করোনাভাইরাস সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় লকডাউন শুরুর তৃতীয় দিন থেকেই দেশের সব মহানগরে গণপরিবহন চালুর ঘোষণা এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকবে।
লকডাউনে মহানগরে চলাচলের ভোগান্তি বিবেচনায় এনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি জানান, বুধবার থেকেই ঢাকাসহ দেশের সব সিটি করপোরেশন এলাকায় বাস চলাচল শুরু হবে। তবে কেবল দিনের বেলায় চলবে সেগুলো। আর গত ২৯ মার্চ জারি করা নির্দেশনা মেনে প্রতি দুই আসনে একজন যাত্রী বহন করতে হবে।
লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার বিকেলে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, ‘বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা চট্টগ্রামসহ সব সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন সার্ভিস চালু থাকবে। তবে বাইরের কোনো পরিবহন শহরে প্রবেশ করতে পারবে না এবং বের হতে পারবে না।’
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। এমন অবস্থায় গত ২৯ মার্চ সরকার জনসমাগম সীমিত করে ১৮ দফা নির্দেশনা দেয়। অফিসে, গণপরিবহনে যাত্রী ৫০ শতাংশ কমানোর নির্দেশনাও আসে। তবে বাসে ৫০ শতাংশ যাত্রী ছাড়া বাকি নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি বললেই চলে।
এ অবস্থায় সোমবার থেকে এক সপ্তাহের লকডাউনের নির্দেশনা দেয় সরকার। তবে বাস চলাচল ও বিপণিবিতান বন্ধ হওয়া ছাড়া লকডাউনের প্রভাব কমই দেখা গেছে।
কথা ছিল, যেসব অফিস চালু থাকবে, সেগুলোতে কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে কর্মীদের আনা নেয়ার ব্যবস্থা করবে, কিন্তু তা হয়নি। অফিস সময়ে বিপুল সংখ্যক মানুষকে ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে।
রাজধানীতে অটোরিকশা ও রিকশা চলছে। বাস না থাকার সুযোগে তারা প্রচলিত ভাড়ার হারের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভও দেখিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দোকান খুলতে দেয়ার দাবিতে মিছিল করে গাড়ি ভাঙচুর করেছেন তারা।
নির্দেশনা অনুযায়ী অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। তবে বিপুল সংখ্যক মানুষ বাইরে আসার পর লকডাউন নিয়ে ট্রল হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে।
ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে চলাচলে মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি তোলেন। বলেন, ‘লকডাউন পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও জনসাধারণের যাতায়াতে দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার গণপরিবহনে চলাচলের বিষয়টি শর্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে পুনর্বিবেচনা করে অনুমোদন দিয়েছে।’
এ ক্ষেত্রে শর্ত হিসেবে কী থাকছে, সেটি তুলে ধরে সড়ক মন্ত্রী বলেন, ‘অর্ধেক আসন খালি রেখে এবং প্রতি ট্রিপের শুরু এবং শেষে জীবাণুনাশক দিয়ে গাড়ি জীবাণুমুক্ত এবং পরিবহন সংশ্লিষ্ট ও যাত্রীদের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’
বাসে নির্ধারিত ভাড়ার বেশি কোনোভাবেই আদায় করা যাবে না- এটি আবার বলেন মন্ত্রী।
সরকার প্রতি দুই আসনে একজন যাত্রী তোলার বিধান করে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর সুযোগ দিয়েছে। তবে পরিবহন সংকটের সুযোগে যানবাহনে ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশের বেশি যাত্রী তোলা ৬০ শতাংশের চেয়ে বেশি আদায়ের অভিযোগ আছে।
কাদের বলেন, ‘কোনোভাবেই সমন্বয়কৃত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না।’