করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে লকডাউন দিয়ে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। অবশ্য এ নির্দেশনার মধ্যেও খোলা থাকবে শিল্প-প্রতিষ্ঠান। সীমিত পরিসরে চলবে সরকারি, আধাসরকারি অফিসের দাপ্তরিক কাজ। একইভাবে চলবে কাঁচা বাজার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দোকান।
লকডাউন বিষয়ে রোববার ১১ দফার প্রজ্ঞাপনটি জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। দফাগুলো ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত অবশ্যই পালনীয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ১৮ দফা নির্দেশনার আলোকে দফাগুলো দেয়া হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস ও আদালত এবং বেসরকারি অফিস পরিচালনা বিষয়ে ৩ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, কেবল জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য সীমিত পরিসরে প্রয়োজনীয় জনবল প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় অফিসে আনা-নেয়া করতে পারবে।
শিল্প-কারখানা ও নির্মাণ কার্যাদি ব্যাপারে বলা হয়েছে, এসব চালু থাকবে। শিল্প কারখানার শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া করতে হবে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ কর্তৃক শিল্প-কারখানা এলাকায় নিকটবর্তী সুবিধাজনক স্থানে তাদের শ্রমিকদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
লকডাউনে শিল্প-কারখানা খোলা থাকবে বলে জানিয়েছে সরকার। ফাইল ছবি
খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁ নিয়ে ৫ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, কোনো অবস্থাতে হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ করা যাবে না। তবে খাদ্য বিক্রয় বা সরবরাহ (Takeway/Online) করা যাবে।
আর ৬ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে। তবে পাইকারি ও খুচরা পণ্য অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয় বিক্রয় করতে পারবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সব সময় কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং কোনো ক্রেতা সশরীরে যেতে পারবেনা।
কাঁচা বাজার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দোকান বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ৭ নম্বর দফায়। এতে বলা হয়েছে, সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় চলবে। বাজার কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
ব্যাংকিং কার্যক্রম নিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ৮ নম্বর দফায়। তাতে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সীমিত পরিসরে চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
লকডাউনে চলবে বইমেলা। ছবি: নিউজবাংলা
খোলা থাকবে বইমেলাও। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের লকডাউন নির্দেশনার প্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অমর একুশে বইমেলা কার্যক্রম চালু রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
দেশে লম্বা একটা সময় করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে থাকারে পর গরম শুরু হতেই আবার বাড়ছে সংক্রমণ। গত ছয়দিন টানা ৫ হাজারের বেশি শনাক্ত দেখেছে দেশ। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও।
ডব্লিউএইচওর আরেক নীতিমালা অনুযায়ী, যদি টানা দুই সপ্তাহ শনাক্তের হার বাড়তে থাকে তাহলে নতুন ঢেউ আসছে বলে ধরা হয়। শনাক্তের হার বাংলাদেশে বাড়ছে লাফিয়ে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে শনাক্তের হার ২০ শতাংশের নিচে নামছেই না।
দেশে করোনার সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলছে। ছবি: নিউজবাংলা
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ইউরোপ আমেরিকায় আরও বেশি বিধ্বংসী হয়েছে। প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউয়ে মানুষের মৃত্যু হয়েছে বেশি। এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগে আবারও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েও মত পাল্টেছে সরকার। মহামারি পরিস্থিতি পর্যালোচনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গত ২৯ মার্চ যে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে। এবার নেয়া হলো লকডাউনের সিদ্ধান্ত।
গত বছরের মার্চে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর এক পর্যায়ে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকলেও লডকাউনের পথে হাঁটেনি সরকার। দফায় দফায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়, শনিবার ২৪ ঘণ্টায় করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে আরও ৫ হাজার ৬৮৩ জনের শরীরে। আর আক্রান্তদের মৃত্যু হয়েছে ৫৮ জনের। দেশে এ পর্যন্ত করোনারোগী শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৩০ হাজার ২৭৭ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ২১৩ জনের।