কারও রাজনৈতিক অভিলাষের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না হয়ে তাদের বর্জন করতে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সচিবালয়ে রোববার দুপুরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ আহ্বান জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘যে সমস্ত রাজনৈতিক ব্যক্তি তাদের রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য আপনাদের (কওমি মাদ্রাসা-সংশ্লিষ্টদের) ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন, ব্যবহার করছেন, তাদের বর্জন করুন।’
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দেয়া ও ইসলাম রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘কারও রাজনৈতিক অভিলাষের হাতিয়ার হিসেবে দয়া করে আপনারা ব্যবহৃত হবেন না।’
হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির মাওলানা আহমদ শফীর মৃত্যুর জন্য বর্তমান নৈরাজ্যকারীদের দায়ী করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যারা নিজেদের আমিরকে হত্যা করার মতো অপকর্ম করে, তাদের হাতে ধর্ম, রাষ্ট্র কোনোটাই নিরাপদ নয়।’
হেফাজত নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার যেকোনো নৈরাজ্য দমন করার জন্য বদ্ধপরিকর। কারণ সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সরকারের দায়িত্ব সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করা, জনগণের সম্পত্তি রক্ষা।’
সরকার অবশ্যই এদের কঠোর হস্তে দমন করবে বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যেদিন ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। সেদিন তারা স্বাধীনতা দিবস পালন না করে বরং দেশের সম্পত্তির ওপর, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ওপর অর্থাৎ জনগণের সম্পত্তির ওপর আক্রমণ চালিয়েছে, আগুন দিয়েছে। দেশের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান গ্রহণ করেছে। অজুহাত, কেন নরেন্দ্র মোদি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছেন।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ভারতের অবদানের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (নরেন্দ্র মোদি) আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কোনো দলের নেতা হিসেবে নয়, তিনি বাংলাদেশে কোনো দলের নেতা হিসেবে আসেননি, আমন্ত্রণও জানানো হয়নি।
‘আমরা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি, যে ভারতবর্ষ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছে। সেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি এসেছেন, সেজন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের পরবর্তী প্রজন্মই দেশে নৈরাজ্য চালাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন হাছান মাহমুদ।
মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী যেদিন আমরা উদযাপন করছি, সেই দিন এভাবে বিভিন্ন জায়গায় হামলা, সেটি হচ্ছে যারা আসলে এ রাষ্ট্রটা চায় না। যারা রাষ্ট্রের শান্তি, স্থিতি চায় না, তারাই এ হামলা চালাতে পারে। অন্য কেউ করতে পারে না।’
হেফাজতের ডাকা হরতালে বিএনপি-জামায়াত জোটের ইন্ধন রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘তারা যে হরতাল দিয়েছে সেখানে পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। আর সরাসরি সমর্থন দিয়েছে জামায়াত-শিবির। এই নৈরাজ্যের পেছনে বিএনপি-জামায়াত যে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, মির্জা ফখরুল সাহেব গতকাল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে খোলাসা করে দিয়েছেন।’
২০১৩-১৪ সালে একই রকম নৈরাজ্য চালানো হয়েছিল স্মরণ করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আজ একই কায়দায় একই গোষ্ঠী আক্রমণ চালাচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য কিছু কোমলমতি শিশু-কিশোরকে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
ঘটনার নেপথ্যে যারা আছেন তাদের কড়া সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘যারা এই নৈরাজ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যারা সমর্থন দিচ্ছেন, তারা সবাই রাজনৈতিক ব্যক্তি। তাদের সবার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।’