ডাকাতির কোনো ছাপ বা প্রমাণ যাতে না থাকে সেজন্য তারা ভারতীয় সিরিয়াল ‘সিআইডি’ দেখে মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করত। পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ হতো অ্যাপে। এমন ‘স্মার্ট’ ডাকাত দলের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এরা হলেন রুবেল ফরাজী ওরফে রিফাত হাওলাদার, সোহাগ শেখ ওরফে রুবেল ও মো. সোহেল।
বুধবার রাতে রাজধানীর খিলগাঁও ও শাহজাহানপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহার করা হাফ প্যান্ট, গেঞ্জি, গ্রিল ভাঙার যন্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন।
তিনি জানান, ডাকাত চক্রটি দীর্ঘ সময় ধরে খুলনা ও রংপুর এলাকায় ডাকাতি করে। এক পর্যায়ে ওই সব অঞ্চলে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়ে গেলে তারা ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলোতে ডাকাতি করতে শুরু করে। গত কয়েক বছর ধরে তারা ঢাকার আশেপাশের কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহারে প্রবাসীদের বাসা-বাড়িতে অভিনব কৌশলে ডাকাতি করে আসছিল।
এই ডাকাত চক্রের সদস্যরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বরের পরিবর্তে বিভিন্ন আ্যপস ব্যবহার করত। এ ছাড়া তারা মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে বাসা-বাড়ির গ্রিল ও জানালা কেটে ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বর্ণালংকার ও টাকা লুট করত। ডাকাতির কোনো ছাপ যাতে না থাকে মূলত সে জন্যই তারা ভারতীয় সিরিয়াল সিআইডি দেখে মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করত।
ঢাকার দোহার, কেরানীগঞ্জ ও নবাবগঞ্জের অনেকেই প্রবাসে থাকে। মূলত প্রবাসীদের বাড়িতে টার্গেট করে ডাকাতি করত তারা। যাতে করে টাকা, স্বর্ণালংকার ও ডলার পাওয়া যায়।
ইমাম হোসেন বলেন, ‘গ্রেপ্তার রুবেল ফরাজী ওরফে রিফাত হাওলাদারের বিরুদ্ধে রংপুরের বিভিন্ন থানায় সাতটি মামলা রয়েছে। সোহাগ শেখ ওরফে রুবেল ঝালকাঠিতে অস্ত্র আইনে মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং সোহেলের বিরুদ্ধে খুলনা, যশোর ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
‘এই চক্রের একজন হোতা রয়েছে। সে অনেক চতুর। কবে, কোথায়, কোন বাসায় ডাকাতি করতে হবে তা সেই ঠিক করত। নেতৃত্বও দিত সে। তাকে এখনও আমরা গ্রেপ্তার করতে পারিনি। তবে তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’
ডাকাতদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর জানান, গত ৪ মার্চ রাত ৩টার দিকে সাত-আটজন ডাকাত কেরানীগঞ্জের রামেরকান্দা গ্রামে শাহবুদ্দিন ওরফে সাহার বাড়ির জানালার গ্রিল কেটে ভেতরে প্রবেশ করে।
তারা দেশীয় ধারালো চাপাতি ও দা-এর ভয় দেখিয়ে ১১ লাখ টাকা, ৩০০ ইউএস ডলার ও ৩৩ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা হয়। ওই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এই ডাকাত চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।এ চক্রের হোতাসহ বাকি সদস্যদেরকেও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।