বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সীতাংশু কুমার সুর (এস কে সুর) চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমের বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে ইমিগ্রেশন পুলিশকে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এরা ছাড়া আরও ছয়জনের দেশ ছাড়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়েছে দুদক।
এস কে সুর চৌধুরী ও শাহ আলমসহ আটজন দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন বলে বৃহস্পতিবার পাঠানো চিঠিতে শঙ্কা প্রকাশ করে দুদক।
দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের সই করা চিঠিতে বলা হয়, ‘সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। তারা দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।’
যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে তারা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম, তার দুই স্ত্রী শাহীন আক্তার শেলী ও নাসরিন বেগম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরী, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফসিএল) এভিপি আল মামুন, পিপলস লিজিংয়ের ম্যানেজার (ট্রেজারি) অভীক সিনহা ও ঢাকার শান্তিনগরের বাসিন্দা অতসী মৃধা। এর মধ্যে এস কে সুর চৌধুরীর বিরুদ্ধে আগেই হাইকোর্টের আদেশে দেশ ছাড়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে সহায়তাকারী হিসেবে এদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
এর আগে, এই ঘটনায় প্রথম দফায় ২৫ জনের বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা।
অন্যদিকে, ৪৩ জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশকে চিঠি দেয়ার বিষয়টি অনুমোদন করে কমিশন।
সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী তার সেগুনবাগিচার বাসায় অবস্থান করছেন। আদালত, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা এবং সমালোচনার মধ্যেও সুস্থ আছেন তিনি। আইনি পথে হাঁটছেন সাবেক এই কর্মকর্তা। তার বিদেশ যাবার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। রিট করে তিনি সেই আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ নিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, একসময় এস কে সুরের ব্যাপক দাপট ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যক্রমে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি যাওয়ার পর আলোচনায় আসেন এই কর্মকর্তা।
১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন শাহ আলম। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পান ২০১৩ সালের অক্টোবরে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে তিনি নির্বাহী পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপরও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বেই ছিলেন তিনি।
তার মেয়াদে দেশের কমপক্ষে ১০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের দুর্নীতি হয়। বেশির ভাগই এখন টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এ সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন এস কে সুর চৌধুরী ও এস এম মনিরুজ্জামান।