বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষ এবং চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতকর্মীদের তাণ্ডবের পর পুলিশের গুলিতে পাঁচ জন নিহতের জেরে দুই দিনের বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বিএনপি।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘হেফাজতের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে পুলিশ গুলি চালিয়ে চট্টগ্রামে চারজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজনকে হত্যা করার প্রতিবাদে সোমবার ২৯ মার্চ ঢাকাসহ সব মহানগরে এবং মঙ্গলবার ৩০ মার্চ সারাদেশের জেলা শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করছি।’
গত শুক্রবার বায়তুল মোকাররমে সরকার সমর্থকদের সঙ্গে ধর্মভিত্তিক দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। ওই দিন হেফাজতের কর্মসূচি না থাকলেও চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক সহিংসতায় জড়ায় সংগঠনটির কর্মী-সমর্থকরা।
হাটহাজারীতে জুমার নামাজের পর মিছিল নিয়ে হেফাজতকর্মীরা যান ডাকবাংলো ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে। ডাকবাংলো থেকে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে টেনে এনে প্রকাশ্যে পেটানো হয়।
এরপর হামলা হয় হাটহাজারী থানায়। সেখানে এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ আটজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন চারজনকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলা ছিল আরও ব্যাপক। সেখানে মাদ্রাসা থেকে মিছিল নিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় শহরের রেল স্টেশন। মৎস্য অধিদপ্তরের কার্যালয় ও আনসার ক্যাম্পে আগুন দেয়া হয় পেট্রল ঢেলে। পরে হামলা হয় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে। তখন গুলি চালায় পুলিশ। আর এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান।
রাতেই হেফাজতের পক্ষ থেকে দুই দিনের কর্মসূচি দেয়া হয়। জানানো হয়, শনিবার বিক্ষোভের পর রোববার হরতাল করবে তারা।
তবে মির্জা ফখরুল জেনেছেন হেফাজতকর্মীরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার জুমার নামাজের পরে একটি সংগঠনের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিক্ষোভে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলায় দুই শতাধিক মানুষ আহত হন।
‘এর প্রতিবাদে যখন চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছিল, তখন পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হয়েছে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন নিহত ও অসংখ্য আহত হয়েছেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা জাতীয় জীবনে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।’
হেফাজতের হরতালে বিএনপির সমর্থন আছে কি না- জানতে চাইলে সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কর্মসূচি দিয়েছি।
‘আমরা প্রতিবাদ করছি স্বাধীনতা দিবসের দিনে মানুষকে হত্যা করার জন্য। প্রত্যেক সংগঠন ও নাগরিকের সভা-সমাবেশ করার, মত প্রকাশ করার অধিকার আছে। সেই মত প্রকাশের বিরুদ্ধে গুলি করা হয়েছে। আমরা সেটার প্রতিবাদ করছি।’
ফখরুল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে হত্যা, খুন, গুম ও নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধীদল ও ভিন্নমতকে দমন করার এই যে প্রচেষ্টা সবসময় তারা চালিয়ে আসছে শুক্রবারের ঘটনা তারই একটা চিত্র।’