সপ্তাহব্যপী চলমান লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে স্বাভাবিক রয়েছে রাজধানীর পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা। চাহিদা অনুপাতে মজুত ও যোগান স্বাভাবিক রয়েছে কাঁচা বাজারে। বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
করোনা পরিস্থিতিতে ঘোষিত লকডাউন চলাকালীন সময়ে নিত্যপণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ, পাইকারি ও খুচরা বিক্রিতে কোনো বিধিনিষেধ রাখেনি সরকার।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারের সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সবজিসহ নিত্যপণ্য বোঝাই ট্রাক আসছে আগের মতোই। এতে পাইকারি বাজারে দাম স্থির রয়েছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে আগের মতোই পাইকারিতে প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) শসা ১১০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিংগা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, বরবটি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, শিম ১০০ থেকে ১১০ টাকা, ঢেঁড়স ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা, টমেটো ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দাম বেড়েছে বেগুনের। লম্বা বেগুনের পাল্লা আগের মতোই ১১০ থেকে ১২০ টাকায় থাকলেও গোল বেগুনের পাল্লায় ২০ টাকা বেড়ে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি পাল্লা করলা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় স্থির থাকলেও উচ্ছের দাম ১০ টাকা বেড়ে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
মরিচ বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকায়। কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. শাহাবুদ্দিন জানান, করলা ও উচ্ছে একই রকম দাম থাকে। যোগান কম বেশি হলে পাইকরী বাজার প্রতিদিন সামান্য উঠানামা করে।
টমেটোর পাইকারী বিক্রেতা আজগর মিয়া জানান, বাজারে দুই ধরনের টমেটো পাওয়া যায় একটি কুমিল্লার গোল টমেটো, অন্যটি উত্তরবঙ্গের লম্বা টমেটা। দাম প্রায় একই হলেও কেজিতে ১-২ টাকা পার্থক্য থাকে। মঙ্গলবার প্রতি পাল্লা গোল টমেটো দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা এবং লম্বা টমেটো ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখনো দাম ঠিক আছে। লকডাউন লম্বা হলে দাম বাড়তে পারে। তাছাড়া সামনে রোজা। তাই পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। লকডাউনের মধ্যেও যাতে সময়মতো পণ্যবাহী ট্রাক বাজারে আসতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। যেন সংকট তৈরি না হয়।
এদিকে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি গোল টমেটো ২৫ থেকে ২৮ টাকা, লম্বা টমেটো ৩০ থেকে ৩২ টাকা, লম্বা বেগুন ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, গোল বেগুন ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, উচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, করলা ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, বরবটি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, চিচিংগা ৩২ থেকে ৩৫ টাকা, শসা ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, পেপে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা ও ধুন্দল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, মূলা ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি মরিচ বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। খুচরা বাজারে বেশ চড়া রয়েছে মরিচ ও লেবুর দাম।
কলমি লতা বাজারের বিক্রেতা মো. মাসুম বলেন, গত দুই দিনে পাইকারি বাজারে খুব বেশি জিনিসের দাম বাড়েনি। তাই খুচরায় দাম বাড়েনি। বরং লকডাউনের আগে থেকে এখন কম দামে বিক্রি করছি। তবে প্রতিহালি ছোট লেবু ৪০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে আগের দিনের মতোই রয়েছে আলু ও পেঁয়াজের বাজার। পাইকরিতে প্রতিপাল্লা আলু ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা, ভারতীয় আমদানির পেঁয়াজ ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে। আর খুচরায় আলু ২০ থেকে ২২ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সবজি ছাড়া অন্যান্য নিত্যপণ্যের মধ্যে রসুনের কেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, আমদানি করা রসুন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া দেশি আদা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, টাকা, চিনি ৬৮ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মুগডাল ১৪০ টাকা এবং মসুর ডাল ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ভোজ্যতেলের মধ্যে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা, খোলা পাম অয়েল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা, সয়াবিনের এক লিটারের বোতল ১৪০ টাকা এবং ৫ লিটারের বোতল ৬৪০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে বাজারে সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সড়ক, নৌ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। গত সোমবার অধিদপ্তর থেকে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে আলাদা করে চিঠি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে ফ্রিজিং ওয়াগন (পণ্য পরিবহণের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগি) চালু করে বিভিন্ন জেলা থেকে পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
রোববার সারা দেশের ডিসি, ইউএনওদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত ও পরিবহণে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, তা তদারকি করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।