দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা আসার পর বাস-ট্রেনের মতো উপচে পড়া ভিড় লেগেছে রাজধানীর সদরঘাটের লঞ্চ ঘাটেও। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে নজর নেই যাত্রী কর্তৃপক্ষ কারোর।
লকডাউন বিষয়ে রোববার বেলা পৌনে ১২টার দিকে প্রজ্ঞাপনটি জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত অবশ্যই পালনীয় ১১ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনের পরপরই রাজধানীতে আটকে পড়ার ভয়ে বাড়ি ফেরা মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায় সদরঘাটের লঞ্চ ঘাটে। দেখা যায়, বাড়ি ফেরার লঞ্চ ধরতে মুখিয়ে যাত্রীরা। অনেকের মুখে মাস্ক নেই। কেউ কেউ মাস্ক পরলেও সঠিকভাবে ব্যবহার নেই। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে উদাসীন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও যাত্রীরা৷ লঞ্চের মধ্যে বিভিন্ন দাগ দিয়ে স্বাভাবিক দূরত্বের জন্যে সীমারেখা বেঁধে দিলেও তা মানা হচ্ছে না।
এরপরও লকডাউনে লঞ্চ চলাচল নিয়ে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা বাস্তবায়নের কথা জানালেন বাংলাদেশ নৌপরিবহন অভ্যন্তরীণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পরিবহন বিভাগের উপপরিচালক এহতেশামুল পারভেজ।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য যাত্রীদের সব সময় নির্দেশ দিচ্ছি। প্রত্যেকটা লঞ্চে কড়াকড়ি নির্দেশ দেয়া আছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য। তবুও অভিযোগ আসছে যে যাত্রীরা পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি মানছে না।’
যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় সরকার নির্ধারিত ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে না বলে দাবি করলেন এহতেশামুল। বলেন, ‘যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া না নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।’
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা থেকে চাঁদপুরে ডেকের ভাড়া আগে ১২০ টাকা ছিল এখন ২০০ টাকার বেশি নেয়া হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে ৪০০ টাকাও নেয়া হচ্ছে। ঢাকা-বরিশাল (মূলাদী) ডেকের ভাড়া পূর্বে ছিল ২২০ টাকা, এখন ৪০০ টাকা। কেবিনের ভাড়া আগে ছিল ৭০০ টাকা, এখন নেয়া হচ্ছে ৭০০ টাকা। দ্বিগুণের মতো ভাড়া বেড়েছে প্রায় সব লঞ্চের।
লঞ্চের ডেকে গাদাগাদি করে বসে আছেন যাত্রীরা। ছবি: নিউজবাংলা
লঞ্চের ডেকে ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে, শুয়ে আছে যাত্রীরা। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধির মানার কথা মাইকিং করে বললেও কোনো ধরনের কঠোরতা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দেখা যায়নি। কর্তৃপক্ষ হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখলেও প্রয়োগ করতে দেখা গেছে কমেই।
রমিজ আলী নামে একযাত্রী বলেন, ‘সরকার লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। এবার শুনছি খুব কড়াকড়ি করবে লকডাউন হবে। ঢাকায় যাতে আটকে না পড়ি সেকারণে সময় থাকতে আজই বাড়ি চলে যাব।’
চাঁদপুরের যাত্রী বাশার বিশ্বাস বলেন, ‘সবাই একযোগে বাড়ি যাবার কারণে লঞ্চে কেবিন পাওয়া যাচ্ছে না, যার ফলে ডেকে ও সিটে গাদাগাদি করেই যেতে হচ্ছে। কারণ সবাই তো বাড়ি যাবে। সবাই সবকিছু জানলেও মানছে না কেউই।’
মতলবগামী সুন্দরবন ৭ এর যাত্রী কেরানী আবুল হোসেন বলেন, ‘যাত্রীরা কথা শুনছে না। যাত্রীদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্যে লাল দাগ দিয়ে সীমারেখা তৈরি করে দেয়া হলেও মানা হচ্ছে না।’
ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাটের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বে এমবি মানিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লঞ্চটির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আমরা চেষ্টা করছি। তবে যাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে উদাসীন। আমরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার রেখেছি যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্যে। একটা পরিবারের ২-৫ জন আসলে তারা দেখা যায় একসঙ্গে খোলামেলা কথা বলতেছে। স্বাস্থ্যবিধি তোয়াক্কা করছে না।’
বিআইডব্লিউটিএর বন্দর ও পরিবহন বিভাগের উপপরিচালক এহতেশামুল পারভেজ বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্যে আমরা টার্মিনালে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছি। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট গত ২ দিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে, সামনের দিনেও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারে। আমি নিজেও আনসার, নৌ পুলিশ নিয়ে সকালে পুরো ঘাট এলাকায় পরিদর্শন করেছি।’