করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলার কারণে জনসমাগম কমাতে সরকারি নির্দেশনার পর বাস ও লঞ্চে দুই আসনে একজন যাত্রী বহন করা হলেও ট্রেনের চিত্র ভিন্ন।
আগাম টিকিট বিক্রির কারণে এখনও ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, আরও দুই দিন এভাবেই চলতে হবে।
গত সোমবার সরকার গণপরিবহণকে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলার নির্দেশ দেয়। বাসে এই নির্দেশ কার্যকর হয়েছে বুধবার, লঞ্চে বৃহস্পতিবার।
তবে শুক্রবারও ট্রেন চলেছে আগের নিয়মেই।
বাস ও লঞ্চের চেয়ে টেনে কেন উল্টোচিত্র?
রেল কর্মকর্তারা জানালেন, অনলাইনে এখন আগাম টিকিট বিক্রি করা হয় ৫ দিন আগের। এই নির্দেশনা আসার আগেই বিক্রি হয়ে গেছে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত টিকিট।
কমলাপুরে প্লাটফর্মে যাত্রীদের এই ভিড়ই বলে দেয় অর্ধের যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলা শুরু হয়নি এখনও
যে কোনো সময় রেল কর্তৃপক্ষ টাকা ফিরিয়ে দিয়ে টিকিট বাতিলের ক্ষমতা রাখে। তবে এতে যাত্রীদের ভ্রমণের ভোগান্তি বেড়ে যাবে বলে সে পথে হাঁটছে না তারা।
তবে করোনা নিয়ে সরকারের নির্দেশনার আসার পর ১ তারিখ থেকে আগাম টিকিট বিক্রি অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। ফলে ৫ এপ্রিল সোমবার থেকে ট্রেনগুলো ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলবে।
বাস ও লঞ্চে যাত্রী কমিয়ে ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হলেও ট্রেনে যাত্রী কমালেও ভাড়া বাড়ানো হয়নি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহাদাত আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সব ট্রেন প্রতি আসনে যাত্রী নিয়ে চলছে এমনও না। কিছু কিছু ট্রেনে ৬০ ভাগ টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’
‘তবে যেহেতু ৪ তারিখ পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট বিক্রি আছে, তার অর্থ ট্রেন ভ্রমণে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হলে ৫ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
টিকিট টাকার জন্য কাউন্টারের সামনের লাইনটি স্বাভাবিক সময়ের মতোই ভিড়ে ঠাসা দেখা গেছে
সামাজিক দূরত্ব উপেক্ষিত স্টেশনে
বাস বা অন্য গণ পরিবহনের মতো ট্রেনের ক্ষেত্রেও টিকিট কাটতে গিয়ে গাঁদাগাঁদি করে যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
প্রতিটি কাউন্টারের সামনেই দেখা গেছে এই ভিড়।
কারও মুখে মাস্ক আছে, কারও মুখে নেই। স্টেশনে প্রবেশমুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিতে দেখা যায়নি। কথা থাকলেও যাত্রীর গায়ে জ্বর আছে কি না, সেটি মাপার হ্যান্ড থার্মোমিটারের ব্যবহারও দেখা যায়নি। পাপোশ থাকলেও তাতে ব্যাকটেরিয়ারোধী ফ্লুইড নেই। বেসিন থাকলেও সাবান নেই, পানিও নেই।
প্লাটফর্মে ঢুকতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করার এই বোতলগুলো রাখা হয় বুধবার। কিন্তু শুক্রবার গিয়ে সেগুলো দেখা যায়নি
ট্রেনের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীরাও প্ল্যাটফরমে মাস্কহীনভাবে ঘুরছে। অথচ মাস্ক ছাড়া তাদের ট্রেনে উঠতে পারার কথা নয়।
যারা বিভিন্ন জেলায় থেকে ঢাকায় এসেছেন তাদের মধ্যেও সতর্কতা দেখা যায়নি।
প্ল্যাটফরমের মাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানা, সরকারের বার্তা ও রেলওয়ের ১৮ নির্দেশনা মানতে প্রচার চালানো হলেও তা আমলে নিচ্ছে যাত্রীদের একটি বড় অংশ।
স্টেশন ঘিরে থাকা দোকানগুলোয় জটলা বেঁধে আছেন লোকজন। সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে স্টেশন থেকে বের হয়ার পথে।
যাত্রা শুরুর আগে ট্রেন জীবাণুমুক্ত করার এই উদ্যোগ আন্তঃনগরের ক্ষেত্রে দেখা গেছে। লোকাল ট্রেনগুলো কেবল ঝাড়ু দিতে দেখা গেছে
আন্তঃনগর ট্রেনগুলো যাত্রা শুরুর আগে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হলেও উপেক্ষিত হচ্ছে লোকাল ট্রেন। যাত্রীরা নেমে যাওয়ার পর শুধুমাত্র ঝাড়ু দিতে দেখা গেছে। প্লাটফর্মগুলো অবশ্য ধুতে দেখা গেছে সাবান পানি দিয়ে।
তবে আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে জীবাণুনাশক ছিটাতে দেখা গেছে।
কমলাপুরের প্লাটফর্মগুলো ধুতে দেখা গেছে সাবান পানি দিয়ে
এসব নিয়ে কথা বলতে রেলওয়ে ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ারের কক্ষে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল দিলেও সাড়া মেলেনি।