুর করে মামুনুলকে ছিনিয়ে নেয়ার পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে ব্যাপক গাড়ি ভাঙচুরও করেন।
এখানেই থেমে থাকেননি তারা। ক্ষমতাসীন দল ও তার সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় কার্যালয়েও হামলা হয়। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয় সেগুলো। হামলা হয় স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বাড়িঘরে।
সেদিন হেফাজতের এই সন্ত্রাসী মনোভাব দেখা গেছে সুনামগঞ্জের ছাতকে ও মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানেও। সেখানেও ক্ষমতাসীন দলের কার্ালয় আক্রান্ত হয়েছে।
পরে জাতীয় সংসদে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তিনি হেফাজতকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এসব ঘটনা ঘটতে থাকলে যদি তাদের দলের লোকজন কওমি মাদ্রাসায় আক্রমণ করে, তখন পরিস্থিতি তারা সামলাতে পারবে কি না।
এর আগেও হেফাজত কর্মীদের দ্বারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বাসভবন ও কার্যালয় আক্রান্ত হয়েছে। আর ক্ষমতাসীন দলের নেতারা হেফাজতের প্রতি সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, হেফাজতকে আর ছাড় দেয়া হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও বলেছেন, যারা অপকর্ম করেছে শাস্তি পেতে হবে সবাইকে।
রিসোর্টে হামলা করে মামুনুলকে ছিনিয়ে নেয়ার পর হেফাজত কর্মীরা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ রনির বাসভবনে হামলা করেন এই দশা করে
বুধবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘হেফাজত ইসলাম নামে একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দেশের বিদ্যমান স্বস্তি এবং শান্তি বিনষ্টে দেশের বিভিন্ন স্থানে যে অব্যাহত তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে, তা সহনশীলতার সকল মাত্রা অতিক্রম করেছে।’
সোনারগাঁওয়ে হেফাজতের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা পরিদর্শন শেষে বুধবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, হেফাজত ধর্মের নামে অধর্মের কাজ করেছে।
তিনি বলেন, ‘আঘাত এসেছে, প্রতিঘাত করা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ধর্মের নামে হেফাজত অধর্মের কাজ করছে। রিসোর্টে নারী নিয়ে ধরা পড়েছে হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক।’