নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে সাবিত আল হাসান নামে যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে যাওয়ার ঘটনায় মোট ২৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
সর্বশেষ উদ্ধার করা হয় মানসুরা নামে সাত মাসের এক শিশুর মরদেহ। তার বাবা আনোয়ার হোসেন ও মা মাকসুদা বেগমের মরদেহ আগেই উদ্ধার করা হয়।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারিক নিউজবাংলাকে বলেন, উদ্ধার করা ২৯ জনের মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সব শেষ মানসুরার লাশ বুঝে নিয়েছে তার ১১ বছরের ভাই ও মামা।
জেলা প্রশাসনের তালিকায় নিখোঁজের নাম ছিল ৩৬ জনের। তাদের মধ্যে ২৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তালিকা অনুসারে এখনও ৭ জন নিখোঁজ রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপ পরিচালক আবদুল্লা আল আরেফিন জানান, আমাদের কয়েকজন সদস্য এখনো সেখানে উদ্ধার অভিযানে রয়েছে। আমরা নিখোঁজের তালিকা ধরে খোঁজার চেষ্টা করছি। আমরা উদ্ধার অভিযান চলমান রেখেছি। সঙ্গে নৌ পুলিশের সদস্যরাও আছে।
বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে উদ্ধার হয় শিশু মানসুরার মরদেহ। মানসুরার ভাই মো. মাহিম নিউজবাংলাকে জানায়, রোববার দুপুরে ঢাকার শনির আখরার গোবিন্দপুর এলাকার বাড়ি থেকে বাবা সবজি বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন ও মা মাকসুদা বেগম মানসুরাকে নিয়ে মুন্সিগঞ্জে তাদের নানীর বাড়িতে যাওয়ার জন্য লঞ্চে করে রওনা হন।
যাওয়ার সময় তারা বলে যান সন্ধ্যার পর ফিরে আসবেন। রাত ২ টা পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ না পেয়ে সকালে মামার সঙ্গে শীতলক্ষ্যার পারে আসে মাহিম। বেলা ১২ টার দিকে লঞ্চটি উদ্ধার করার পর সেখান থেকে উদ্ধার হয় অনেক লাশ।
সেখানে সে বাবা মায়ের মরদেহ শনাক্ত করে। কিন্তু আদরের ছোট বোনটিকে তখনো পাওয়া যায়নি। বিকেলে একটি শিশুর মৃতদেহ পাওয়া গেছে শুনে নদীর পারে ফিরে আসে মাহিম।
বোনকে শনাক্ত করার পর তাকে জড়িয়ে ধরে মাহিমের কান্নায় আশপাশের কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেরি। মাহিম আহাজারি করে বার বার বলেছে, ‘লঞ্চ আমাগো জীবন শেষ কইরা দিল।’
বোন মানসুরার মৃতদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে ভাই মাহিম। ছবি: নিউজবাংলা
মাহিমের বৃদ্ধ দাদা দিদার হোসেনও আসেন নদীর পারে। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন,‘ আমাগো স্বপ্ন শেষ। আমগো আর কেউ নাই।’
পরে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। জ্ঞান ফেরার পর ছেলে, ছেলের বউ ও নাতনি লাশ নিয়ে ফিরে যান।
তাদের মতো এমন একই পরিবারের অনেকে লঞ্চ ডুবিতে মারা গেছেন।
রোববার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে নারায়ণগঞ্জের লঞ্চঘাট থেকে মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এম ভি সাবিত আল হাসান নামের যাত্রীবাহী লঞ্চটি।
সোয়া ৬ টার দিকে শীতলক্ষ্যা নদীতে সৈয়দপুর কয়লাঘাট এলাকায় পৌঁছলে এস কে থ্রি নামে লাইটার জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চটি ডুবে যায়।
নৌযানটিতে ৫০ জনের বেশি যাত্রী ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে ২০ জন সাঁতরে তীরে উঠেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
ডুবে যাওয়ার ১৮ ঘন্টা পর লঞ্চটি উদ্ধার করা হয়। পরে এর ভেতর থেকে প্রথমে ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর ২২ জন ও পরে আরও ২জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন ৭ সদস্যের ও বিআইডব্লিউটিএ ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ নিউজবাংলাকে জানান, লাশ দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারকে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্ধার অভিযান শেষ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এসকে থ্রি নামের ওই লাইটার জাহাজটিকে আটক করতে নৌ পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (ঢাকা) মো.সালেউদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্ধার অভিযান শেষ করা হলেও ফায়ার সার্ভিস অভিযান চলমান রেখেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত নিখোঁজ ব্যক্তিদের তথ্য পাওয়া না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলবে।