বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভোল পাল্টালেন হেফাজত নেতা

  •    
  • ২ এপ্রিল, ২০২১ ২১:৩১

হরতাল তাণ্ডবের প্রতিবাদে হেফাজত থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েও সংগঠনে ফিরে আসা নায়েবে আমির আবদুল আউয়াল এখন বলছেন, নারায়ণগঞ্জে গাড়িতে আগুনের সঙ্গে তাদের সংগঠনের কেউ জড়িত ছিলেন না। তাদের কাউকে ফাঁসানোর চেষ্টা হলে কঠোর আন্দোলন হবে। যদিও সোমবার তিনি হরতালে সহিংসতার কারণে ক্ষোভ দেখিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

হরতালে তাণ্ডবের কারণে ক্ষোভের মুখে পদত্যাগের ঘোষণা দেয়া হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও নারায়ণগঞ্জ শাখার আমির আবদুল আউয়াল সংগঠনে ফিরে এসেই ভোল পাল্টালেন।

রোববার হরতালে তাদের ওপর আক্রমণের অভিযোগ এনে নারায়ণগঞ্জে করা বিক্ষোভে এই ধর্মীয় নেতা বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে গাড়ি পোড়ানোর জন্য ‘মনখুশি’ মতো কাউকে শাস্তি দিলে আন্দোলন হবে।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর নগরীর ডিআইট মসজিদের সামনে বিক্ষোভ করে হেফাজত। এতে প্রধান বক্তবা ছিলেন আবদুল আউয়াল যিনি রোববারের হরতালে তাণ্ডবের পর সংগঠন থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

এই ঘোষণা ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করলে বুধবার নারায়ণগঞ্জ সফরে গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। এক ঘণ্টার বৈঠকের পর মামুনুল বলেন, আবদুল আউয়াল আবার নারায়ণগঞ্জে হেফাজতকে নেতৃত্ব দেবেন।

রোববার হরতালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেপরোয়া গাড়ি ভাঙচুর ও আগুনের বিষয়ে আবদুল আউয়াল বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে কারা গাড়ি পুড়িয়েছে, কারা গাড়ি ভাঙছে, আমরা সব ভিডিও ফুটেজে দেখেছি। আপনারা মন খুশিমতো হেফাজতের কোনো কর্মীকে আইনের আওতায় এনে যদি শাস্তি দেন তাহলে কঠোর আন্দোলন হবে। আমি দাবি জানাচ্ছি, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

‘আপনারা বার বার করে তাদের দেখে নেন, কারা হরতালে উচ্ছৃঙ্খলতা করেছে। তাদের সঠিক ভাবে নির্ণয় করে বিচারের আওতায় আনেন।’

নারায়ণগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভে নেতা-কর্মীদের একাংশ

পদত্যাগ করেও হেফাজতে ফিরে আসা নেতা আরও বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে দাবি করছি মামলায় হেফাজতের নিরীহ কোনো কর্মীকে হয়রানি করবেন না। করলে আল্লাহ আপনাদের ছাড়বে না।’

আর এই বক্তব্য গত সোম ও মঙ্গলবারের বক্তব্যর পুরোপুরি বিপরীত।

রোববার হেফাজতের হরতালে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রামের পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালিয়েছে হেফাজতের কর্মীরা। সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, যানবাহনে নির্বিচারে ভাঙচুর, আগুনের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনাও হচ্ছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল পর্যন্ত অংশে ভাঙচুর চালানো হয়েছে ৫০টির বেশি গাড়িতে। আগুন দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকটিতে।

রোববারের হরতালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে ব্যাপক সহিংসতা করায় বিরক্ত হয়েই সংগঠন ছাড়ার ঘোষণা দেন মাওলানা আবদুল আউয়াল

ছাড় দেয়া হয়নি অ্যাম্বুলেন্স ও রোগীবাহী গাড়িও। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখলেই তেড়ে এসেছেন হরতাল সমর্থকরা। এমনকি এক গণমাধ্যমকর্মীর নাম সৌরভ শুনে তাকে কলেমা বলতে বাধ্য করা হয়েছে।

এই ঘটনায় সোমবার ফেসবুকে এসে হেফাজত থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান আবদুল আউয়াল। পরদিন নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ডিআইটি রেলওয়ে কলোনিতে মিছিলের সময় পুলিশের নির্দেশে কর্মসূচি স্থগিত করে সবাইকে চলে যেতে বলেছি। কিন্তু এরপরও একদল নেতা-কর্মী সহিংসতা করেছেন। মহাসড়কে গাড়িতে আগুন দিয়েছেন, জানমালের ক্ষতি করেছেন। এতে আমি ক্ষুব্ধ হয়েছি। কারণ আমরা সহিংসতা চাইনি। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ করতে চেয়েছি।’

সূচনা ‘হেলমেটবাহিনীর’

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকার প্রধান নরেন্দ্র মোদির সফরের দিন ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন হেফাজতের নায়েবে আমির।

ওই সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মিছিল নিয়ে স্থানীয় ডাকবাংলো, এসিল্যান্ড অফিস ও থানায় হামলা করে হেফাজত কর্মীরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলা চলে রেল স্টেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, আনসার ক্যাম্প ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে।

সেদিন প্রাণহানির প্রতিবাদে রোববার ডাকা হরতালে আরও বেশি সহিংস ছিল হেফাজত। নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের পাশাপাশি ব্যাপক আক্রমণ হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে। সেখানে সরকারি বেসরকারি নানা স্থাপনার পাশাপাশি জেলা শহরে মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতিচিহ্নে হামলা হয়।

রোববারের হরতালে হেফাজত কর্মীরা সবচেয়ে বেশি সহিংসতা চালিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়

হেফাজত নেতা আবদুল আউয়াল বলেন, ‘গত শুক্রবার (২৬ মার্চ) বায়তুল মোকাররমে আমাদের কিছু নেতকর্মীরা গিয়েছে। সেখানে তাদের উপর হেলমেট পরে আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহী সন্ত্রাসী বাহিনী আক্রমণ করেছে। এ কারণেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হাটহাজারীতে গোলযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

‘আমি মনে করি, বায়তুল মোকাররমে সন্ত্রাসী হামলাকারীরাসহ সারা দেশে অশান্তি সৃষ্টি করার মূল কারণ এবং এর সম্পূর্ণ দায়ভার তাদের।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে আবদুল আউয়াল বলেন, “পুলিশ প্রশাসনকে বলতে চাই, আমরা শান্তিপ্রিয়। কিন্তু যখন ‘সাপের লেজ দিয়ে কান চুলকাইতে যাবেন তখন সে আপনাকে অবশ্যই ছোবল দেবে’। আমরা কারো জানমালে ক্ষতি করতে চাই না। যারা করতে চায় তারা হেফাজতের কোনো কর্মী নয়।”

হেফাজতের নারায়ণগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক বশিরু উল্লাহ, মহানগর কমিটির সভাপতি ফেরদাউসুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, খেলাফত আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জের সভাপতি নান্নু মুন্সিও এ সময় বক্তব্য রাখেন।

এ বিভাগের আরো খবর