বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদকে মেধাবী আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আক্ষেপ করে বলেছেন, সেই মেধা তিনি দেশের কাজে লাগাননি।
বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের প্রথম দিন সংসদে নেয়া শোক প্রস্তাবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন সংসদ নেতা।
সংসদ অধিবেশনে বসলে আগের অধিবেশনের সমাপ্তির দিন থেকে প্রাণ হারানো বিশিষ্ট ব্যক্তি, সাবেক রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যের স্মরণে শোক প্রস্তাব গ্রহণের রীতি আছে।
এবারের শোক প্রস্তাবে যাদের নাম আছে তাদের মধ্যে অন্যতম মওদুদ আহমদ, যিনি শেষ জীবনে বিএনপি করলেও এর আগে জাতীয় পার্টির শাসনামলে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীও।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের আমলে পোস্টমাস্টার জেনারেল হিসেবে সরকারের সুবিধাভোগী ছিলেন এই রাজনীতিক। ১৯৭৫ সালের পর জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে বিএনপি গঠন করলে মওদুদ যোগ দেন সেই দলে।
পরে এরশাদ একই পথে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলে মওদুদ যোগ দেন জাতীয় পার্টিতে। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি আবার চলে আসেন বিএনপিতে।
গত ১৬ মার্চ মারা যান এই রাজনীতিক।
প্রধানমন্ত্রী মওদুদের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেন, ‘তিনি ট্যালেন্টেড ছিলেন। তা দেশের কাজে লাগাননি।… তিনি সব সময়ই সরকারঘেঁষা ছিলেন। যারা ক্ষমতায় থাকত তিনি সব সময় সেই দিকে থাকতেন।’
প্রয়াত বিএনপি নেতা কখনও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না আর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি বঙ্গবন্ধুর আইনজীবী ছিলেন না বলেও জানান জাতির পিতার কন্যা।
তিনি বলেন, ‘মওদুদ কখনও ছাত্রলীগ করেননি। কিন্তু তিনি মেধাবী ছিলেন। পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের মেয়ের জামাই হিসেবে তিনি সব সময় সহানুভূতি পেতেন।
‘তিনি (মওদুদ) তার জীবনীতে লিখেছেন, তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আইনজীবী ছিলেন। এ তথ্য সঠিক নয়। তবে যারা এই মামলার আইনজীবী ছিলেন ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম; তিনি তাদের সঙ্গে ঘুরতেন এবং সারাক্ষণই থাকতেন। তিনি নিয়োগপ্রাপ্ত কেউ ছিলেন না।’
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলাচালে আইনি লড়াইয়ের স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বাবা যখন সেনানিবাসে আটক তখন, ড. কামাল, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, মওদুদরা বাবাকে প্যারোলে মুক্তির চেষ্টা করছিলেন।
একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের প্রথম দিন গৃহীত শোক প্রস্তাবে মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য সংসদ সদস্যরা। ছবি: পিআইডি‘তখন আমার মা দৃঢ়চিত্তে এর বিরোধিতা করে আমার মাধ্যমে মেসেজ পাঠায়। আমি সেই মেসেজ নিয়ে সেনানিবাসে যাই। সেখানে তাজউদ্দীন আহমদসহ আমাদের আরও অনেক নেতা ছিলেন। আমি মায়ের মেসেজ পৌঁছে দিই।
‘এরপর আমি বাড়ি চলে আসি। আমি দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও ব্যারিস্টার মওদুদ আমার কাছে আসেন। আমীর-উল ইসলাম আমাকে বলেন, “তুমি কেমন মেয়ে যে বাবার মুক্তি চাও না। মওদুদ তখন সায় দিয়েছিলেন। তখন আমি তাদের বলেছিলাম, বাবা নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বের হয়ে আসবেন। আপনারা বিভ্রান্তি ছড়াবেন না।”
‘মওদুদ সব সময় এমনই ছিলেন’-বলেন শেখ হাসিনা।
কিছু একটা পাচারের অভিযোগে ১৯৭৩ সালে মওদুদ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তখন পল্লিকবি জসীমউদ্দীন আমাদের বাড়ি, আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে এসেছিলেন। পরে বাবা তাকে ছেড়ে দেন।’
মওমুদের স্ত্রী কবি জসীমউদ্দীনের মেয়ে হাসনা মওদুদের কথাও উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার (মওদুদ) মৃত্যুর পর আমি হাসনাকে কল করেছিলাম। কথা বলেছি। শোক জানিয়েছি।’