বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এই কি লকডাউনের রাত?

  •    
  • ৫ এপ্রিল, ২০২১ ২৩:২৩

সাত দিনের লকডাউনের প্রথমদিন রাজধানীর চিত্র দেখে অন্য যে কোনো একটি নিয়মিত দিন বলে মনে হয়েছে। রাস্তাঘাটে মানুষজনের উপস্থিতি ছিল অনেক। বাস চলেনি, কিন্তু সিএনজি অটোরিকশা, রিকশা এবং ব্যক্তিগত গাড়ির কারণে রাস্তাঘাট ছিল সরগরম। কোথাও কোথাও যানজটও বেধে যেতে দেখা গেছে।

অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কেউ বাড়ির বাইরে বের হতে পারবে না। এই ছিল লকডাউনে সরকার ঘোষিত ১৮ দফা নির্দেশনার একটি।

কিন্তু রাত ৯টা পর্যন্ত বাইরে সড়কে মানুষজন ও যানবাহনের উপস্থিতি দেখে বোঝার উপায় নেই রাজধানীতে লকডাউন চলছে। সড়কে কোথাও কোথাও রাত ৯টাতেও মৃদু যানজট দেখা গেছে।

রাত ৮ টার পর রাজধানীর রামপুরা, মগবাজার, হাতিরঝিল, তেজগাঁও এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মূল সড়কের পাশে ফার্মেসি ছাড়া সব দোকান বন্ধ থাকলেও গলির ভেতরের অধিকাংশ দোকান খোলা। দোকানগুলো কেন্দ্র করে রয়েছে মানুষের ভিড়।

কেউ টুকটাক কেনাকাটা করছে, কেউবা চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছে। রামপুরা হাজিপাড়া পেট্রোল পাম্পের বিপরীত পাশের গলির মুখেই চারজন তরুণকে গল্প করতে দেখা যায়।

সন্ধ্যা ৬টার পর জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়া নিষেধ, কেন বের হয়েছেন? জানতে চাইলে রুমেল নামে একজন বলেন, ‘আমাদের বাসা এখানেই, একটু কাজে বের হয়েছি।’

লকডাউনেও বদলায়নি মহল্লার চিত্র। ছবি: নিউজবাংলা

তবে কী সেই কাজ জটলার কেউ জানাতে পারেননি। ‘এখনই চলে যাচ্ছি’ বলে গলির ভেতরের দিকে চলে যান তারা।

হাতিরঝিল সংলগ্ন মধ্য কুনিপাড়ার গলিপথ পুরোটাজুড়ে ছিল মানুষের ভিড়। দোকানও খোলা। এই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার ভাষ্য, এখানে কোনো লকডাউন নেই, সবাই বাইরে। তাই তারাও এখনও ঘরে যাননি।

মাসুম নামে একজন বলেন, ‘ঘরে গরম, বাতাস খাইতে বাইরইছি।’

হাতিরঝিলে ‘ফুড অন ট্র্যাক’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা রাখতে দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার শাহিন বলেন, ‘আজকে কিছুটা রিস্ক নিলাম। কালকে থেকে সন্ধ্যায় বন্ধ করে দিব। আজকে কিছু খাবার রয়েছিল, আর কাস্টমারও আছে। কালকে থেকে আর খোলা রাখব না।’

হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে শুধু খাবার বিক্রির নির্দেশনা থাকলেও ফুড অন ট্রাক রেস্টুরেন্ট টেবিলে টেবিলর খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো জবাব দেননি ম্যানেজার শাহিন।

সাত দিনের লকডাউনের প্রথমদিন রাজধানীর চিত্র দেখে অন্য যে কোনো একটি নিয়মিত দিন বলে মনে হয়েছে। রাস্তাঘাটে মানুষজনের উপস্থিতি ছিল অনেক। বাস চলেনি, কিন্তু সিএনজি অটোরিকশা, রিকশা এবং ব্যক্তিগত গাড়ির কারণে রাস্তাঘাট ছিল সরগরম। কোথাও কোথাও যানজটও বেধে যেতে দেখা গেছে।

নানান কারণ দেখিয়ে রাস্তায় বের হয়েছে মানুষ: কেউ বোনের সঙ্গে দেখা করতে, কেউ বন্ধুর বাসায় যেতে। আবার কেউ কেউ বের হয়েছেন লকডাউন কেমন হচ্ছে তা দেখতে।

রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, গুলশান, বনানী, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, জিগাতলা, ধানমন্ডি, শাহবাগ এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এই লকডাউনে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও সরকারের এই নির্দেশনা মানছে না অনেকে।

সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে রাস্তায় নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরিচালিত হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সচেতনতা তৈরিতে মাস্ক বিতরণ বা আইন না মানায় জরিমানা, কোনো কিছুই মানুষকে বাইরে বের হওয়া আটকাতে পারেনি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সামনে থাকলে এক চিত্র। তারা চলে গেলে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে।

বিকেল তিনটায় জিগাইতলার পোস্ট অফিস গলিতে দেখা গেছে, জায়গায় জায়গায় জটলা করে গল্প করছে অপেক্ষাকৃত তরুণ ও যুবকেরা। ভ্রাম্যমাণ আদালতের একটি গাড়ি এই সড়ক দিয়ে আসতে দেখা যায়। গাড়ি দেখে সবাই সটকে পড়ে। গাড়ি চলে যাওয়ার পর আবার সবাই যে যার গ্রুপে যুক্ত হয়।

দিনে খোলা থাকতে দেখা গেছে রাস্তার পাশের দোকানগুলো। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস

তরুণদের একজন সাজিদ। কেন বাইরে বের হয়েছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সকাল থেকেই বাসায় ছিলাম। বোর হয়ে যাচ্ছিলাম। তাই এখন একটু সময়ের জন্য এসেছি। আমরা মাস্ক পরে কথা বলছি। স্বাস্থ্যবিধি মানছি।’

তার সঙ্গে অন্যরা গায়ে গা ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকা প্রসঙ্গে সাজিদ বলেন, ‘সব তো আর মানা যায় না।’

মহাখালী ডিওএইচএস থেকে বনানী কামাল আতাতুর্ক সড়কে বন্ধুর সঙ্গে দেখা করছে এসেছেন জামিল খান। তিনি বলেন, ‘আমি আর রেজা (জামিলের বন্ধু) দিনের বেশিরভাগ সময় একসঙ্গে কাটাই। সন্ধ্যার পর বের হওয়া যাবে না। তাই বিকেলে এসেছি। কিছু সময় কথা বলে চলে যাব।’

অহেতুক ঘোরাফেরা ঠেকাতে ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেছে র‌্যাব ও ঢাকা জেলা প্রসাশন।

শাহবাগ মোড়ে র‌্যাব-৩ এর সহায়তায় দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। প্রায় একই সময়ে শাহবাগে চেকপোস্ট বসিয়ে নিজেদের তৎপরতা জোরদার করে ট্রাফিক পুলিশ।

অকারণে ঘোরাঘুরি, মাস্ক না পরা ও মোটরসাইকেলে যাত্রী বহন করার অপরাধে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ১২ জনকে ২৫০০ টাকা জরিমানা করে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

পলাশ কুমার বসু বলেন, ‘লকডাউনে যারা বিনা কারণে বাইরে ঘোরাঘুরি করছে, তাদের সচেতন করা হচ্ছে যাতে তারা বাইরে না আসে। জরিমানা করা র‌্যাবের উদ্দেশ্য নয়। ব্যাবের উদ্দেশ্য করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।’

খাবার হোটেলগুলোতেও দেখা গেছে ক্রেতা সমাগম। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস

শাহবাগ ট্রাফিক পুলিশের চেকপোস্টে সোমবার দুপুরে একটি প্রাইভেটকার থামায় পুলিশ। চালকের আসনে থাকা ব্যক্তি জানান, জিগাতলা থেকে যাত্রাবাড়ি বোনকে দেখতে যাচ্ছেন। চেকপোস্টে দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা বোনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে, ওই ব্যক্তি কিছুক্ষণ মোবাইলের বাটন টিপে বলেন, বোনের মোবাইল ফোন বন্ধ। রাস্তায় বের হওয়ার যুক্তিযুক্ত কারণ জানাতে না পারায় ওই ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়।

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের সূত্রাপুর, কদমতলী, উত্তরা, হাজারীবাগ, রামপুরা থানা এলাকায় মাস্ক বিতরণ ও সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে পুলিশ। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ।

বাস না চললেও সড়কে যানজট

লকডাউনের প্রথম দিনে রাজধানীতে গণপরিবহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল চলছে। সরকার অ্যাপস ভিত্তিক উবার-পাঠাও চলাচল ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করে দিলেও বন্ধ হয়নি রাইড শেয়ারিং। নগরীর মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে চুক্তিতে যাত্রী পরিবহন করেছেন মোটরসাইকেল চালকেরা। অবাধ চলাচল করেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা। এছাড়া বিভিন্ন সড়কে লেগুনাও চলাচল করে।

সোমবার সকাল থেকে লকডাউন কার্যকর হওয়ার পর বেলা ১০টা নাগাদ সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কম ছিল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গাড়ির সংখ্যা।

অনেকের ধারণা ছিল, লকডাউন বাস্তবায়নে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে। কিন্তু সকাল থেকে পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনী ও ভ্রাম্যমাণ আদালত কিছুটা নমনীয় থাকায় জরুরি কাজ না থাকলে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে সড়কে বের হয়েছে কিছু মানুষ।

গাড়ির সংখ্যা বাড়ায় বিভিন্ন সিগন্যালে যানজট সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। ডিএমপি শাহবাগ জোনের (ট্রাফিক) সহকারী কমিশনার মো. নূরুননবী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে অকারণে চলাচলকারী যানবাহন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি। দুপুরের পর ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল বেড়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর