বিকেলে নারায়ণগঞ্জে রিসোর্ট কেলেঙ্কারির পর রাত ১১টার দিকে হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক বললেন, রিসোর্টে যে নারী তার সঙ্গে ছিলেন, তিনি তারই এক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহকর্মীর সাবেক স্ত্রী। ওই নারীকে তিনি একান্ত পারিবারিকভাবে কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবের উপস্থিতিতে বিয়ে করেছেন।
নিজের আইডি থেকে রাতে ফেসবুক লাইভে এসে মামুনুল হক আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাখ্যা দেন।
তবে, ওই নারীকে নিজের স্ত্রী দাবি করলেও মামুনুল হক তার যে নাম ও ঠিকানা বলেছেন, তা নিয়ে বিভ্রান্তি দূর হয়নি। কেননা, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রয়্যাল রিসোর্টে স্থানীয়দের হাতে অবরুদ্ধ হওয়ার পর হেফাজতের এ যুগ্ম মহাসচিব বলেছিলেন, ওই নারীর নাম আমিনা তাইয়্যেবা, (মামুনুলের) শ্বশুরের নাম জাহিদুল ইসলাম, তার বাড়ি খুলনায়।
তবে ওই নারী পুলিশের কাছে প্রাথমিক জেরায় নিজের নাম বলেন জান্নাত আরা। বাবার নাম অলিয়র রহমান। বাড়ি কোথায় জানতে চাওয়া হলে ওই নারী প্রথমে বলেন ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানায়, পরে আবার বলেন, আলফাডাঙ্গা থানায়।
শনিবার রাতে ফেসবুক লাইভে মামুনুল হক বলেন, ‘এ মুর্হতে সারা দেশে একটা বিষয় নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে, অনেক উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনেক ভ্রান্তিও সৃষ্টি হয়েছে।
‘সেই বিভ্রান্তির অপনোদন এবং প্রকৃত ঘটনার বিবরণ তুলে ধরবার জন্য আমি এই ফেসবুক লাইভে এসেছি। আমরা এই মুহূর্তে পারিবারিকভাবে ফেসবুকে লাইভ করছি। আমাদের সঙ্গে উপস্থিত আছেন আমার বড় ভাই জনাব হাফেজ মাহমুদুল হক সাহেব, মেজো ভাই হাফেজ মাহবুবুল হক সাহেব, মাদারাসুল আরাবিয়া মহাসচিব জামেয়া রহমানিয়ার প্রিন্সিপাল হজরত মাওলানা মাহফুজুল হক সাহেব।’
মামুনুল হক বলেন, ‘আমরা পারিবারিকভাবে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য লাইভে এসেছি। আশা করছি, আমাদের এই বক্তব্যের পরে আর কোনো বিভ্রান্তি এবং ভিন্ন কোনো বক্তব্য আর কেউ দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।
‘আজকে যে ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে, সেটি হলো: আমি বেশ কয়েক দিন টানা রাতদিন পরিশ্রম ইত্যাদির কারণে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। একটু বিশ্রামের প্রয়োজন ছিল। বিশ্রামের জন্য আমি ঢাকার অদূরে সোনারগাঁও, একটি দর্শনীয় এলাকা সোনারগাঁও জাদুঘর, সেখানে গিয়েছিলাম। এবং সেখানে সঙ্গে আমার স্ত্রী ছিলেন। আমার স্ত্রীর পরিচয় নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা এবং বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আমার সাথে যিনি ছিলেন তিনি আমার বিবাহিতা দ্বিতীয় স্ত্রী। তার সাক্ষীসাবুদ নিয়ে বিভ্রান্তি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত পুলিশের কর্মকর্তা একজন, সম্ভবত সার্কেল এসপি মোশাররফ সাহেব, তিনি আমার কাছ থেকে যাবতীয় বিষয়ে বিবরণ শুনে তথ্যপ্রমাণ যাচাই করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন।
মামুনুল হক বলেন, ‘যিনি আমার সাথে ছিলেন, তিনি আমার একজন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সহকর্মী, তার সাবেক স্ত্রী ছিলেন। তার সঙ্গে কলহের জের ধরে আড়াই বছর ধরে… তার দুটি সন্তান রয়েছে।
‘সেই সূত্র থেকে আমি একান্ত পারিবারিকভাবে এবং ঘনিষ্ঠ কিছু বন্ধুবান্ধবের উপস্থিতিতে বিবাহবন্ধনের ব্যবস্থা করি। সেই বিবাহের মাধ্যমেই তিনি আমার বিবাহিতা শরিয়তসম্মত বিবি।
‘আমার এই বক্তব্যে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন তারা সন্তুষ্ট হয়েছেন। কিন্তু সেখানে স্থানীয় সেই সংবাদকর্মীদের সাথে উপস্থিত স্থানীয় কিছু যুবলীগ এবং সরকারদলীয় কয়েকজন দায়িত্বশীল আমার সঙ্গে অসদাচরণ করেছেন এবং লাইভ ভিডিও ধারণ করে সেখানে তারা সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা এবং আক্রমণ চালিয়েছেন।
‘এ বিষয়গুলো নিয়ে যখন তারা লাইভ ভিডিও করেছেন, দেশবাসী জেনেছেন এবং আমার সেখানকার বক্তব্য দেশের মানুষ শুনেছেন। আমার সেই বক্তব্য শুনে আমার পারিবারিক পরিচয় স্পষ্টভাষায় তুলে ধরার পর সেটা সারা দেশে ভাইরাল হয়ে গেছে। স্থানীয়ভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা এবং কর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে আমাকে উদ্ধার করার জন্য সেখানে তারা উপস্থিত হয়। তারা উত্তেজিত অবস্থায় ভাঙচুর করছিল। আমি তৎক্ষণাৎ উপস্থিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করি। শেষ পর্যন্ত জনতাকে নিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।
‘এ ঘটনা আমার পরিবার জানে। আমার পারিবারিক অভিভাবকেরাও জানেন। উপস্থিত পুলিশের স্থানীয় কর্মকর্তাও পরিবারের সাথে কথা বলেছেন এবং বিষয়টি নিশ্চিত হন।
‘কাজেই আমি আহ্বান করব, এ বিষয় নিয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তিমূলক কোনো কথা কেউ যাতে প্রচার না করে। আপনারা কোনো অবস্থাতেই উত্তেজিত আচরণ করবেন না। শান্তশিষ্ট থাকবেন। জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয় এই ধরনের কোনো আচরণ করবেন না। এটা আমার অফিশিয়াল বক্তব্য, আমার নিজস্ব আইডি থেকে উপস্থাপন করলাম। কোনো ধরনের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে সংঘাতমূলক আচরণে কেউ জড়িত হবেন না।’