করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশনা বাস্তবায়নের প্রথম দুই কার্যদিবস গণপরিবহন সংকটে পড়েছিল সাধারণ মানুষ। তবে ছুটির দিন শুক্রবার সকালে অনেকটাই স্বস্তি দেখা গেল যাত্রী চলাচলে।
রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়, সাধারণ মানুষ রাস্তায় কম বেরিয়েছে। সকাল থেকে কোনো পরিবহন সংকট দেখা যায়নি।
যাত্রীদের চাওয়া, সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত চালু রেখে গণপরিবহনে সিট অর্ধেক করার কারণে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা যেন শুক্রবার-শনিবারই সমাধান হয়। নয়তো আগামী রোববার থেকে দুর্ভোগ আরও বাড়বে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার আবার বাড়তে থাকায় গত সোমবার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে সরকার। যার একটি হলো গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। এই নির্দেশনার পর পরিবহন মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে গণপরিবহনে ভাড়া বেড়েছে ৬০ শতাংশ।
এই দুই নির্দেশনা গত বুধবার থেকে কার্যকর হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহন করছে গণপরিবহনগুলো। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে সকালে অফিসগামীরা সড়কে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও গণপরিবহনে উঠতে ব্যর্থ হচ্ছে। গণপরিবহনের এ সংকটের কারণে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে যাত্রীরা।
শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, জিগাতলা, সাইন্সলেব ও শাহবাগ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বাসে যাত্রীদের সংখ্যা কম। বাসের হেল্পাররা স্টপেজগুলোতে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে যাত্রীদের ডাকছে। যেখানে গত দুদিন সাধারণ যাত্রীরা জোর করেও কোনো কোনো পরিবহনের দরজা খুলতে পারেনি।
রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন স্টপেজে আনিসুর রহমান নামে একজন বলেন, ‘গত দুই দিন বাসে উঠে যাচ্ছিল না। আর আজকে যাত্রী না থাকায় হেল্পার কন্ডাক্টর ডেকে ডেকে যাত্রী উঠাচ্ছে।’
আনিসুর জানান, রামপুরা থেকে গুলশান গত দুই দিনের মধ্যে একদিন হেঁটে ও অপর দিন অতিরিক্ত ভাড়া গুণে সিএনজিতে করে অফিস পৌঁছেছেন তিনি।
‘আজকে শুক্রবার তাই হয়তো চাপ কম। কিন্তু রোববার থেকে আবার চাপ বাড়বে। সাধারণ যাত্রী হিসেবে আমরা চাই সরকার সমস্যার সমাধান করুক। সরকারি-বেসরকারি সব অফিস খোলা রেখে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা অযৌক্তিক।’
একই কথা মোহাম্মদপুর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষায় থাকা রেজাউল করিমেরও।
তিনি বলেন, ‘সরকার হুট করেই নির্দেশনা দিয়ে দিল, আর সেটার বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেল। আমরা সাধারণ মানুষদের সমস্যা কেউ দেখছে না। দ্রুত সমস্যার সমাধান হোক।’
গত দুই দিন যাত্রী চাপ সামলাতে হিমশিম খেলেও শুক্রবার সকালে দেখা গেল উল্টো চিত্র। ছবি: সাইফুল ইসলাম
শুক্রবার সকাল থেকে সড়কে যাত্রীর পরিমাণ কম থাকার বিষয়ে তরঙ্গ পরিবহনের চালক মোজাম্মেল বলেন, ‘প্রতি শুক্র ও শনিবার এই যাত্রী কম থাকে। আজকেও তাই। তবে আজকে অন্যান্য শুক্রবারের তুলনায় যাত্রীদের সংখ্যা একটু বেশি। শুনছি কিসের (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা) ভর্তি পরীক্ষা চলছে।’
রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় দায়িত্বে থাকা পুলিশের সার্জেন্ট হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘সকাল থেকে যানবাহনের চাপ কম। ভর্তি পরীক্ষা শেষ হলে কিছুটা বাড়তে পারে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে সকাল আটটার মধ্যে উপস্থিত হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। যে কারণে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভর্তি পরীক্ষার্থী ও তাদের স্বজনরা বিক্ষিপ্তভাবে কেন্দ্রগুলোতে এসেছেন। পরীক্ষা ১১ টায় শেষ হওয়ার পর সবাই একসঙ্গে যে যার গন্তব্যে ফিরতে চাইবেন। তখন কিছুটা চাপ বাড়তে পারে।’
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সারা দেশে একযোগে শুরু হবে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা। ঢাকা মহানগরের ১৫টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা হবে। পরীক্ষায় ৪৭ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নেবেন।