রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে নিজের স্ত্রী ও শিশু পুত্রকে হত্যার অভিযোগে মামলায় দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন একমাত্র আসামি মো. রুবেল।
৪ এপ্রিল রোববার বিকেল চারটার দিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ সিরাজ উদ্দিন রুবেলকে আদালতে হাজির করেন। ঢাকার মুখ্যমহানগর আদালতের হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। আদালতে রুবেলের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না।
শনিবার রুবেলকে তুরাগ থানাধীন কামার পাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১ এর একটি দল। রুবেল স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তার জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
জোড়া খুনের ঘটনায় রুবেলকে আসামি করে ২৪ মার্চ বনানী থানায় মামলাটি করেন হত্যার শিকার রুবেলের স্ত্রী হাসি খাতুনের বাবা মো. হাতেম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সাত বছর আগে হাসির সঙ্গে রুবেলের বিয়ে হয়। পাঁচ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে নিরবকে তারা কড়াইল বস্তিতে থাকত। পাঁচ মাস আগে তারা ঢাকা ছেড়ে কুমিল্লার বাড়িতে চলে যান। সেখানে গিয়ে হাসি শ্বশুর বাড়ির লোকজন কতৃক নির্যাতনের শিকার হন এবং বাবার বাড়িতে ঢাকায় ফিরে আসেন।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ছেলে নিরবকে নিয়ে ১৯ মার্চ ঢাকায় চলে আসেন হাসি। ২২ মার্চ রুবেলও ঢাকায় আসেন স্ত্রী ও ছেলেকে ফিরিয়ে নিতে। এ কথা শুনে হাসি ছেলেকে নিয়ে বাসা থেকে চলে যান। হাসির মা ও ভাই-বোন তাকে বুঝিয়ে বাসায় নিয়ে আসেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২৩ মার্চ রাত ২টা পর্যন্ত হাসি ও রুবেলের মধ্যে সাংসারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া চলে। হাসির বোন বৈশাখীর সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল নিরব। ২৪ মার্চ ভোর ৪টার দিকে রুবেল বড় শ্যালিকা বৈশাখীকে ডেকে জানান, হাসি অন্য ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গেছেন। এরপর নিরবকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যায় রুবেল। রুবেল বৈশাখীকে জানায়, সে হাসিকে খুঁজতে যাচ্ছে।
আধা ঘণ্টা পর রুবেল বাসায় এসে বৈশাখীর কাছে ২০০ টাকা চায়। নিরবকে নিয়ে কুমিল্লায় চলে যাবে বলে জানায় রুবেল। নিরব কোথায়, বেশাখী তা জানতে চাইলে রুবেল বলে, ‘ওকে চায়ের দোকানে বসিয়ে রেখে এসেছি।’ বৈশাখীর কাছে টাকা না পেয়ে শ্যালক মেহেদীর কাছে ৫০০ টাকা নিয়ে চলে যায় রুবেল।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রুবেল তার শ্বশুর হাতেম এবং শ্যালিকা বৈশাখীকে ফোন দিয়ে জানতে চায়, হাসিকে খুঁজে পাওয়া গেছে কি না? হাসিকে পাওয়া যায়নি বলে জানান হাতেম।
পরে রুবেল তাদের বলে, ‘বাসার পেছনে বিলের মধ্যে খোঁজ করলে হাসির লাশ পেয়ে যাবেন।’ নিরব কোথায় জানতে চাইলে রুবেল বলে, ‘তাকেও মেরে ফেলেছি। মায়ের পাশে ওর লাশ পাবেন।’
রুবেলের কথা অনুযায়ী, হাসির পরিবারের লোকজন ঝিলে হাসি ও তার ছেলের লাশ দেখতে পান। পরে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে তাদের লাশ উদ্ধার করে।