বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তাণ্ডবের কারণে পদত্যাগী নেতাকে ফেরাতে ব্যাকুল মামুনুল

  •    
  • ৩১ মার্চ, ২০২১ ২০:২৬

হরতালে সহিংসতার কারণে হেফাজতের নায়েবে আমিরের পদ থেকে আবদুল আউয়াল সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া নেতাকে সংগঠনে ফিরতে রাজি করতে কার সঙ্গে এক ঘণ্টা বৈঠক করেছেন মামুনুল হক। বৈঠক শেষে তিনি দাবি করেন, সেদিনের সহিংসতা হেফাজতের ছিল না। তাহলে আউয়াল কেন পদত্যাগ করলেন, এমন প্রশ্নে তিনি বললেন, এটা ভুল বোঝাবুঝি।

রোববারের হরতালে নারায়ণগঞ্জে নাশকতা মেনে নিতে না পেরে নায়েবে আমিরের পদ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেয়া হেফাজত নেতাকে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারে রাজি করার কথা জানিয়েছেন সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক।

মাওলানা আবদুল আউয়ালের হেফাজত থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে তোলপাড়ের মধ্যে বুধবার মামুনুল চট্টগ্রামে ছুটে যান তাকে সংগঠনে ফিরতে রাজি করাতে।

আবদুল আউয়াল তার পদত্যাগের কারণ হিসেবে হরতালে নাশকতার কথা উল্লেখ করলেও মামুনুল সহিংসতার কথা বেমালুম অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, কোনো ধরনের সন্ত্রাসের সঙ্গে তাদের নেতা-কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা নেই।

রোববার হেফাজতের হরতালে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রামের পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালিয়েছে হেফাজতের কর্মীরা। সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, যানবাহনে নির্বিচারে ভাঙচুর, আগুনের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনাও হচ্ছে।

এর মধ্যে মামুনুলের নেতৃত্বে হেফাজতের প্রতিনিধি দল বিকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি জামে মসজিদে বৈঠকে বসে মাওলানা আবদুল আউয়ালে সঙ্গে।

ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা শেষে মামুনুল হক বলেন, ‘আমাদের মধ্যে আলোচনা শেষে দলের নায়েবে আমির আবদুল আউয়াল পদত্যাগের ঘোষণা প্রত্যাহার করেছেন।…আগের মত হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর ও নারায়ণগঞ্জে সভাপতি দায়িত্ব পালন করবেন। একই সাথে মাঠে ময়দানে থেকে তিনি আগের মতো নেতৃত্ব দেবেন।’

তবে মাওলানা আবদুল আউয়াল সাংবাদিকদের সামনে আসেনি। ফলে এ বিষয়ে তার অবস্থান জানার সুযোগ ছিল না।

রোববার হরতালে তাণ্ডবের কারণে হেফাজতের নায়েবে আমির ও নারায়ণগঞ্জের আমিরের পদ ছাড়ার ত্যাগের ঘোষণা দেয়া মাওলানা আবদুল আউয়াল

গত রোববার হেফাজতের হরতালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল পর্যন্ত অংশে ভাঙচুর চালানো হয়েছে ৫০টির বেশি গাড়িতে। আগুন দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকটিতে। ছাড় দেয়া হয়নি অ্যাম্বুলেন্স ও রোগীবাহী গাড়িও। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখলেই তেড়ে এসেছেন হরতাল সমর্থকরা। এমনকি এক গণমাধ্যমকর্মীর নাম সৌরভ শুনে তাকে কলেমা বলতে বাধ্য করা হয়েছে।

এই ঘটনায় সোমবার হেফাজত থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান আবদুল আউয়াল। নিউজবাংলাকে পরদিন তিনি বলেন, ‘ডিআইটি রেলওয়ে কলোনিতে মিছিলের সময় পুলিশের নির্দেশে কর্মসূচি স্থগিত করে সবাইকে চলে যেতে বলেছি। কিন্তু এরপরও একদল নেতা-কর্মী সহিংসতা করেছেন। মহাসড়কে গাড়িতে আগুন দিয়েছেন, জানমালের ক্ষতি করেছেন। এতে আমি ক্ষুব্ধ হয়েছি। কারণ আমরা সহিংসতা চাইনি। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ করতে চেয়েছি।’

তবে মামুনুল এই বক্তব্যের বিপরীতে গিয়ে বলেন, ‘হুজুরের মাঝে কিছু মান অভিমানে ভূল বোঝাবুঝি হয়েছিল। তা আমাদের অনুরোধে এবং আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হয়ে গেছে।’

হরতালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে ব্যাপক গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছেন হেফাজত সমর্থকরা

সহিংসতার দায় না নিয়ে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম কোনো অরাজকতা বা সহিংসতার সাথে জড়িত নয়। হেফাজতের নেতাকর্মীরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছিল। তাদের অবস্থানে কোথাও কোন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি। যে সহিংসতা হয়েছে আমরা তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

তাণ্ডবের কথা অস্বীকার করে মামুনুল উল্টো তাদের ওপর আক্রমণের অভিযোগ আনেন।

তিনি বলেন, ‘মহাসড়কে হেফাজত শান্তিপূর্ণ অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গায়ের জোড়ে উচ্ছেদ করতে চেয়েছিল। আমরা তাদের আগেই বলেছি বন্দুকের নলের জোরের অবস্থান তারা যেন না দেখায়।

‘হেফাজতের কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের রাজপথের অবস্থান এবং তাদের উৎখাত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের নেতাকর্মীদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে এবং সেখান থেকে কোথাও কোথাও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তা কখনোই হেফাজতের পক্ষ থেকে হয়নি।’

হেফাজতের রোববারের হরতালে সবচেয়ে বেশি নাশকতা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সেখানে ২০টিরও বেশি স্থাপনায় ভাঙচুরের পাশাপাশি দেয়া হয়েছে আগুন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডবের বিষয়ে এক প্রশ্নে মামুনুল বলেন, ‘সেখানে যারা মারা গিয়েছে তাদের আত্মীয় স্বজনরা ও গ্রামবাসী সেন্টিমেন্টাল থাকতে পারে। এ থেকে তাদের সাথে সহিংসতা হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু এর জন্য হেফাজতে ইসলাম এর দায় কেন নেবে?’

সেদিন কেবল গাড়িতে হামলা নয়, হেফাজত কর্মীরা তেড়ে এসেছেন সাংবাদিকদের দিকেও। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের পক্ষে সংবাদ প্রচার হয় না অভিযোগ করে মারধর করা হয়েছে একাধিক সংবাদ কর্মীকে।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নে মামুনুল বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম গণমাধ্যম কর্মীদের সম্মান করে। তবে হেফাজতের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে অথবা চলাচলের পথে ভুল হতে পারে। কিন্তু হেফাজতের কোনো দায়িত্বশীল নেতা সাংবাদিকদের মারধর করেনি।’

রোববারের হরতালে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর যে আক্রমণ হয়েছে, তাকে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি বললেন মামুনুল হক

হেফাজতের ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি জুনায়েদ আল হাবীব, যুগ্ম মহাসচিব নাসির উদ্দিন মনির, সহকারী যুগ্ম মহাসচিব ফজলুল করীম, অর্থ সম্পাদক মনির হোসেন কাসেমী, নারায়ণগঞ্জ হেফাজতে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক মূফতি বশির উল্লাহও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের আরো খবর