বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাসে অর্ধেক যাত্রী, জনদুর্ভোগ চরম

  •    
  • ৩১ মার্চ, ২০২১ ১৮:২৩

বুধবার সকাল থেকে অফিসগামী সাধারণ মানুষ বাসের সংকটে ভুগেছেন। কোনো কোনো গণপরিবহনে ৬০ শতাংশেরও বেশি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। আবার কিছু কিছু পরিবহন কোনো নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে প্রতি আসনে যাত্রী বহনের পাশাপাশি দাঁড়িয়েও যাত্রী নিয়েছে। আদায় করছে অতিরিক্ত ভাড়া।  

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এ কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ যাত্রীদের।

সরকারি, বেসরকারি অফিস-আদালত সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মে চলায় বাসে নিয়মিত যাত্রীর সংখ্যা আগের মতোই রয়ে গেছে। কিন্তু সরকারি নির্দেশনায় বাসের অর্ধেক সিটে যাত্রী পরিবহনের কথা বলায় সংকট দেখা দিয়েছে।

বুধবার সকাল থেকে অফিসগামী সাধারণ মানুষ বাসের সংকটে ভুগেছেন। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও তারা বাসে উঠতে পারেননি। আবার যারা উঠতে পেরেছেন, তাদের সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দিতে হয়েছে ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া। কোনো কোনো গণপরিবহনে ৬০ শতাংশেরও বেশি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। ছবি: নিউজবাংলা

আবার কিছু কিছু পরিবহন কোনো নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে প্রতি আসনে যাত্রী বহনের পাশাপাশি দাঁড়িয়েও যাত্রী নিচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া তো আদায় করছেই।

সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার গত সোমবার জনসমাগমে বিধিনিষেধ দিয়ে ১৮টি নির্দেশনা জারি করে। সেই সঙ্গে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নেয়ার শর্তে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়। যা কার্যকর হয় বুধবার।

রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, ধানমন্ডি, জিগাতলা, সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, পল্টন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অফিসগামী সাধারণ যাত্রীরা বেশি ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। অন্যদিনের মতো তারা গণপরিবহনে সময়মতো উঠতে পারেননি। অধিকাংশ বাস অর্ধেক যাত্রী বহন করায় বহু যাত্রী বাসে উঠতেই পারেননি। যে কারণে দীর্ঘ সময় বিভিন্ন স্টপেজে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের।

উত্তরা থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত হাজারো যাত্রী বুধবার সকালে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন। সবকিছু খোলা রেখে বাসে অর্ধেক আসন নির্ধারণ করে দেয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে খিলক্ষেতে বিক্ষোভ করেছেন যাত্রীরা।

রামপুরা ব্রিজ থেকে মতিঝিল যাওয়ার জন্য প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো বাসে উঠতে না পেয়ে সিএনজিতে অফিস পৌঁছেছেন বেসরকারি একটি অফিসের কর্মচারী নাইম হাসান। তিনি বলেন, ‘সাধারণত রামপুরা ব্রিজ থেকে গাড়ি ফাঁকা পাই। আজকে কোনো গাড়িতে সিট খালি নেই। বাসগুলোতে অর্ধেক যাত্রী নেয়ায় কারণে সিট ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না।’

জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রেস ক্লাবে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারেননি বৃদ্ধ আনিস মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি বয়স্ক মানুষ। কোনো গাড়ি এলেই সবাই ধাক্কাধাক্কি করে উঠে যায়। আমি গেট পর্যন্তই পৌঁছাতে পারি না।’

ট্রেনেও অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নিয়ম মানা হয়নি। ছবি: নিউজবাংলা

অর্ধেক সিট ফাঁকা রাখার কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যাত্রীদের এ দুর্ভোগ দেখা গেছে। আবার কিছু পরিবহন স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন এবং একই সঙ্গে ৬০ শতাংশের বেশি ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন যাত্রীরা।

মিরপুর চিড়িয়াখানা সড়ক থেকে ফার্মগেট নিয়মিত যাতায়াত করেন জসিম উদ্দিন। বুধবার বাসে উঠতে তাকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। আবার বাসে উঠার পর তাকে গুনতে হয়েছে দ্বিগুণ ভাড়া। নিউ ভিশনের একটি গাড়িতে করে ফার্মগেট আসেন তিনি। জসিম বলেন, ‘আমার নিয়মিত ভাড়া ছিল ১৫ টাকা, আজকে রাখছে ৩০ টাকা। ওরা বলছে, যাত্রী অর্ধেক, তাই ভাড়া ডবল।’

যদিও পরিবহন মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হলেও তা আদায়ে সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তারা বলছেন, যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া দিতে চায় না। ঝগড়া করে।

সাভার ইপিজেড থেকে যাত্রাবাড়ী লিংকরোডগামী গাবতলী এক্সপ্রেসের একটি গাড়ির কন্ডাক্টর ইমরান। তিনি বলেন, ‘আমাদের গাড়িতে আজকে থেকে অর্ধেক যাত্রী নিচ্ছি। কিন্তু যাত্রীরা বাড়তি ভাড়া দিতে চাচ্ছে না। ২০ জন যাত্রী উঠলে ১৫ জনের সঙ্গেই তর্ক হচ্ছে।’

এক বাস চালিয়ে উসুল করা হচ্ছে দুই বাসের ভাড়া

করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী বহন এবং ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া নেয়ার কথা থাকলেও কিছু কিছু পরিবহনে কোনোটাই মানা হচ্ছে না। অতিরিক্ত যাত্রী উঠানো হচ্ছে। বাড়তি ভাড়াও নেয়া হচ্ছে।

দুই সিটে একজন যাত্রী উঠানোর নিয়ম করা হলেও তা মানা হচ্ছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সিটপ্রতি একজন করে বসানোর পরও দাঁড়িয়ে যাত্রী বহন করা হচ্ছে। খালি নেই ইঞ্জিনকাভারও। সে হিসেবে সুযোগ পেয়ে একটি বাস চালিয়ে দুটি বাসের ভাড়া আদায় করছেন কিছু পরিবহন শ্রমিক।

রাজধানীর মোহাম্মদ টু বনশ্রীর তরঙ্গ প্লাস বাসে যাত্রী পরিবহনে এমন চিত্রই দেখা গেল।

৪২ সিটের বাসটিতে ২১ জন যাত্রী নিয়ে ছাড়ার কথা থাকলেও শুরুতেই নিয়ম ভঙ্গ করে ৩২ জন যাত্রী ওঠান সুপারভাইজার ইকরাম আলী। এরপর শঙ্কর বাসস্ট্যান্ড থেকে উঠে পাঁচজন যাত্রী। বাসটি ধানমন্ডি ১৫ নম্বর এসে পৌঁছালে উঠানো হয় আরও চারজন যাত্রী।

এমন অবস্থার মধ্যে বেশির ভাগ সিটে দুজন করে বসলেও ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া দেয়ার কারণে আপত্তি করে বসেন কেউ কেউ। কিন্তু চালকের সহকারী নির্বিকার।

ধানমন্ডি-১৫ নম্বর থেকে ওঠা যাত্রী আরাফাত হোসেন অভিযোগ করেন, ‘আজব এক দেশে বাস করছি। করোনার জন্য সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়াল বুঝলাম, কিন্তু বেশি ভাড়া নেয়ার পরও আগের মতো সিটপ্রতি একজন করে বসছে। এ আবার কেমন কথা! তাহলে ভাড়া বাড়ানোর মানে কী? কিসের স্বাস্থ্যবিধি কিসের কী? উল্টো বাসওলারা ফায়দা নিচ্ছে।’

বনশ্রীগামী ফারজানা রহমান জানান, ‘সিটি কলেজ থেকে বনশ্রী পর্যন্ত যেতে দুদিন আগেও ভাড়া ছিল ৩৫ টাকা। কিন্তু সুপার ভাইজার আজ আমার কাছ থেকে ভাড়া নিল ৭০ টাকা। দ্বিগুণ ভাড়ায়। অথচ করোনার জন্য সরকার ৬০ ভাগ ভাড়া বাড়িয়েছে। সেই হিসেবে ভাড়া হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ৫৫ টাকা। আবার দুই সিটে একজন যাওয়ার নিময় কিন্তু প্রতি সিটে যাত্রী বসানো হয়েছে। তাহলে তো বলাই যায়, সুযোগ পেয়ে এক বাস চালিয়ে দুই বাসের ভাড়া উসুল করা হচ্ছে।’

এমন অভিযোগে সুপার ভাইজার একরাম আলী বলেন, ‘যাত্রী জোর করে উইঠা পড়ছে আমরা কি ধাক্কা দিয়া ফালাইয়া দিমু? আমরা তো বাসা থাইকা যাত্রী আনতাছি না। যাত্রীরা দেইখা হুইনাই উঠতাছে। আমাগো কি দোষ? যত জন যাত্রী উঠবো ততজন থেইকাই তো ভাড়া লমু, তাই না?’

নিয়মের বাইরে গিয়ে দ্বিগুণ ভাড়া নেয়ার ব্যাখা হিসেবে ইকরাম জানান, ‘এ রুটের যাত্রীদের বেশির ভাগই মেরুলবাড্ডা গিয়া নাইমা পড়ে। ধানমন্ডি থেকে মেরুলের ভাড়া ৫৫ ট্যাকা। এই করোনার সময় মেরুল থেকে বনশ্রী একজন যাইতে গেলে লাগব ১৫ টাকা। সে হিসেবে ৭০ ট্যাকা কইরা লইতাছি। যদিও জিনিসটা ঠিক হয় নাই। সরকারের নিয়ম মানা উচিত।’

সচিবালয়ের উপস্থিতির চিত্র

৫০ শতাংশ উপস্থিতি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন। নিজ নিজ মন্ত্রণালয় তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেভাবেই নির্দেশ দিয়েছে। এবং কারা সশরীরে অফিস করবেন, কারা বাসায় থেকে অফিস করবেন, তা নির্ধারণ চলছে। যেহেতু গত সোমবার বিকেলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার এবং মঙ্গলবার ছুটি ছিল, একাধিক মন্ত্রণালয়ে সরকারের নির্দেশনা কর্মীদের কাছে পৌঁছায়নি। যার ফলে অনেকেই বুধবার অফিসে চলে এসেছেন। পরবর্তী কার্যদিবস থেকে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হবে বলে সংশ্লিষ্টদের আশা।

অসুস্থ, বয়স্ক ও প্রসূতিদের বাসায় থেকে অফিস করার নির্দেশনা এমনিতেই রয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর