আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগের কেন্দ্র বা ‘রিজিওনাল কানেকটিভিটি হাব’ হবে বাংলাদেশ। ঢাকা সফরকালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ঢাকা সফরকালে নেপাল, ভুটানের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানেরা এ বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন। তারা ঢাকার সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের ওপর জোর দিয়েছেন। ঢাকা ছাড়াও সৈয়দপুর, চট্টগ্রাম, সিলেটের সঙ্গে সরাসরি বিমান চলাচলের ওপর জোর দেন তারা। পাশাপাশি, তারা ঢাকার সঙ্গে চালু থাকা ফ্লাইটের সংখ্যা আরও বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, স্থলবেষ্টিত দেশ দুটি বাংলাদেশের সঙ্গে নৌপথে যোগাযোগ সহজ ও সম্ভবপর করারও আহ্বান জানান বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এ ক্ষেত্রে ভারতকে রাজি করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়িত্ব দেন নেপাল-ভুটানের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান। কারণ তারা মনে করেন, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় দেশ ভারত না চাইলে এই অঞ্চলের সার্বিক যোগাযোগ ও উন্নয়ন সফল করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটানের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের পর বাংলাদেশ সফর করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সফরকালে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়গুলো অবহিত করেছেন। এ জন্য তিনি মোদির সহায়তা চান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী এতে সম্মত হয়েছেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সমতাভিত্তিক উন্নয়নে একমত হয়েছে ভারত ও বাংলাদেশ। এ জন্য তারা একসঙ্গে কাজ করবে এবং কাউকে বাদ রেখে এককভাবে উন্নতি করা যাবে না মর্মেও ঐকমত্য হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, “আমরা নেপাল ও ভুটানে সরাসরি রেল নিয়ে যেতে চাই। এটা কেবল মালবাহী রেলই নয়, যাত্রীবাহী রেলের বিষয়েও দেশ দুইটির সঙ্গে একমত হয়েছি। এখন আপনাদের ভূমি ও অবকাঠামো ব্যবহারের বিষয়ে কেবল দ্বিপাক্ষিক নয়, বহুপাক্ষিক চুক্তি করতে চাই। একই ধরনের চুক্তি করতে চাই বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও। নরেন্দ্র মোদি এতেও সম্মত হয়েছেন।
‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, আমরা রিজিওনাল কানেকটিভিটি হাব হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলছি। আমাদের মাতারবাড়ি, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের উন্নয়নের কাজ চলছে। আমরা ফরিদপুরে একটি আন্তর্জাতিক মানের এয়ার হাব তৈরি করব।’”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলে সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে রিজিওনাল এয়ারপোর্ট হিসেবে গড়ে তুলছি। যা ভারত, নেপাল, ভুটান ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ ও সহনীয় করতে পারে। ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো সহজেই সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারে। নেপাল ও ভুটান সৈয়দপুর বিমানবন্দর নিয়ে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছে।’
মোমেন বলেন, হাসিনা-মোদির ঢাকা বৈঠকে বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আঞ্চলিক কানেকটিভিটির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে সড়ক, রেল ও নৌপথে মাল্টিমোডাল কানেকটিভিটির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী উদ্যোগসমূহের প্রশংসা করেছেন মোদি।
ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় প্রকল্পে যুক্ত হতে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা ভারতকে জানানো হয়েছে। বিবিআইএন মোটর ভেহিকেল এগ্রিমেন্ট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে ‘ত্রিদেশীয় এনাব্লিং এমওইউ’ দ্রুত সইয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর দুই নেতা বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে আরও বৃহত্তর পরিসরে প্রবেশ্যতা চায় বাংলাদেশ। এ জন্য বাংলাদেশ নতুন কিছু রুট অনুমোদনের জন্য ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ থেকে নেপালে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে দূরত্ব, সময় ও ব্যয় অনেকাংশে কমে যাবে এবং বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা বেড়ে যাবে।
সম্প্রতি উদ্বোধন হয়েছে ‘চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেল রুট’। এটি ব্যবহার করে ভুটানের সঙ্গে রেল কানেকটিভিটি স্থাপন করতে চায় বাংলাদেশ। ফেনী নদীর ওপর সম্প্রতি উদ্বোধন হয়েছে মৈত্রী সেতু। এতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে পরিবহন সংযোগ স্থাপন হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দক্ষিণ এশিয়ায় কেবল ভারত, নেপাল ও ভুটানই নয়, বাংলাদেশের কানেকটিভিটি লিংকে যুক্ত হতে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছে দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা। দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশ দুটি চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের সঙ্গে কোস্টাল ও পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরুর আগ্রহের কথা জানিয়েছে।
এ ছাড়া, ঢাকার সঙ্গে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানো ও সহজ করার কথা বলেছে দেশ দুটি। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ বিমান ঢাকা-মালে ফ্লাইট শুরু করতে যাচ্ছে।