বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবার সহিংসতা, গুলিতে নিহত ৫

  •    
  • ২৭ মার্চ, ২০২১ ২০:৩১

বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে জামিয়া ইউনিসিয়া মাদ্রাসার ছাত্ররা সংঘর্ষে জড়ায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। কিছুক্ষণ পর নন্দনপুর এলাকার কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা রাস্তা অবরোধ করেন। পুলিশ তাদের বাধা দিলে সংঘর্ষ বাঁধে। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালালে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে ছাত্রদের সড়ক অবরোধের পর সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহত হয়েছে।

নিহতরা হলেন সদর উপজেলার সুহিলপুরের জুর আলম, মজলিশপুরের সুজন মিয়া, বুধল গ্রামের বাসিন্দা কাওসার মিয়া ও মোহাম্মদ জুবায়ের এবং সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের বাদল মিয়া।

এদের মধ্যে সুজন মিয়া স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়েন।

বাকিদের মধ্যে জুর আলম ওয়ার্কশপের কর্মী আর কাউসার ও জোবায়ের শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।

শনিবার সন্ধ্যার দিকে শহরের সুহিলপুর ইউনিয়নের নন্দনপুর এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, গুলিবিদ্ধ তিনজনকে মৃত অবস্থায় তাদের কাছে আনা হয়। আর দু্ই জন মারা যান হাসপাতালে।

যেভাবে ঘটনার শুরু

আগের দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় হেফাজতের তাণ্ডবের প্রতিবাদে আসরের নামাজের পর মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা-কর্মীরা। তারা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনের সামনে সমাবেশ করেন।

বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে সমাবেশ শেষে মিছিলটি জামিয়া ইউনিসিয়া মাদ্রাসার সামনে গেলে ছাত্ররা বের হয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল ছোড়া হয়। এতে দুই পক্ষে আহত হন বেশ কয়েকজন।

একপর্যায়ে সরকারপন্থি দলের নেতা-কর্মীরা পিছু হটলে নগরীর টিএ রোডের মাদ্রাসাটি থেকে গুড়াপট্টি ব্রিজ পর্যন্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন।

অভিযোগ রয়েছে, সংঘর্ষের সময় নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় ছিল পুলিশ। থানার সামনে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা গেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে একজনের মরদেহ

পরে পুলিশ গুড়াপট্টি ব্রিজ এলাকায় গিয়ে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। সেখানে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর পুলিশ আবার থানায় অবস্থান নেয়।

আলাউদ্দিন খাঁ সড়কের ঘটনাপ্রবাহের কিছুক্ষণ পর নন্দনপুর এলাকার কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা রাস্তা অবরোধ করেন। পুলিশ তাদের বাধা দিলে সংঘর্ষ বাঁধে।

স্থানীয় লোকজন জানান, সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালালে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসকরা তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে মারা যান আরও দুইজন।

এ বিষয়ে কথা বলতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ওসি আব্দুর রহিমের ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি ধরেননি। ফোন ধরেননি সদর সার্কেলের এএসপি মোজাম্মেল হকও।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই ঘটনার পর জেলার সরাইল ও নাসিরনগরে রাস্তা অবরোধ করেছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা। সেখানেও নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ।

শুক্রবারও জেলা শহরে তাণ্ডব চলেছে মাদ্রাসাছাত্রদের

শুক্রবার ঢাকায় বায়তুল মোকাররমে সরকার সমর্থকদের সঙ্গে ধর্মভিত্তিক দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালায় হেফাজতের নেতা-কর্মীরা।

হাটহাজারীতে জুমার নামাজের পর মিছিল নিয়ে হেফাজত কর্মীরা ডাকবাংলোর ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে। ডাকবাংলো থেকে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে টেনে এনে প্রকাশ্যে পেটানো হয়।

এরপর হামলা হয় হাটহাজারী থানায়। সেখানে একপর্যায়ে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ আটজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন চারজনকে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলা ছিল আরও ব্যাপক। সেখানে মাদ্রাসা থেকে মিছিল নিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় শহরের রেলস্টেশন। মৎস্য অধিদপ্তরের কার্যালয় ও আনসার ক্যাম্পে আগুন দেয়া হয় পেট্রল ঢেলে। পরে হামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। তখন গুলি চালায় পুলিশ। আর এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায়।

স্টেশনে আগুনে সংকেত ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দুপুর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর রেলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটে কোনো ট্রেন আর এই স্টেশনে যাত্রাবিরতি করছে না। বন্ধ হয়ে গেছে ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটে চলা তিতাস কমিউটারও।

শুক্রবার রাত থেকেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ-র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। টহল শুরু করে আধাসামরিক বাহিনী বিজিবিও।

এদিন হেফাজতের বিক্ষোভের ডাক নিয়ে শহরে উদ্বেগ থাকলেও পুলিশের নিরাপত্তার আয়োজন দেখে বিকাল পর্যন্ত রাজপথে নামেনি মাদ্রাসা ছাত্ররা।

এর মধ্যে হেফাজতের কেন্দ্রের পক্ষ থেকে শুক্রবার প্রতিটি ফোঁটা রক্তের বদলা নেয়ার ঘোষণা আসে। আর রোববারের হরতাল সফল করার ডাকও জানানো হয়।

এ বিভাগের আরো খবর