রোববারের হতরতালে নারায়ণগঞ্জে হেফাজত কর্মীদের তাণ্ডবের প্রতিক্রিয়ায় সংগঠন ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দেয়া নায়েবে আমির ও জেলা আমির আবদুল আউয়াল এই বিষয়ে আর মুখ খুলতে চান না।
তার পদত্যাগের ঘোষণায় নড়েচড়ে বসা হেফাজত বুধবার বন্দরনগরীতে পাঠায় সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ও অন্য নেতাদের।
আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করে মামুনুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। তাদের নায়েবে আমির আবার আগের মতো সংগঠনকে নেতৃত্ব দেবেন।
সেদিন গণমাধ্যমের সামনে আসেননি এই হেফাজত নেতা। তবে বৃহস্পতিবার বিকালে অনেক চেষ্টায় তার দেখা মিলল। তবে মুখ খোলেননি তিনি।
- আরও পড়ুন: তাণ্ডব: হেফাজত থেকে পদত্যাগের ঘোষণা নায়েবে আমিরের
সংগঠনে ফেরার বিষয়ে মামুনুল যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেটি সঠিক বলে নিউজবাংলাকে বলেছেন আউয়াল। তবে আর কিছু বলতে চান না বলে জানালেন।
‘যা বলার বইলা ফেলছি। আমি আর কিছ্ইু বলব না। দলের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের কথাই আমার কথা’- হেফাজতের নায়েবে আমিরের ভাষ্য এখন।
বৃহস্পতিবার একটি পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে। যাতে লেখা রয়েছে, শুক্রবার হেফাজতে ইসলামের নারায়ণগঞ্জের বিক্ষোভ ও সমাবেশের নেতৃত্ব দেবেন আবদুল আউয়াল।
তাণ্ডবের কারণে পদত্যাগ করা হেফাজত নেতা আবদুল আউয়ালকে সংগঠনে ফেরাতে বুধবার নারায়ণগঞ্জ যান মামুনুল হক
রোববার হেফাজতের হরতালে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রামের পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালিয়েছে হেফাজতের কর্মীরা। সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, যানবাহনে নির্বিচারে ভাঙচুর, আগুনের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনাও হচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল পর্যন্ত অংশে ভাঙচুর চালানো হয়েছে ৫০টির বেশি গাড়িতে। আগুন দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকটিতে। ছাড় দেয়া হয়নি অ্যাম্বুলেন্স ও রোগীবাহী গাড়িও। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখলেই তেড়ে এসেছেন হরতাল সমর্থকরা। এমনকি এক গণমাধ্যমকর্মীর নাম সৌরভ শুনে তাকে কলেমা বলতে বাধ্য করা হয়েছে।
এই ঘটনায় সোমবার হেফাজত থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান আবদুল আউয়াল। নিউজবাংলাকে পরদিন তিনি বলেন, ‘ডিআইটি রেলওয়ে কলোনিতে মিছিলের সময় পুলিশের নির্দেশে কর্মসূচি স্থগিত করে সবাইকে চলে যেতে বলেছি। কিন্তু এরপরও একদল নেতা-কর্মী সহিংসতা করেছেন। মহাসড়কে গাড়িতে আগুন দিয়েছেন, জানমালের ক্ষতি করেছেন। এতে আমি ক্ষুব্ধ হয়েছি। কারণ আমরা সহিংসতা চাইনি। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ করতে চেয়েছি।’
রোববারের হরতালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে ব্যাপক গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দেয় হেফাজত কর্মীরা
তবে তার সঙ্গে বৈঠক শেষে মামুনুল হক বুধবার গণমাধ্যমের কাছে সহিংসতায় তাদের কর্মীদের সম্পৃক্ততার কথা বেমালুম অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম কোনো অরাজকতা বা সহিংসতার সাথে জড়িত নয়। হেফাজতের নেতাকর্মীরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছিল। তাদের অবস্থানে কোথাও কোন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি। যে সহিংসতা হয়েছে আমরা তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
তাণ্ডবের কথা অস্বীকার করে মামুনুল উল্টো তাদের ওপর আক্রমণের অভিযোগ আনেন।
- আরও পড়ুন: তাণ্ডবের কারণে পদত্যাগী নেতাকে ফেরাতে ব্যাকুল মামুনুল
- আরও পড়ুন: চলার পথের ভুল: সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ নিয়ে মামুনুল
আপনি বলেছেন, তাণ্ডবের কারণে দায়িত্ব ছেড়েছেন, আর মামুনুল বলছেন, তাণ্ডবে হেফাজতের সম্পৃক্ততা নেই। কে অসত্য বলছেন- এমন প্রশ্ন করে আউয়ালের মুখ থেকে জবাব বের করা যায়নি।
তিনি বলেন, ‘আর কোনো কথা বলব না। আমি কোন সাংবাদিকের সাথে আর কথা বলব না।’
যদি তাণ্ডবের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে হেফাজত থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে মামুনুলের কোন কথায় নিজের অবস্থান পাল্টালেন- এমন প্রশ্নের পর সেই একই বক্তব্য দিলেন হেফাজতের নায়েবে আমির।