বিরূপ আর অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করছে প্রকৃতি। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বৃষ্টি যেন হারিয়ে গেছে। এর প্রভাব পড়ছে জনজীবনে। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে গেল দুই মাসে দেশজুড়ে বৃষ্টির দেখা মিলেছে কমই।
ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে স্বাভাবিকভাবে যে পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল, তার চেয়ে অনেক কম হয়েছে। এ অবস্থাকে অস্বাভাবিক দেখছেন খোদ আবহাওয়াবিদরা।
অন্য বছরের তুলনায় এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টি হয়েছে ৯৯ দশমিক ১ শতাংশ কম। একই ধারা বজায় ছিল মার্চেও। স্বাভাবিকের চেয়ে ৭৯.৬ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়, মার্চে সারা দেশে স্বাভাবিকভাবে গড়ে ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ছিল। সেখানে হয়েছে মাত্র দশমিক ২ মিলিমিটার।
বৃহস্পতিবার অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটির মাসিক নিয়মিত সভায় মার্চ মাসে বৃষ্টিপাত না হওয়ার বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা হয়। সেখানে বলা হয় মার্চে স্বাভাবিকভাবে দেশে গড়ে ৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১০ মিলিমিটার। এর তেমন কোনো কারণও পাচ্ছে না আবহাওয়া অধিদপ্তর।
অধিদপ্তর বলছে, এই প্রথম দেশে বৃষ্টির ক্ষেত্রে এমন অস্বাভাবিকতা দেখা দিয়েছে। এর আগে কখনও এত কম বৃষ্টি হয়নি। বৃষ্টি না হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, পশ্চিমা ও পূবালী লঘুচাপের প্রভাব না থাকা।
দিনের পর দিন বৃষ্টি না হওয়ায় গরম যেন মাত্রা ছাড়িয়েছে। অতিষ্ঠ প্রাণীকূল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কম বৃষ্টি হওয়ার কারণে গরমের আধিক্য বেশি। এটার এখনও কোনো ব্যাখ্যা আপাতত নেই। এর আগে এমন কখনও হয়নি দেশে।
অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে বৃষ্টি হয়েছে খুব কম। ছবি: সাইফুল ইসলাম
‘এটা একটা গবেষণার বিষয়। গত বছর কিন্তু এমন হয়নি। আবার এমন না যে গত কয়েক বছরে এমন হয়েছে। যদি এমন হতো তাহলে বোঝা যেত। এর আগে এত কম বৃষ্টি দেশে কখনও হয়নি।’
ফেব্রুয়ারি মাসে বৃষ্টি না হওয়া নিয়ে হাফিজুর বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসে হয়তো শীতের কারণে ওভাবে বোঝা যায় না বৃষ্টির বিষয়টি। তবে মার্চ যেহেতু গরমের মাস তাই এটি চোখে লাগছে বেশি। আর এই বৃষ্টি না হওয়্রর কারণে গরমটা বেশি। শীতের সময় বৃষ্টি হয় পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে। এবার পশ্চিমা লঘুচাপটা দুর্বল ছিল। পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে পূবালী লঘুচাপের সংযোগ হয়নি। এ কারণে বৃষ্টি হয়নি।’
আবহাওয়া অধিদপ্তেরর তথ্যানুযায়ী, মার্চে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ঢাকা বিভাগে ৫৫ মিলিমিটার হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে ৪.২ মিলিমিটার, ময়মনসিংহে ৪৭ এর স্থলে হয়েছে ৩৬.৫ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে ৬১-এর স্থলে ০.৩ মিলিমিটার, রাজশাহীতে ২৪-এর স্থলে ১.৪ মিলিমিটার, রংপুর বিভাগে ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে ১২.২ মিলিমিটার, খুলনাতে ৪১-এর স্থলে হয়েছে ২.২ মিলিমিটার, বরিশালে বৃষ্টিপাত নেই বললেই চলে।
শুধুমাত্র ব্যতিক্রম ছিল সিলেট বিভাগ। ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের স্থলে ১১৮.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টিপাতের গড় ছিল আরও কম। যেখানে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ঢাকা বিভাগে ৩১ মিলিমিটার, ময়মনসিংহে ২২, চট্টগ্রামে ২৪, সিলেটে ৩৪, রাজশাহীতে ১৮ এবং রংপুর বিভাগে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল। অথচ ছয় বিভাগেই ফেব্রুয়ারিতে বৃষ্টিপাত ছিল শূন্য।
আর খুলনা বিভাগে ৩৩ মিলিমিটার হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে ১ দশমিক ২ মিলিমিটার এবং বরিশাল বিভাগে ২৭ মিলিমিটার হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি।
তবে এপ্রিলে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।