ফারমার্স ব্যাংক থেকে ৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক বেনজীর আহমেদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে এ মামলার রায় হতে পারে বলে আশা করছেন দুদকের আইনজীবী।
বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলমের আদালতে দ্বিতীয় দিনের মতো বেনজীর আহমেদ সাক্ষ্য দেন।
এরপর আদালত তাকে জেরা করার জন্য ২০ এপ্রিল পরবর্তী তারিখ দিয়েছে।
দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষীর মধ্য দিয়ে আলোচিত এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলো। মামলার ২১ সাক্ষীর মধ্যে ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘২০ এপ্রিল আইওকে জেরা করবেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এরপর ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় সাফাই সাক্ষীর জন্য থাকবে। তারপর মামলার যুক্তিতর্ক, তবে আশা করি, আগামী মাসের মধ্যে মামলাটির রায় করা সম্ভব হবে।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহীনুর ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, ‘আগামী ২০ এপ্রিল আমরা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদকে জেরা করা শুরু করব।’
গত বছরের ১৩ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ-৪-এ বদলির আদেশ দেন।
গত ১০ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের পরিচালক বেনজীর আহমেদ।
এর আগে ৪ ডিসেম্বর কমিশনের সভায় ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রের অনুমোদন দেয়া হয়।
মামলার আসামিদের মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী) কারাগারে, ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান ও একই এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা জামিনে আছেন।
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায় পলাতক রয়েছেন।
মৃত প্রমাণ মেলায় এ মামলায় অভিযোগপত্র থেকে এক আসামির নাম বাদ দেয়া হয়েছে।
আর নতুন করে একজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গত বছরের ১০ জুলাই দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকায় মামলাটি করা হয়। দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন এ মামলা করেন।
ফারমার্স ব্যাংকের দুটি হিসাব থেকে ৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে জালিয়াতির ‘প্রমাণ’ পাওয়ার তথ্য গত বছরের অক্টোবরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ।
অভিযোগে বলা হয়, ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ৪ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছিলেন কথিত ব্যবসায়ী শাহজাহান ও নিরঞ্জন।
সেই টাকা রণজিৎ চন্দ্র সাহার হাত ঘুরে বিচারপতি এস কে সিনহার বাড়ি বিক্রির টাকা হিসেবে দেখিয়ে তার ব্যাংক হিসাবে ঢুকেছে বলে প্রাথমিক প্রমাণসহ অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তে নামে দুদক।
দুদক জানায়, সিনহার বিরুদ্ধে গত বছরের জুলাই মাসে মামলা করে সংস্থাটি। মামলায় ফারমার্স ব্যাংক থেকে ভুয়া তথ্য দিয়ে অন্যের নামে ৪ কোটি টাকার ঋণ করে পরে তা এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করার অভিযোগ আনা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, সেই ব্যাংক হিসাব থেকে পরবর্তী সময়ে টাকা স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
দুদক বলছে, মামলার তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
তাই সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে বিদেশে অবস্থানরত এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
তদন্ত শেষে নতুন করে আসামি হয়েছেন ফারমার্স ব্যাংকের নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী)।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। পরে বিদেশ থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠান।