রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে নেয়া সরকারি পদক্ষেপ ও ব্যবস্থাপনা সরেজমিনে দেখে মুগ্ধ হয়েছেন ঢাকার ১০ বিদেশি মিশনপ্রধান। তারা সরকারের উদ্যোগকে সুপরিকল্পিত ও কার্যকর বলেও আখ্যা দিয়েছেন।
গত শনিবার তারা পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও ত্রাণসচিব মো. মহসিনের সঙ্গে ভাসানচরে যান।
সাড়ে চার ঘণ্টার ওই সফরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ১০টি দেশ ও জোটের রাষ্ট্রদূতেরা অংশ নেন।
এর আগে বাংলাদেশ সরকারের আয়োজনে ১৭–২০ মার্চ পর্যন্ত জাতিসংঘের একটি কারিগরি প্রতিনিধিদল ভাসানচরে যায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টারে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনসে টেরিঙ্ক ছাড়াও জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান, তুরস্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূতেরা ভাসানচরে যান।
সফর সম্পর্কে ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট ডিকসন রোববার একটি গণমাধ্যমকে জানান, ভাসানচরে নেয়া সরকারের পদক্ষেপ ও নির্মাণকৌশল যথেষ্ট পরিকল্পিত ও কার্যকর। তবে আমরা আরও দুটি বিষয়ে জানতে চেয়েছি। তা হলো রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থান এবং বর্ষায় মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে। আমরা সন্তুষ্ট। তবে এখানকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে জাতিসংঘের টেকনিক্যাল টিম।
অন্যদিকে জার্মান রাষ্ট্রদূত ওই টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, ভাসানচরের সার্বিক ব্যবস্থাপনা চমৎকার। এখানে সরাসরি ঘুরে আসায় বিষয়টি আমার কাছে পরিষ্কার। আমরা সবকিছু কাছে গিয়ে দেখে এসেছি। রোহিঙ্গাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। এখন জাতিসংঘসহ বিভিন্ন ফোরামে এটা নিয়ে কথা বলা সহজ হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সেখানে কূটনৈতিকরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে সরিয়ে নেয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় জড়িত সংশ্লিষ্ট সরকারি–বেসরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।
সফরসঙ্গী এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, কূটনীতিকেরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন। এর পাশাপাশি তাঁরা সেখানে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজে যুক্ত বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও অন্যদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। সামগ্রিকভাবে প্রথম সফরের পর তাঁদের মধ্যে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়ে এক ধরনের ইতিবাচক মনোভাব দেখা গেছে।
‘প্রায় তিন ঘণ্টা সময়ের একটা বড় অংশ তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় তারা জেনেছেন, রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে এসেছে। তারা কক্সবাজারের চেয়ে সেখানে নিরাপদ রয়েছে। এ জন্য তারা তাদের আত্মীয়স্বজনকে ভাসানচরে যেতে উৎসাহিত করছে।‘
গত ১৭–২০ মার্চ পর্যন্ত জাতিসংঘের একটি কারিগরি প্রতিনিধিদল ভাসানচরে যায়। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় কর্মরত জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার বিশেষজ্ঞরা ভাসানচরে তিন দিনের ওই প্রাথমিক পরিদর্শনে যুক্ত ছিলেন। জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলটির সরকারের কাছে আগামী সপ্তাহে একটি প্রতিবেদন দেয়ার কথা রয়েছে।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে চাপ কমাতে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করেছে।
পরিবেশগত ঝুঁকি, সামগ্রিক অবকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের তাদের নিজেদের ইচ্ছায় পাঠানো হচ্ছে কি না, এ বিষয়গুলো সামনে এনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো শুরু থেকেই ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিরোধিতা করে এসেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিরোধিতার মধ্যেই বাংলাদেশ সরকার গত বছরের ৪ ডিসেম্বর কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর শুরু করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে তুরস্কের সহায়তা চায় বাংলাদেশ। ঢাকা সফরের সময় গত বছরের শেষের দিকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেবলুৎ সাবু সোলু বিভিন্ন দেশের সরকারে কাছে ভাসানচরের ছবি ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা এবং নির্মাণকৌশলের বিস্তারিত পাঠানোর পরামর্শ দেন। সেই মোতাবেক কাজ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই সফর তারই ফল।