স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দিন থেকে হেফাজতে ইসলামের সহিংস হয়ে উঠা পরিকল্পিত ও এর পেছনে উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
রোববার জাতীয় সংসদের ৩০০ বিধিতে দেয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘কেন তারা হাঠাৎ এমন তাণ্ডব শুরু করল। এটা রহস্যময় ঘটনা নয়, এটা পরিকল্পিত। এর পেছনে কারণ আছে। উদ্দেশ্য আছে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এক হয়ে এটা করছে। আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে গত ২৬ মার্চ থেকে হেফাজত কর্মীরা নানা নাশকতায় করে আসছেন।
সেদিন বায়লতুল মোকাররমে সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মসজিদ থেকে মিছিল নিয়ে গিয়ে সরকারি ডাকবাংলো, এসিল্যান্ড অফিস ও থানায় হামলা চালান হেফাজত কর্মীরা। এ সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন চার ব্যক্তি।
একই দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব ছিল আরও ব্যাপক। সেখানে রেলস্টেশন, আনসার ক্যাম্প, পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্ালয় ভাঙচুর করে পেট্রল ঢেলে দেয়া হয় আগুন। হামলা হয় পুলিশ সুপার কার্ালয়ে। সে সময় পুলিশ গুলি চালালে প্রাণ হারায় আরও একজন।
এর প্রতিবাদে ২৮ মার্চের হরতালে হেফাজত কর্মীদের হামলা ছিল আরও ব্যাপক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জ অংশে তিন কিলোমিটারে ৫০টিরও বেশি গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি বেশ কিছু গাড়িতে দেয়া হয় আগুন। গণমাধ্যমকর্মী দেখলেই তারা হামলে পড়েছেন।
একই দিন মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান ও হজিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে মসজিদে মাইকিং করে হামলা হয়েছে স্থানীয় থানায়। পিটিয়ে আহত করা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের।
কিশোরগঞ্জ শহরে জেলা আওয়ামী লীগের কার্ালয়ে হামলা করে তছনছ করা হয়েছে।
তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে হামলা হয়েছে, সেটি ছিল আরও ব্যাপক। সেখানে জেলা পরিষদ, পৌরসভা কার্ালয়, ভূমি অফিস, প্রেসক্লাব ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের যত স্মৃতিচিহ্ন আছে, সেগুলো ভাঙচুর করে আগুন দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের নামফলকও বাদ যায়নি।
এসব ঘটনায় বেশ কিছু মামলা হলেও তাতে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের নাম না থাকা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে।
তবে সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এসব ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আটকে অভিযান চালানো হচ্ছে।…সকল ভিডিও ফুটেজ ও ছবি সংগ্রহ করে সবাইকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২২ জনকে আটক করা হয়েছে।’
২৬ মার্চ শুরু হওয়া তাণ্ডবে মোট ১৭ জন নিহত হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, কয়েকটি অস্ত্র লুট হলেও পরে তা উদ্ধারে সক্ষম হয় পুলিশ।
হাটহাজারীতে ডাকবাংলোয় হেফাজতের হামলা নিয়ে কামাল বলেন, ‘একজন বিসিএস কর্মকর্তা নতুন চাকরিতে জয়েন করে ডাকবাংলোতে ছিলেন। তাকে বেদম পেটানো হয়। তিনি এখন সিএমএইচে চিকিৎসাধীন।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এমন কোনো সরকারি অফিস নেই, যেখানে আক্রমণ হয়নি। সবচেয়ে বেদনাদায়ক তারা জাতির জনকের প্রতিকৃতিতেও আক্রমণ চালিয়েছে। তারা দলীয় নেতাকর্মীদের বাসভবনেও আক্রমন চালিয়েছে, মন্দিরে হামলা চালিয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৬/৭শ মাদ্রাসা আছে। সেখান থেকে তারা হামলা চালায়।’
মন্ত্রী বলেন, ‘২৬ তারিখ ছিল আমাদের স্বাধীনতা দিবস। সে উপলক্ষে সেদিন মসজিদ, মন্দির ও অন্যান্য ধর্মালয়ে প্রার্থনার আয়োজন ছিল। আমাদের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারমে আমাদের দলীয় লোকেরা গিয়েছিল। হঠাৎ সেখানে দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়। এরপর আমাদের লোকদের ওপর ইটাবৃষ্টি শুরু হয়।
‘এরপর মুসল্লিদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়। সেই গুজব থেকেই হাটহাজারী, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদীসহ সারাদেশে তাণ্ডব চালানো হয়, যা ২৮ তারিখ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।’
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। তাদের ওপর হামলা হয়েছে, পুলিশ লাইন, থানা, ভূমি অফিস, রেল স্টেশন কিছুই বাদ যায়নি।'
এই নারীর সঙ্গে একটি রিসোর্টে গিয়ে অবরুদ্ধ হওয়ার পর মামুনুল হক দাবি করেছেন, তিনি তাকে বিয়ে করেছেন। ছবি: নিউজবাংলা
মামুনুল প্রসঙ্গে
শনিবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে একটি রিসোর্টে এক নারীসহ স্থানীয়দের হাতে অবরুদ্ধ হন মামুনুল। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল শনিবার (০৩ এপ্রিল) নারায়নগঞ্জের একটি রিসোর্টে মামুনুল হক একজন মহিলাকে নিয়ে সেখানে অবস্থান করছিলেন। টিভিতে সুন্দরভাবে ওই মহিলা সম্পর্কে তথ্য দেখানো হয়েছে। মামুনুল হক নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন ওই মহিলা তার স্ত্রী নন, যা হোক। সেগুলো তদন্ত করে আরও জেনে সবাইকে জানাব।’
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শনিবারের এই ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জের রিসোর্ট কার আহ্বানে, কেন রিসোর্টকে ভাঙচুর করল? সেটা আমাদের জানা নেই। সেখানে বিদেশি কয়েকজন ছিল। পুলিশ এবং বিজিবি যেয়ে সেই বিদেশিদের রক্ষা করেছে। এই ধরণের তাণ্ডব হঠাৎ করেই হয়নি। নিশ্চিয়ই এর কোনো উদ্দেশ্য আছে! এর তদন্ত করে দেখছি যারাই এই তাণ্ডব করে থাকেন তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছি।’
মন্ত্রী বলেন, এই ঘটনাগুলি ঘটছে সবগুলি আমাদের কাছে মনে হচ্ছে উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র একখানে হয়ে এই কাজটি করে যাচ্ছে। আমরা সেগুলো তদন্তের মাধ্যমে উদঘাটন করে জানাব এবং তার ব্যবস্থা নেব। অনেক কিছু আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশ করছি, সবগুলোই দেশবাসীকে জানিয়ে দেবো।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে কেন্দ্র করে হেফাজত বিভিন্ন জায়গায় তাণ্ডব করেছে। সেদিন একজন ঘোড়ায় চড়ে তলোয়ার নিয়ে হাঁটছেন তাকেও ধরা হয়েছে। একজনকে দেখেছি পিস্তল উঁচিয়ে ফায়ার করছে। সবগুলোকে শনাক্ত করেছি এবং করছি। আমরা কাউকে বাদ দেবো না। আইন অনুযায়ী সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।