করোনা প্রতিরোধে সরকারি বিধিনিষেধের মধ্যেও রিকশা নিরাপদ তাই বইমেলা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিকশা কিন্তু অন্যান্য যানের চাইতে অনেক নিরাপদ। কারণ খুবই কম আক্রান্ত হয়। রিকশাওয়ালা এবং প্যাসেঞ্জারের মধ্যে দূরত্ব থাকে, এজন্য সেটি কিন্তু খুব কম ঝুঁকিপূর্ণ।’
তবে নিরাপদ এই বাহন ব্যবহার করে বইমেলায় মানুষ খুব একটা যাচ্ছে না। সোমবার লকডাউেনর প্রথম দিন প্রায় ক্রেতাশূন্য ছিল বইমেলা।
বিকেল পৌনে ৩টার দিকে বইমেলায় গিয়ে দেখা যায় দর্শনার্থী হাতে গোনা। বেশির ভাগ স্টল বিক্রিই শুরু করতে পারেনি।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত সাত দিনের লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ ও জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে খোলা রয়েছে বইমেলা।
এ নিয়ে নানামহলে আলোচনা সমালোচনা চলছে। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে। উত্তরে তিনি বলেন, ‘গণপরিবহন চলছে না, কিন্তু রিকশা তো চলছে। আর রিকশার ওপরে আমাদের কোনো বিধিনিষেধ নেই।’ বইমেলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারি থাকবে বলে জানান তিনি।
‘কেউ যাতে এখানে বেড়াতে না আসে। বই কেনার উদ্দেশ্যেই আসবেন। এটাকে অন্যভাবে বা বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে বা ঘুরে বেড়ানো-এ রকম কোনো সুযোগ এখানে থাকবে না।’
বইমেলা খোলা রাখা কতটা জরুরি, এমন প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আজকে আমরা যেহেতু লকডাউন শুরু করলাম, এর ভেতর চিন্তাভাবনা করার আমাদের সুযোগ রয়ে গেছে।’
তবে সুযোগ পাওয়ার পরও জমছে না অমর একুশে গ্রন্থমেলা। সোমবার দুপুর ১২টায় মেলার গেট খুলে দেয়া হলেও বেলা ৩টা নাগাদ দেখা গেছে প্রায় দর্শনার্থীশূন্য মেলা চত্বর। বিশাল মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, হাতে গোনা অল্প কয়েকজন। যারা এসেছেন, তারা আশপাশের বাসিন্দা।
গণপরিবহন বন্ধ ও সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় মেলার তার প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন স্টল মালিকেরা।
এভাবে মেলা ক্রেতাশূন্য থাকলে বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না বলে হতাশা প্রকাশ করেন অনেক বিক্রেতা।
অগ্রদূত প্রকাশনী স্টলের বিক্রেতা নাগমা নিউজবাংলাকে বলেন, অন্য বছর বই মেলায় প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার বই বিক্রি হতো। এ বছর তার ধারে কাছেও নেই। এখন পর্যন্ত মেলায় প্রতিদিন গড়ে এক হাজার টাকা বইও বিক্রি হয়নি।
এভাবে ক্রেতাশূন্য থাকলে দিনের খরচই উঠানো কঠিন হবে বলে তিনি জানান। ‘সামনের দিনগুলোতেও বিক্রি বাড়ার কোনো সম্ভবনা দেখছি না। এভাবে চললে স্টল বন্ধই করে দিতে হবে।’
প্রহেলিকা প্রকাশনের বিক্রেতা আশিক রহমান বলেন, প্রথম দিকে কিছুটা বিক্রি হলেও এখন একেবারেই বন্ধ। মেলায় লোক না এলে বিক্রি হবে কীভাবে।
জলতরঙ্গ প্রকাশনির স্বত্বাধিকারী সোলায়মান শিপন নিউজবাংলাকে বলেন, করোনা আতঙ্কের পরও প্রথম দিকে মেলায় বেশ লোকজন হয়েছে। তবে হেফাজতের আন্দোলনের পর থেকে লোকজন একেবারেই কমে গেছে। ২৬ মার্চ প্রত্যাশা মাফিক বিক্রি হয়নি। গণপরিবহন বন্ধ করে, বাসার বাইরে যাওয়ার ওপর বিধিনিষেধ দিয়ে মেলায় ক্রেতার সমাগম প্রত্যাশা করা বোকামি ছাড়া কিছুই না।
মেলায় আসা দর্শনার্থী রাকিবুল হাসান বলেন, ‘রিকশায় করে মেলায় এসেছি। কয়েকটি বই কিনে নিয়ে লকডাউনের সময় বাসায় বসে পড়ার জন্য। ডাবল ভাড়া দিয়ে যেভাবে মেলায় এসেছি, এভাবে অনেকেই আসবেন না, এটাই স্বাভাবিক। এই গরমে মধ্য দুপুরে কে মেলায় আসবে? তবে বিকালের সময়টা আরও বাড়িয়ে দিলে হয়তো দর্শনার্থী বাড়ত।’
লকডাউনের সময় প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বইমেলা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলা একাডেমি। সে কারণে সোমবার দুপুর ১২টা থেকে মেলার শুরু হয়।
রোববারের হঠাৎ ঝড়ে মেলার তেমন কোনো ক্ষতি না হলেও কিছু কিছু স্টলের বই ভিজে গেছে। সোমবার অনেককেই রোদে বই শুকাতে দেখা গেছে।
বাংলা একাডেমির বিক্রয় উন্নয়ন অফিসার মিন্টু কুমার সূত্রধর নিউজবাংলাকে বলেন, গতকালের (রোববার) ঝড়ে তেমন বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করা হয়নি।
তিনি বলেন, ঝড় শুরু হওয়ার আগেই অনেকেই স্টল বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সে কারণে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে দুই/একটি স্টলের কিছু কিছু বই ভিজে গেছে। বাংলা একাডেমিরও কিছু বই ভিজে গেছে।
গত রোববার সন্ধ্যার ঝড়ের পর অনেকেই সোমাবার রোদে বই শুকিয়ে নেন। ছবি: নিউজবাংলা
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, অনেকেই স্টল খুলে নতুন করে বই সাজাচ্ছেন। অনেকে ভিজে যাওয়া বই রোদে শুকাচ্ছেন। দর্শানার্থী কম থাকায় বিক্রেতারা নিজেরা মিলেই গল্পগুজবে সময় পার করছেন।
এবারের গ্রন্থ মেলায় ৫৪০টি প্রকাশনী, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা অংশ নিচ্ছে। মোট স্টলের সংখ্যা ৮৩৪। তার মধ্যে ৩৩টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে।