করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে জনসমাগম, মেলায় বিধিনিষেধসহ সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা দিলেও বইমেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমিকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তবে সরকারের নির্দেশনার পর প্রতিদিনকার মেলার সময় এক ঘণ্টা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বইমেলা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না জানতে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা পরে আপনাদের জানাব। জানানোর মতো কিছু হলে প্রেস রিলিজ দিয়ে জানিয়ে দেব।’
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বইমেলা উদযাপন কমিটির সদস্যসচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কাছে এখনও কোনো নির্দেশনা বা পরামর্শ আসেনি। সরকারের নির্দেশনা জারির পর গতকাল সন্ধ্যায় আমরা মেলা উদযাপন কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সময় এক ঘণ্টা কমিয়ে দিয়েছি। সরকার যেহেতু ১০টার মধ্যে সবাইকে বাসায় যেতে বলছে, তাই আজ থেকে আমরা ৯টার বদলে ৮টার মধ্যে মেলা শেষ করব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন যা অবস্থা বইমেলায় এমনিতেই লোকজন কম আসে। তবু্ও করোনা পরিস্থিতির ওপর সব নির্ভর করছে। পরিস্থিতির দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সরকারের কাছ থেকে যেভাবে সিদ্ধান্ত আসবে সেই অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নেব।’
এ বিষয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেন প্রকাশনা সংস্থা ‘অন্যপ্রকাশ’-এর প্রধান নির্বাহী ও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির রাজধানীর সভাপতি এবং বইমেলা উদযাপন কমিটির সদস্য মাজহারুল ইসলাম।
‘বইমেলা তো একটা বিশাল চত্বরজুড়ে উন্মুক্ত মাঠে হচ্ছে। যেখানে মোটামুটি সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলায় আসছেন। আমি মনে করি অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য যেমন শপিংমল, কমিউনিটি সেন্টার, সিনেমা হলসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে, তেমনি ততক্ষণ পর্যন্ত বইমেলাটাও খোলা রাখা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে বাংলা একাডেমি, মেলা পরিচালনা কর্তৃপক্ষ ও প্রকাশকদের দুই সমিতির পক্ষ থেকেই অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা এ কথা প্রকাশকদের বারবার জানাচ্ছি।’
এর আগে সোমবার বিকেলে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ নিউজবাংলাকে জানান, বৈঠক করে বইমেলা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।
কে এম খালিদ বলেন, ‘বিষয়টি (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেয়া প্রজ্ঞাপন) এখনও আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি। তবে আমি শুনেছি। এ রকম হলে, পরে মিটিং করে ডিসিশন নেব।’
বইমেলার একটি স্টলে পছন্দের বই খুঁজছেন দর্শনার্থীরা। ছবি: নিউজবাংলা
গত বছরের ডিসেম্বরের পর থেকে করোনা সংক্রমণ কমে আসতে থাকে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষে করোনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার তিন শতাংশের নিচে নেমে আসে। কমে আসতে থাকে মৃত্যুও।
কিন্তু মার্চের শুরুতে গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার বাড়তে থাকে সংক্রমণ, বাড়তে থাকে মৃত্যুও। পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার গত ২৪ ঘণ্টায় হয়েছে ১৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
মঙ্গলবার শবেবরাতের সরকারি ছুটির দিন। বিকেলে বইমেলা ঘুরে দেখা যায় আগের কয়েক দিনের তুলনায় লোকসমাগম কিছুটা বেশি। বইমেলার ঢোকার পর অনেকেই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি।
শোভা প্রকাশের বিক্রয়কর্মী শীলা আহমেদ বলেন, ‘মেলায় ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থী বেশি। তাদের বেশির ভাগই মেলায় ঢোকার পর মাস্ক খুলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’
ধানমন্ডির শংকর এলাকা থেকে বইমেলায় এসেছেন তারিন হক। বলেন, ‘করোনার প্রকোপ তো আবার বেড়ে গেল। কিন্তু সবকিছুই তো চলছে, আমরা চাই বইমেলাটাও চলুক। আমরা যদি সবাই স্বাস্থ্যবিধি ঠিকঠাক মানি তাহলে কিন্তু সম্ভব।’
করোনায় এবার দেড় মাসেরও বেশি পিছিয়ে মেলা শুরু হয় ১৮ মার্চ। মেলা শেষ হওয়ার কথা ১৪ এপ্রিল।
এখন থেকে রোববার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বইমেলা সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এ ছাড়া সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।