বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হেফাজত কী শিক্ষা দিতে চায়, প্রশ্ন আইজিপির

  •    
  • ১ এপ্রিল, ২০২১ ১৯:১০

‘যখনই কোনো ঘটনা ঘটে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে প্রত্যেকবারই হামলা করে। রেলস্টেশনে হামলা করার কারণটা কি সাধারণ মানুষ এটার সুবিধা ভোগ করে? তার মানে কি দাঁড়াল এটাই যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষকে কালেকটিভ পানিশমেন্ট দেয়া হচ্ছে?’

হেফাজতের কর্মীদের সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিদর্শন করে পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের মনে প্রশ্ন জেগেছে, কী উদ্দেশ্যে সরকারি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলো ঘুরে এসে সার্কিট হাউসে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন আইজিপি। হামলার চিত্র দেখে তার মনে যে প্রশ্ন জেগেছে, সেটি তুলে ধরে বলেন, ‘যে হামলাগুলো করা হয়েছে এতে বোঝা গেল যে তারা জনগণকে শিক্ষা দিতে চায়। সেই শিক্ষা দেয়ার কারণটা কী আমাদের অবশ্যই বের করতে হবে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কেন বারবার একই ধরনের হামলা হয়, সে প্রশ্ন তুলে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘কিছু হলেই রেলস্টেশন পুড়াচ্ছে, ভূমি অফিস পুড়াচ্ছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের বাড়ি পুড়াচ্ছে। এগুলো কোনোটাই শুভ লক্ষণ নয়। যেখানে আইনি শাসন রয়েছে, সেখানে এটি যায় না।’

গত শুক্রবার শহরের কান্দিপাড়া এলাকার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসা থেকে কয়েক হাজার ছাত্রের মিছিল বের হয়। তারা শহরের কেন্দ্রস্থল বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে গিয়ে হামলে পড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে। সেটি ভেঙে আগুন দেয়ার পাশাপাশি তারা আগুন দেয় শহরের রেলস্টেশন, আনসার ক্যাম্প, মৎস্য অধিদপ্তরে। হামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়েও। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে একজন নিহত হন।

পরদিন মহাসড়ক অবরোধ করে পুলিশের ওপর হামলে পড়ে মাদ্রাসাছাত্ররা। তখন পুলিশ গুলি চালালে প্রাণ হারায় পাঁচজন।

রোববারের হরতালে হেফাজত সমর্থকদের হামলা ছিল আরও ব্যাপক। সেদিন বঙ্গবন্ধুর দুটি ম্যুরাল ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সবগুলো স্থাপনায় ভাঙচুরের পাশাপাশি ধরিয়ে দেয়া হয় আগুন।

শহরের বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে জাতির পিতার ম্যুরালটিতে তিন দিনের মধ্যে দুইবার আগুন দিয়ে ভাঙচুর করা হয়

হামলা চলে পৌরসভা কার্যালয়, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়, শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষাচত্বর, গণগ্রন্থাগার, সংগীতজ্ঞ আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতিবিজড়িত ‘সুরসম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন’ ও মিলনায়তন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকারের অফিস, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি এবং সরাইলের খাটিহাতা হাইওয়ে থানায়।

আইজিপি বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক নৃশংসতা চালানো হয়েছে। রাষ্ট্রের স্থাপনাগুলো জনগণের সম্পদ। যেমন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে দেড় থেকে দুই শ বছরের রেকর্ড রয়েছে।’

ভূমি অফিসে হামলার প্রভাব কী হবে, তা তুলে ধরে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘তাতে যা হবে এই ভূমি অফিস আওতায় যে লোকগুলো বসবাস করছে আগামী ৫০ বছর তারা দুর্ভোগ পোহাবে।’

মৎস্য অধিদপ্তর কার্যালয়ে হেফাজতের দেয়া আগুনে পুড়েছে এসব মোটরসাইকেল

শহরের রেলস্টেশনে শুক্রবারের হামলায় জেলা শহরটি রেলে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সংকেত ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখন স্টেশনে কোনো ট্রেন থামছে না।

‘যখনই কোনো ঘটনা ঘটে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে প্রত্যেকবারই হামলা করে। রেলস্টেশনে হামলা করার কারণটা কি যেটা দিয়ে সর্বসাধারণ মানুষ এটার সুবিধা ভোগ করে? তার মানে কি দাঁড়াল এটাই যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষকে কালেকটিভ পানিশমেন্ট দেয়া হচ্ছে?’-নিজেই প্রশ্ন রাখেন বেজনীর।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫৭৪টি মাদ্রাসা রয়েছে জানিয়ে পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা এই মাদ্রাসায় কী শিক্ষা দেয়া হয় তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তিনি বলেন, ‘যারা পরকালের চিন্তা করে তারাই তো এই মাদ্রাসাগুলো নির্মাণ করেছে, দ্বীনের খেদমত করতে সাধারণ মানুষ তারা এই মাদ্রাসা নির্মাণ করেছে। কিন্তু তার উল্টোতে কী হচ্ছে? ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন জ্বালিয়ে দেয়া, ভূমি অফিস জ্বালিয়ে দেয়া, সিভিল সার্জন অফিস জ্বালিয়ে দেয়া? কারণ কি অসহায় মানুষ চিকিৎসা পাবে না?

‘মানে এক ধরনের প্রতিশোধের শিকার হচ্ছে। জেলা পরিষদের অফিস পুড়িয়ে দেওয়া যাতে উন্নয়ন ব্যাহত হওয়া।’

শুভ বুদ্ধির সঞ্চার হবে, আশা

মাদ্রাসার শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করে এই তাণ্ডব চালানো হয়েছে মন্তব্য করে আইজিপি বলেন, ‘অনেকে আবার দরিদ্র পরিবার থেকে আসে। অনেকে এতিম থাকে। তাদের ফুসলিয়ে এই ন্যক্কারজনক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অমানবিক।’

তিনি বলেন, ‘রাজনীতি করুন। কিন্তু দেশ ধ্বংস করে রাজনীতি করার কী দরকার? আমরা এই ক্ষেত্রে আশা করব প্রত্যেকের সুবুদ্ধির উদয় হবে।’

হেফাজতের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত সুর সম্রাট আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন ঘুরে দেখছেন আইজিপি

পুরো ঘটনায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল মন্তব্য করে আইজিপি বলেন, ‘আমরা আধ্যাত্মিক লোক দেখতে চাই, রুহানি আলেম দেখতে চাই যারা আমাদের বিশ্বাসের জায়গাটা পাকাপোক্ত করবে, পরকাল এবং ইহকাল সম্পর্কে আমাদের ধারণা দেবে। এগুলো না হয়ে দেখছি এখন তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের প্রচেষ্টায় লেগে আছে।’

‘আগে তো রিকশাতেও চড়তে পারতেন না’

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল ধর্মীয় গোষ্ঠীও পাচ্ছে উল্লেখ করে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘আগে হুজুরগণ রিকশায় যেতে পারতেন না। কিন্তু এখনকার হুজুরগণ গাড়ি, হেলিকপ্টার দিয়ে বিভিন্ন স্থানে আসা-যাওয়া করে। কেউ কেউ আবার হেলিকপ্টার হুজুর হিসেবেও পরিচিত।

‘যেহেতু দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তার সুবিধা আপনারাও ভোগ করছেন, সে জন্য সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করবেন না। ধ্বংসের একপর্যায়ে ১৮ কোটি মানুষ বিষযটি আর মেনে নিতে পারবে না।'

ভিডিও আছে, বিচার হবে সবার

এসব হামলায় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ আছে জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘আমাদের কাছে ছবি এবং ভিডিও সংগ্রহ রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা অপরাধীদের শনাক্ত করা চেষ্টা করছি।’

হেফাজতের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবকে আর্থিক অনুদান দেন আইজিপি

র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধান মনিরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমানও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবকে আর্থিক অনুদানও তুলে দেন আইজিপি।

এ বিভাগের আরো খবর