বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বী হত্যা মামলার সাফাই সাক্ষ্য পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী হয়নি। নতুন তারিখ রেখেছেন বিচারক।
ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে বুধবার সাফাই সাক্ষ্যের কথা ছিল। আসামি পক্ষের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু, রেজাউল করিম সরকার ও শহিদুল ইসলাম জানান, মামলার কাগজপত্র তারা হাতে পাননি। ফলে সাফাই সাক্ষ্য সম্ভব হচ্ছে না।
আদালতে মামলায় রাষ্ট্র পক্ষের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল ও আবু আব্দুল্লাহ ভুঞা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে সাফাইয়ের জন্য আগামী ১৮ এপ্রিল নতুন তারিখ দেন বিচারক।
আইনজীবী শহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদেরকে নকল সরবরাহ করা হচ্ছে না। তাই মামলার নকল এবং সময় না দিয়ে শুনানি করলে আসামিগণ ন্যায় থেকে বঞ্চিত হবেন।’
এদিন মামলার ২৫ আসামির মধ্যে কারাগারে থাকা ২২ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তাদেরকে স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল। উপস্থিত ছিলেন আসামিদের আত্মীয়-স্বজনও।
গত ১৪ মার্চ মামলার এজাহারের বক্তব্য, চার্জশিট ও সাক্ষীদের জবানবন্দি পড়ে শোনানোর পর আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চান।
আদালত আসামিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তারা সাফাই সাক্ষ্য দেবেন কি না? তখন আসামিদের মধ্যে মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না ও মেহেদী হাসান রাসেল নিজেরা নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেবেন বলে জানান। রাসেলের পক্ষে আরও পাঁচ জন সাফাই সাক্ষ্য দেবেন বলে জানানো হয়।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগ নেতার এক কক্ষে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয় ওই হলেরই আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে।
ছাত্রলীগের ওই ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। জড়িতদের শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠে দুর্বার আন্দোলন।
ঘটনার পরদিন নিহতের বাবা বরকতউল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। ১৩ নভেম্বর মামলার অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ জোনাল টিমের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান। আসামির তালিকায় এজাহারের বাইরে যোগ করা হয় আরও ছয়জনের নাম।
২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর চার্জশিটভুক্ত ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়। এরপর ৫ অক্টোবর আবরারের বাবা বরকতউল্লাহর জবানবন্দি গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই মামলার সাক্ষ্য শুরু হয়।
নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ছবি: সংগৃহীত
মামলার তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিওন, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা, শাখা ছাত্রলীগ সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাককারুল ইসলাম তানভির ও ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং এস এম মাহমুদ সেতু।
তাদের মধ্যে ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।
জিজ্ঞাসাবাদে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আট আসামি। তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।
মোর্শেদ অমত্য ইসলাম নামে পলাতক এক আসামি পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠায়।
২৫ আসামির মধ্যে এখন পলাতক রয়েছেন তিন আসামি। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এর মধ্যে মোস্তবা রাফিদের নাম এজাহারে ছিল না।
আবরার হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে পরে ছাত্রলীগ কর্মীদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।