ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হেফাজতে ইসলামর যেসব তাণ্ডব চালিয়েছে, প্রতিটি ঘটনায় হুকুমদাতার বিচার চেয়েছে ধর্মভিত্তিক সংগঠন ইসলামী ঐক্যজোট।
দলের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, মোদি উগ্রবাদী হতে পারেন। কিন্তু তার বিরোধিতায় গিয়ে কেউ উগ্রবাদী হতে পারে না।
হেফাজতের ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগে মোদির কী ক্ষতি হয়েছে এই প্রশ্ন রেখে, তিনি বলেছেন, ক্ষতি যা হওয়া হয়েছে বাংলাদেশের।
গত ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ, ঢাকা, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান, হবিগঞ্জের আমজিরীগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা তাণ্ডব চালায়।
এসব ঘটনায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় মামলা হলেও তাতে হেফাজতের কারও নাম নেই। এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ বলেছেন, মামলায় নাম না থাকলেও তদন্তে যাদের নাম আসবে, আসামি করা হবে তাদের সবাইকে।
মিছবাহুর বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে মানুষ হত্যার উসকানিসহ মধ্যযুগীয় তাণ্ডব সৃষ্টিকারীর হুকুমদাতাদের গ্রেপ্তার, প্রকৃত মাস্টারমাইন্ডদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তবে ‘গুটি কয়েক’ উগ্রবাদীর কারণে কওমি মাদ্রাসার নিরীহ ছাত্ররা যেন হয়রানির শিকার না হয় সেই দিকেও কঠোর নজর রাখার দাবি জানান তিনি।
মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, ‘হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে জামায়াত-শিবির ও কওমি অঙ্গণের কিছু উগ্রপন্থি তথাকথিত ওলামাদের নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন স্থানে নজিরবিহীন তাণ্ডব চালানো হয়েছে, যা কখনই ইসলাম সমর্থন করে না।’
১৯৯৯ সালে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলের জোট ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে যখন বিএনপি ও জামায়াত জোটবদ্ধ হয়, তখন মিছবাহুর রহমান চৌধুরীও এই জোটে ছিলেন।
তবে বিএনপি শাসনামলে ইসলামী ঐকজোট থেকে বের হয়ে একই নামে আলামা মোর্চা করেন মিছবাহুর। আর বিএনপি-জামায়াতের বলয় ছেড়ে ভিড়ে যান আওয়ামী লীগের বলয়ে।
মোদির কী ক্ষতি হয়েছে, প্রশ্ন
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উগ্রবাদী আখ্যা দিয়ে তার বিরোধিতায় হেফাজতের অবস্থান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইসলাম ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার ধর্ম। যদি উগ্রবাদী কেউ থাকে তবে উগ্রবাদের বিপরীতে ইসলাম বলেছে তোমাকে ধৈর্য ধরতে হবে।
‘মোদি যদি উগ্রবাদী হয়ে থাকে তবে তাকে অনুসরণ করে আমরাও উগ্রবাদী হয়ে তাণ্ডব চালাতে পারি না। আমরা যে তাণ্ডব চালালাম তাতে মোদির কি কোনো ক্ষতি হয়েছে? ক্ষতি আমাদের হয়েছে। আমরা নিজেদের সম্পদ নষ্ট করেছি। আমরা আমাদের রেল স্টেশন, আমাদের ভুমি অফিস, আমাদের পুলিশ স্টেশনে হামলা করে কি মোদির উগ্রবাদীর জবাব দিলাম?’
তিনি বলেন, ‘মোদি যদি আমাদের ক্ষতি করতে চান, তবে আমরা যা করেছি তা করেই আমরা নিজেদের ক্ষতি করেছি।’
মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘কোরআন কারও নিজের সম্পত্তি না। আমরা আজকাল ফেসবুকে দেখি অনেকেই কুরআন নিজেদের বলে দাবি করে বিভিন্ন ফতেয়া দেন। তারা বলেন, তারা নাকি জান্নাতে পাঠাবেন, দোজখে পাঠাবেন, জানাজায় অংশ নেবেন না। এটা কখনও ইসলাম বলে না।’
বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্য নিয়ে যারা কাজ করছে আগামী ৫ জুন সংবাদ সম্মেলনে তাদরে নাম প্রকাশ করবেন।
ওয়াজের আয় কত?
ওয়াজের নামে হেলিকপ্টার সওয়ারীদের আয় কত সেটি খুঁজে বের করতে একজন বিচারপতির নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করারও দাবি জানান মিছবাহুর।
তিনি বলেন, ‘তাদের বক্তব্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের অপতৎপরতার তদন্ত, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হাটহাজারী হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনাসহ সার্বিক ঘটনাবলী তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে দ্রুত জনসম্মুখে প্রকৃত কাহিনি প্রকাশ করতে হবে।’