চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় হামলায় নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে ‘বিক্ষুব্ধ জনতার কাজ’ বলে দাবি করেছে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। অবশ্য এই ঘটনায় প্রকাশিত ছবি ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরলে পরে তারা ‘অধিকতর তদন্তের’ কথা বলেছে।
শুক্রবার হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডবের পরদিন শনিবার রাজধানীর খিলগাঁও চৌরাস্তার মাখযানুল উলুম মাদ্রাসায় সংবাদ সম্মেলনে আসেন হেফাজতের নেতারা। এ সময় এসব কথা বলেন সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক।
ওই দুই এলাকায় প্রাণহানি হয় সরকারি স্থাপনায় হেফাজতের হামলার পর থেকে।
হাটহাজারীতে জুমার নামাজের পর মিছিল নিয়ে হেফাজত কর্মীরা ডাকবাংলোর ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে। ডাকবাংলো থেকে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে টেনে এনে প্রকাশ্যে পেটানো হয়।
এরপর হামলা হয় হাটহাজারী থানায়। সেখানে এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ আট জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন চার জনকে।
হাটহাজারীতে ডাকবাংলা, এসিল্যান্ড কার্যালয়ের পর থানায় হামলা করে হেফাজত কর্মীরা। এরপর গুলি করে পুলিশ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হামলা ছিল আরও ব্যাপক। সেখানে মাদ্রাসা থেকে মিছিল নিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় শহরের রেল স্টেশন। মৎস্য অধিদপ্তরের কার্যালয় ও আনসার ক্যাম্পে আগুন দেয়া হয় পেট্রল ঢেলে। পরে হামলা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। তখন গুলি চালায় পুলিশ। আর এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায়।
রাতেই হেফাজতের পক্ষ থেকে দুই দিনের কর্মসূচি দেয়া হয়। জানানো হয়, শনিবার বিক্ষোভের পর রোববার হবে হরতাল।
হাটহাজারী থানায় হামলার পর পুলিশের অ্যাকশনে যেতে বাধ্য হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে মামুনুল হক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা যে তথ্য পেয়েছি তাতে আমাদের কর্মীদের ওপর আগে হামলা হয়েছে। সেই হামলার প্রেক্ষিতে বিক্ষুদ্ধ জনতা ওখানে গিয়ে হামলা করেছে।
হাটহাজারীর চেয়ে বেপরোয়া ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হেফাজত কর্মীরা। রেল স্টেশনের পাশাপাশি হামলা হয় মৎস্য অধিদপ্তর, আনসার ক্যাম্প ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ে
‘আগে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশী অ্যাকশন হয়েছে। থানা থেকে অনেক দূরে মানুষের লাশ পাওয়া গিয়েছে। কাজেই আমাদের কাছে এই কথা গ্রহণযোগ্য নয়। এরপরও হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে আমরা অধিকতর তদন্ত করব।’
হরতালে বাধা এলে লাগাতার কর্মসূচি
রোববাররে হরতালে বাধা দেয়া হলে টানা কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।
মামুনুল হক বলেন, ‘আগামীকাল সরকারি দলের কোনো কর্মসূচি নেই। কাজেই আমাদের হরতালের দিন সরকারি দলের ছাত্র যুব সংগঠন ও হেলমেট বাহিনীকে রাজপথে দেখতে চাই না। সরকারি দল যাতে কোনোভাবেই আমাদের এই শান্তিপূর্ণ হরতাল কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার চেষ্টা না চালায়।
‘শুক্রবারের মতো আবার যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, কোনোও উত্তেজনা সৃষ্টি হয় তার দায়ভার সরকারকে নিতে হবে। এমন কোনও কিছু ঘটলে আগামীতে লাগাতার কঠোর কর্মসূচি দিবে হেফাজত।’
রোববারের হরতালে বাধা দিলে লাগাতার কর্মসূচির হুঁশিয়ারে এসেছে শনিবার হেফাজতের সংবাদ সম্মেলনে
এই জন্য সরকারকে অনুরোধ করবো এমন কোনও কিছু করবেন না যাতে ক্ষুব্ধ জনগণ আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়।
হেফাজত নেতা বলেন, ‘স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়। এই আন্দোলন নাস্তিক -মুরতাদের বিরুদ্ধে। অথচ সরকার এই আন্দোলনকে প্রভাবিত করে আমাদেরকে তাদের প্রতিপক্ষ বানিয়েছে। এর প্রতিবাদের ভাষা আমাদের জানা নেই।’
পুলিশের সহযোগিতা কামনা
শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করতে চান উল্লেখ করে পুলিশকে উদ্দেশ করে মামুনুল বলেন, ‘আমাদেরকে সহযোগিতা করুন। আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই, আপনারা আপনাদেরকে সহযোগিতা করব।
‘কোনো সন্ত্রাসী, হেলমেট বাহিনীকে প্রশ্রয় দেবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।’
হরতালের আওতামুক্ত
ওষুধের দোকান, ওষুধ জাতীয় পণ্য পরিবহনকারী যানবাহন, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, সাংবাদিক বহনকারী গাড়ি, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবারের দোকান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি হরতালের আওতায় থাকবে না বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
মামুনুল বলেন, ‘হেফাজতের নেতাকর্মীদের এসব চলাচল করতে কোন ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি না করতে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশ দেয়া হলো।’
পরিবহন মালিকদের যোগ দেয়ার আহ্বান
পরিবহন মালিকদেরকেও হরতালে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। যদিও এরই মধ্যে বাস মালিকরা জানিয়ে দিয়েছে, ঢাকা ও শহরতলীতে বাস চলবে। আর যাত্রী পেলে বাস চলবে আন্তঃজেলা রুটেও।
- আরও পড়ুন: হেফাজতের হরতালে চলবে বাস
মামুনুল বলেন, ‘পরিবহন মালিক এবং শ্রমিক সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি, ঈমান এবং ইসলামের গৌরব রক্ষা করার জন্য, তারা আগামীকালকের হরতালকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সফল করবেন।’
‘মোদির সফর ঠেকাতে পারতাম’
সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখন হেফাজতে ইসলামীর মহাসচিব নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সংঘাতমূলক কোনো কর্মসূচি আমাদের ছিল না। ইচ্ছা করলে আমার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির আগমনকে প্রতিহত করতে পারতাম। বিমানবন্দর ঘেরাও করতে পারতাম। কিন্তু সেটা করিনি। এরপরও আমাদের ওপর অনাকাঙ্ক্ষিত হামলা চালালো হয়েছে, যা দুঃখজনক।’