পর্যটন শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে সুষ্ঠু ভ্রমণ কার্যক্রম পরিচালনায় দেশের ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইডদের কার্যক্রম নিয়ে আইন হচ্ছে। এ বিষয়ে বিল উত্থাপিত হয়েছে জাতীয় সংসদে।
শনিবার একাদশ সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন ‘বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড (নিবন্ধন ও পরিচালনা) আইন’ ২০২১ সংসদে উত্থাপন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।
এতে বলা হয়, বর্তমান বাংলাদেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ট্যুর অপারেটরা অন্তর্মুখী ও বিদেশগামী ট্যুর পরিচালনা করে থাকেন। দেশের পর্যটন শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে সুপরিকল্পিত ট্যুর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইডের কার্যক্রম আইনের আওতায় পরিচালনা এবং পর্যটকদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যই এই বিল।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বের অধিবেশনে এই বিলের বিরোধীতা করে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তিনি বলেন, ‘এতে টোয়াবের (ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ) কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।’
এই সংসদ সদস্যের বক্তব্য কণ্ঠভোটে দিলে তা নাকোচ হয়ে যায়। এরপর স্পিকারের অনুমতি নিয়ে বিলটি উত্থাপন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।
বিলটি অধিকতর যাচাই বাছাই করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করা হয়েছে। সংসদীয় কমিটিতে যাচাই বাছাই করে আগামী এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের জন্য সময় দেয়া হয়েছে।
‘বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড (নিবন্ধন ও পরিচালনা) বিল’-২০২১ এর নিবন্ধন সনদ ব্যতীত ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড পরিচালনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে।
এ সংক্রান্ত বিধিতে বলা হয়েছে, (১) ধারা ৭ এর বিধান অনুসারে নিবন্ধন সনদ ব্যতীত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পর্যটকদের জন্য ভ্রমণসেবা সংশ্লিষ্ট আবাসন, আহার বা আপ্যায়ন, পরিবহন, পর্যটন আকর্ষণ সংশ্লিষ্ট স্থান পরিদর্শন, পরিভ্রমণ ও অনূরূপ অন্যান্য পর্যটন সুবিধা অন্তর্ভূক্ত করে দলভিত্তিক বা একক ট্যুর আয়োজন ও পরিচালনা বা ট্যুর গাইড হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না।
ধারা ২ এ বলা হয়েছে, বিদেশি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইডের কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাইলে সরকারের পূর্বানুমতি লাগবে।
বর্তমানে যেসকল ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তাদের বিষয়ে বলা হয়েছে- বিদ্যমান অনিবন্ধিত ট্যুর অপারেটরগণকে এই আইন কার্যকরের তিন মাসের মধ্যে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করে নিবন্ধন সনদ নিতে হবে।
ধারা ৮ এর নিবন্ধন সনদের মেয়াদ ও নবায়ন সংক্রান্ত বিধিতে বলা হয়েছে, (১) নিবন্ধন সনদের মেয়াদ হবে প্রদানের তারিখ হতে ৩ বছর এবং এটা হবে নবায়নযোগ্য।
বিধি (২) এ বলা হয়েছে, নিবন্ধন সনদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কমপক্ষে ৩ মাস আগে নির্ধারিত পদ্ধতি ও ফি প্রদান করে নিবন্ধন নবায়নের আবেদন করতে হবে।
ধারা ১২ তে অপরাধ ও দণ্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি এই আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। আইন ভঙ্গকারীকে অনধিক ৬ মাস কারাদণ্ড এবং অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আইনটি অনুমোদিত হলে পর্যটকদের কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রাপ্তি সহজতর হবে। পর্যটকদের স্বার্থ সংরক্ষণসহ পর্যটন শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইডের কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে আইনের আওতায় পরিচালনা করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।’