হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তারের পরিবর্তে মিনু আক্তারের জেলখাটার ঘটনাটি উচ্চ আদালতের নজরে আনা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির বুধবার ঘটনাটি আদালতের নজরে আনেন। পরে বিষয়টি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলাটি বৃহস্পতিবার তালিকায় রাখা অর্থাৎ শুনানির কথা জানান।
আইনজীবী শিশির মনির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি নজরে এনে মেনশন স্লিপ দিয়েছি। আগামীকাল বিষয়টি শুনানির জন্য আসবে।’
২৪ মার্চ চট্টগ্রামে হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কুলসুমের পরিবর্তে মিনুর সাজা খাটার ঘটনায় মামলার নথি হাইকোর্টে আসে।
হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া আসামির বদলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ২ বছর ৯ মাস ধরে জেল খাটছেন মিনু। ঘটনাটি জানাজানি হলে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দেয় চট্টগ্রাম অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ।
কারা কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মিনুকে আদালতে হাজির করে নতুন জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। সেই সঙ্গে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দেয় বিচারক শরীফুল আলম ভূঁঞা। পরে নথি এক দিনের মধ্যেই হাইকোর্টে আসে।
কারাগারে বালামবই খুঁজতে গিয়ে বিষয়টি উঠে আসে। পরে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
গণমাধ্যমে এলে ঘটনাটি আদালতের নজরে আনেন চট্টগ্রামের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ।
নিউজবাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদালতে হাজির হয়ে তিন সন্তানের জননী মিনু জবানবন্দিতে জানান, সময়টি ছিল ২০১৮ সালের রমজান মাস। ইফতারি দেয়ার কথা বলে কুলসুম ও মর্জিনা নামের দুইজন মিনুকে আদালতে নিয়ে যান। তাকে বলা হয়েছিল ‘কুলসুম’ নাম ডাকা হলে তিনি (মিনু) যেন হাত তোলেন। সে অনুযায়ী হাত তোলার পর কর্তৃপক্ষ তাকে ‘কুলসুম’ হিসেবে চিহ্নিত করে কারাগারে পাঠায়।
মিনুকে এভাবে কৌশলে অপরাধী সাজানো কুলসুম একটি হত্যা মামলার আসামি। তার পুরো নাম কুলসুম আক্তার কুলসুমি।
২০০৬ সালের জুলাইয়ে নগরীর কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জ এলাকায় একটি আমগাছে ঝুলন্ত অবস্থায় পারভীন নামের এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তে বেরিয়ে আসে, পারভীনকে শ্বাসরোধে হত্যা করে আত্মহত্যা হিসেবে প্রচারের জন্য গাছে ঝুলিয়ে রাখেন কুলসুম।
২০০৭ সালের ২৬ অক্টোবর কুলসুমকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এক বছর তিন মাস পর তিনি জামিনে মুক্তি পান।
২০১৭ সালে মামলার রায় ঘোষণা করেন তখনকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক নুরুল ইসলাম। তাতে কুলসুমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। সে সময় কুলসুম পলাতক ছিলেন।
পরে আইনজীবী নাছির উদ্দীনের মাধ্যমে ২০১৮ সালের জুনে কুলসুম আত্মসমর্পণ করতে চান। আত্মসমর্পণের দিনই মিনুকে কুলসুম হিসেবে সাজিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। তখন থেকেই কারাগারে আছেন মিনু।