ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের হরতালে দেশের নানাপ্রান্তে সহিংসতার পর সংগঠনের আমির জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, তাদের কর্মসূচি ছিল শান্তিপূর্ণ।
সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি ও মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনায় ভাঙচুর, পেট্রল ঢেলে আগুন, মসজিদে মাইকিং করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা, ট্রেনে হামলা, রেল লাইনে স্লিপার উপড়ে ফেলার ঘটনা ঘটিয়েছে হেফাজত কর্মীরা।
টানা দ্বিতীয়দিনের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণহানিও হয়েছে। শনিবার পাঁচ জনের পর রোববারের হরতালে প্রাণ গেছে তিন জনের।
কর্মসূচির শেষ দিকে বিকালে সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা সংলগ্ন কাচারী সড়কে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বাবুনগরী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের হরতাল স্বতঃস্ফূর্ত ছিল, শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হয়েছে।…হরতালে পালনে সারাদেশের জনগণ ও আলেম ওলামারা সাড়া দিয়েছে। এ জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
‘এরকম ইসলামবিরোধী কাজ হলে আগামীতে আলেম ওলামা ও বাংলাদেশের জনগণ রাজপথে ঝাঁপিড়ে পড়ব।’
ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম সংগঠনের আমির জুনাইদ বাবুনগরী। ছবি: সংগৃহীত
গত শুক্রবার থেকেই হেফাজত কর্মীরা বিশেষ করে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক হাঙ্গামা করছে।
হরতালের দিনভর সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সেখানে বঙ্গবন্ধুর দুটি ম্যুরাল, শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার ব্যক্তিগত কার্যালয়, শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলক, ওস্তাদ আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, গণগ্রন্থাগার, পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়, পৌরসভাসহ বহু সরকারি বেসরকরি স্থাপনায় হামলা হয়েছে। ট্রেনে হামলার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটে বন্ধ হয়ে যায় রেল।
হাটহাজারীতেও সহিংসতায় জড়িয়েছে মাদ্রাসাছাত্ররা। সেখানে রেলে স্লিপার তুলে ফেলে তারা। দুই দিন ধরে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে ইটের দেয়াল তুলে অবরোধ করে বসে আছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে পেট্রল ঢেলে আগুন দেয়ার পর সেটি জ্বলতে থাকে
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে মসজিদে মাইকিং করে হামলা হয়েছে পুলিশের ওপর। পেটানো হয়েছে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেও পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা করে ভাঙচুর করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে একের পর এক গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। ছবি তুলতে গেলেই পেটানো হয়েছে সাংবাদিকদের। ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে মোবাইল ফোন।
এর আগে শুক্রবার হেফাজত কর্মীরা মিছিল নিয়ে গিয়ে হামলা করেছে হাটহাজারীর ডাকবাংলোয়, ভাঙচুর করা হয়েছে এসি ল্যান্ডের অফিসে, হামলা হয়েছে থানায়। সেদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে আগুনের পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ড, আনসার ক্যাম্পে আগুন দেয়া হয়েছে, হামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। এর পর গুলি চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ট্রেনে হামলার ঘটনায় হরতাল চলাচালে ঢাকা চট্টগ্রাম ও ঢাকা সিলেট রুটে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়
তবে বাবুনগরীর দাবি, তাদের কর্মীদের ওপর শুধু শুধু গুলি করেছে পুলিশ। তিনি বলেন, ‘গত শুক্রবার বিনা উসকানিতে পুলিশ মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছে। তাই এ ঘটনার দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসনকে নিতে হবে।
‘অবিলম্বে হাটহাজারী থানার ওসিকে প্রত্যাহার করতে হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন আহত নেতাকর্মীদের সুচিকিৎসার নিশ্চিয়তা ও ব্যবস্থা সরকারকেই নিতে হবে।’
হরকালকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে হেফাজত আমির বলেন, ‘প্রশাসনকে বলব, আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কেউ উসকানিমূলক কাজ করবেন না।’